Risingbd:
2025-09-18@01:45:57 GMT

আশির দশকের বিনোদন

Published: 1st, June 2025 GMT

আশির দশকের বিনোদন

আশির দশকে বেশির ভাগ গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। ফলে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের মাধ্যমে যেসব বিনোদন পাওয়া যায় সেগুলোও গ্রামে ছিল না বললেই চলে। সে সময় বিনোদনের অনেক বড় মাধ্যম ছিল রেডিও। যাকে বলা যায় অভিজাত বিনোদন মাধ্যম। কারও বাড়িতে একটি রেডিও থাকা মানে, তখন অনেক বড় ব্যাপার। ফিলিসপ, মারফি, সিটিজেন এই ব্রান্ডগুলোর রেডিও তখন জনপ্রিয় ছিল। রেডিও সবার বাড়িতে থাকতো না। বিশেষ অবস্থাসম্পন্ন বাড়িতে রেডিও থাকতো। ওই বাড়ির আশপাশের সবাই একত্রিত হয়ে রেডিওর অনুষ্ঠান উপভোগ করতো। 

রেডিওতে নানারকম অনুষ্ঠান হতো। বিশেষ আকর্ষণ ছিল বিজ্ঞাপন তরঙ্গ বা বিভিন্ন স্পন্সড অনুষ্ঠান। সেগুলো ছায়াছবির তিনটি গান দিয়ে সাজানো হতো। যেমন হাঁস মার্কা নারিকেল তেল ‘গানের দোলা’।  সে সময় রেডিওতে ছায়ছবির ওপরে ট্রেইলারজাতীয়- দশ পনেরো মিনিটের একটি অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হতো। 
রেডিওর আরেকটি শ্রোতাপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল অনুরোধের আসর হতো ‘গানের ডালি’। ওই অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের পছন্দের গান শোনানো হতো। শ্রোতারা প্রিয় গান শুনতে চেয়ে চিঠি লিখতো গানের ডালিতে। 
এ ছাড়াও রেডিওতে প্রচারিত হতো ‘সৈনিকদের ভাইদের জন্য অনুষ্ঠান দুর্বার’ এটি উপস্থাপনা করতের হাবিবুর রহমান জালাল। এই অনুষ্ঠানটির জন্য সবাই অপেক্ষা করতো। 

রেডিওতে প্রচারিত হতো ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘উত্তরণ’। সে সময় বিপুল জনপ্রিয় ছিল এই অুনষ্ঠান। বিভিন্ন ধরণের সমসাময়িক বিষয় উত্তরণ অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা হতো। এটি জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ ছিলো উপস্থাপক সফি কামালের অসাধারণ উপস্থাপনা।

আরো পড়ুন:

মেজর সিনহা স্মরণে স্মৃতিফলক উন্মোচন

স্মৃতিসৌধে ‘নাগেশ্বর চাপা’ রোপণ করলেন ভুটানের রাজা

এ ছাড়া গ্রামে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে খেলাধুলা একটি বড় অংশ ছিল। তখন, হাডুডু, ফুটবল এবং ভলিবল -এই খেলাগুলো ছিল। প্রায় প্রতিটি গ্রামেই এই তিনটি খেলার একটি করে দল থাকতো।

তখনও গ্রাম পর্যায়ে ক্রিকেট খেলা সেভাবে পৌঁছায় নাই। ফুটবল, ভলিবল, ও হাডুডু ছিল গ্রাম পর্যায়ে সবচেয়ে বড় খেলা। অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরা ডাংগুলি, মারবেল, খাপ খেলা, সাত চারা খেলতো। মেয়েরা ছি বুড়ি, কিতকিত, দড়িয়াবান্ধা খেলতো। 

বর্ষা ঋতুতে সব বয়সের মানুষের কাছে উপভোগ্য ছিল নৌকা বাইচ। ছিপ নৌকা ব্যবহৃত হতো নৌকা বাইচের জন্য। হেমন্তে ফসল কাটার পরে ঘোড়দৌড় এবং গরুদৌড় অনুষ্ঠিত হতো। 

শীতকালে গ্রামের বিভিন্ন সংগঠন বা ক্লাবগুলোর আয়োজনে নাটকের আসর বসতো। এসব নাটক অনেক সময় স্থানীয় ছেলেরাই করতো। মঞ্চের পাশে বসে একজন প্রমটার স্ক্রিপ্ট পড়ত, শুনে শুনে অভিনেতারা মঞ্চে অভিনয় করত। তখনতো মেয়ে মানুষ অভিনয়ে তেমন পাওয়া যেত না, নাটকের প্রয়োজনে ছেলেরাই মেয়ে সাজতো।  কখনও কখনও এক রাত আবার কখনও কখনও এক থেকে তিন রাত পরযন্ত নাটক হতো। 

সে সময় শীতকালে পালাগানের আসর বসতো। স্থানীয় অনেকেই গাইতে পারতো। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গা থেকে শিল্পীদের ভাড়া করে আনা হতো। ময়মনসিংহ গীতিকা, মলুয়া এই রকম পালাগুলো পরিবেশিত হতো। এই আসর বসতো ক্লাবের উদ্যোগে। স্থানীয়দের অর্থায়নে এসব অনুষ্ঠান হতো। পালাগানের আসরে পালাকাররা একটু উঁচু জায়গায় বসে বা দাঁড়িয়ে পালা পরিবেশন করতো। মঞ্চের চারপাশে সামনে দর্শকরা নিজ দায়িত্বে বসার ব্যবস্থা করে নিত। কেউ খড় বিছিয়ে বা পাটি বিছিয়ে অথবা পিঁড়ি পেতে বসার ব্যবস্থা করতো। পালাগানের আসর বেশির ভাগ সময় এটা উন্মুক্ত জায়গায় হতো। তবে কখনও কখনও স্কুলঘরের ভেতরেও হতো।

কবিগান ছিলো বিনোদনের আরেকটা মাধ্যম। তাৎক্ষণিক স্বরচিত কবিতা বিতর্কের মতো পরিবেশন হতো। যেমন নারী-পুরুষ, লোহা-সোনা এগুলো কোনটা বেশি ভালো- এই নিয়ে চলতো কবিতায় কবিতায় লড়াই।
কোনো কোনো গ্রামে যাত্রা হতো। সম্পন্ন গৃহস্থ বা ক্লাব যাত্রাপালার আয়োজন করতো। কিন্তু যাত্রা দেখতে হতো দর্শনীর বিনিময়ে। চারপাশ টিন দিয়ে ঘিরে একটি মাত্র দরজা রাখা হতো দর্শকের ঢোকার জন্য। যাত্রাপালার মঞ্চের চারপাশে দর্শকরা খড় বিছিয়ে বসতো। 

গ্রামের বিয়েকে কেন্দ্র করে মানুষ আনন্দের উপলক্ষ খুঁজে পেত। বিশেষ করে মেয়ের বিয়েতে সবাই সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণ করতো। তারা স্বতঃস্ফুরতভাবে গেইট বানানো থেকে শুরু করে অতিথি বরণ, সমাদর এবং বিদায় দেওয়া-সবকিছুতেই গ্রামের মানুষ সাহায্য করতো।  

নারীরা বিয়ের গীত গাইতো। প্রায় সব গ্রামেই তখন ছিল, বিয়ে বাড়িতে গিয়ে পান খেতো এবং গীত গাইতো। আবার অনেক সময় বিয়ে বাড়িতে অনেক সং সেজে উপস্থিত হতো। বিভিন্ন ধরণের কর্মকাণ্ড করে মানুষকে আনন্দ দিত। 

আশির দশকের দিকে মানুষের সে কি অভাব। অর্থকষ্ট- প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করা মানুষগুলো যে বিনোদনের উপায় খুঁজে পেতো সেটাই বিষ্ময়কর। বলা যায় মানুষের বিনোদন ছিলো জীবনযাত্রা নির্বাহের সমান্তরালে।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এস এম জ হ দ হ স ন অন ষ ঠ ন র জন য উপস থ আসর ব র আসর

এছাড়াও পড়ুন:

‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ জিসানের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা ডুলিকান্দা গ্রামের ক্ষুদে ফুটবলার জিসানের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্থানীয়রা ফুটবলে জিসানের দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে ‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ বলে ডাকেন। 

তারেক রহমানের পক্ষে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জিসানের গ্রামের বাড়িতে যান বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। তিনি জিসানের বাবা ও এলাকাবাসীকে এ খবরটি জানিয়ে আসেন।

উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা ডুলিকান্দা গ্রামের অটোরিকশাচালক জজ মিয়ার ছেলে জিসান। মাত্র ১০ বছর বয়সী এই প্রতিভাবান ফুটবলারের অসাধারণ দক্ষতার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। স্থানীয় চর ঝাকালিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র সে। 

কখনও এক পায়ে, কখনও দু’পায়ে, কখনও পিঠে ফুটবল রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কসরত করে জিসান। দেখে মনে হবে, ফুটবল যেনো তার কথা শুনছে। এসব কসরতের ভিডিও নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।

অনলাইনে জিসানের ফুটবল নৈপুণ্য দেখে মুগ্ধ হন তারেক রহমান। তিনি জিসানের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার পক্ষে গতকাল সোমবার বিকেলে জিসানের বাড়িতে যান বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। 

জিসানকে উপহার হিসেবে বুট, জার্সি ও ফুটবলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তুলে দেন তিনি। এছাড়া জিসানের পরিবারকে আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়।

জিসানের ফুটবল খেলা নিজ চোখে দেখে মুগ্ধ আমিনুল হক বলেন, “জিসান ফুটবলে ন্যাচারাল ট্যালেন্ট। তারেক রহমান জিসানের প্রশিক্ষণ, লেখাপড়া ও ভবিষ্যতের সকল দায়িত্ব নিয়েছেন। তাছাড়া প্রতিমাসে জিসানের লেখাপড়া, ফুটবল প্রশিক্ষণ ও পরিবারের ব্যয়ভারের জন্য টাকা পাঠানো হবে।”

জিসান জানায়, মোবাইলে ম্যারাডোনা, মেসি ও রোনালদোর খেলা দেখে নিজেই ফুটবলের নানা কৌশল শিখেছে। নিজ চেষ্টায় সে এসব রপ্ত করেছে।

জিসানের বাবা জজ মিয়া বলেন, “আমি বিশ্বাস করতাম, একদিন না একদিন কেউ না কেউ আমার ছেলের পাশে দাঁড়াবে। আজ আমার সেই বিশ্বাস পূর্ণ হয়েছে।”

ঢাকা/রুমন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর  করতে ডায়েটে যে পরিবর্তন আনতে পারেন
  • অনুষ্ঠান করে স্ত্রীকে বিয়ে দিলেন স্বামী
  • ‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ জিসানের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান