Risingbd:
2025-11-03@19:17:52 GMT

আশির দশকের বিনোদন

Published: 1st, June 2025 GMT

আশির দশকের বিনোদন

আশির দশকে বেশির ভাগ গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। ফলে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের মাধ্যমে যেসব বিনোদন পাওয়া যায় সেগুলোও গ্রামে ছিল না বললেই চলে। সে সময় বিনোদনের অনেক বড় মাধ্যম ছিল রেডিও। যাকে বলা যায় অভিজাত বিনোদন মাধ্যম। কারও বাড়িতে একটি রেডিও থাকা মানে, তখন অনেক বড় ব্যাপার। ফিলিসপ, মারফি, সিটিজেন এই ব্রান্ডগুলোর রেডিও তখন জনপ্রিয় ছিল। রেডিও সবার বাড়িতে থাকতো না। বিশেষ অবস্থাসম্পন্ন বাড়িতে রেডিও থাকতো। ওই বাড়ির আশপাশের সবাই একত্রিত হয়ে রেডিওর অনুষ্ঠান উপভোগ করতো। 

রেডিওতে নানারকম অনুষ্ঠান হতো। বিশেষ আকর্ষণ ছিল বিজ্ঞাপন তরঙ্গ বা বিভিন্ন স্পন্সড অনুষ্ঠান। সেগুলো ছায়াছবির তিনটি গান দিয়ে সাজানো হতো। যেমন হাঁস মার্কা নারিকেল তেল ‘গানের দোলা’।  সে সময় রেডিওতে ছায়ছবির ওপরে ট্রেইলারজাতীয়- দশ পনেরো মিনিটের একটি অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হতো। 
রেডিওর আরেকটি শ্রোতাপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল অনুরোধের আসর হতো ‘গানের ডালি’। ওই অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের পছন্দের গান শোনানো হতো। শ্রোতারা প্রিয় গান শুনতে চেয়ে চিঠি লিখতো গানের ডালিতে। 
এ ছাড়াও রেডিওতে প্রচারিত হতো ‘সৈনিকদের ভাইদের জন্য অনুষ্ঠান দুর্বার’ এটি উপস্থাপনা করতের হাবিবুর রহমান জালাল। এই অনুষ্ঠানটির জন্য সবাই অপেক্ষা করতো। 

রেডিওতে প্রচারিত হতো ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘উত্তরণ’। সে সময় বিপুল জনপ্রিয় ছিল এই অুনষ্ঠান। বিভিন্ন ধরণের সমসাময়িক বিষয় উত্তরণ অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা হতো। এটি জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ ছিলো উপস্থাপক সফি কামালের অসাধারণ উপস্থাপনা।

আরো পড়ুন:

মেজর সিনহা স্মরণে স্মৃতিফলক উন্মোচন

স্মৃতিসৌধে ‘নাগেশ্বর চাপা’ রোপণ করলেন ভুটানের রাজা

এ ছাড়া গ্রামে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে খেলাধুলা একটি বড় অংশ ছিল। তখন, হাডুডু, ফুটবল এবং ভলিবল -এই খেলাগুলো ছিল। প্রায় প্রতিটি গ্রামেই এই তিনটি খেলার একটি করে দল থাকতো।

তখনও গ্রাম পর্যায়ে ক্রিকেট খেলা সেভাবে পৌঁছায় নাই। ফুটবল, ভলিবল, ও হাডুডু ছিল গ্রাম পর্যায়ে সবচেয়ে বড় খেলা। অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরা ডাংগুলি, মারবেল, খাপ খেলা, সাত চারা খেলতো। মেয়েরা ছি বুড়ি, কিতকিত, দড়িয়াবান্ধা খেলতো। 

বর্ষা ঋতুতে সব বয়সের মানুষের কাছে উপভোগ্য ছিল নৌকা বাইচ। ছিপ নৌকা ব্যবহৃত হতো নৌকা বাইচের জন্য। হেমন্তে ফসল কাটার পরে ঘোড়দৌড় এবং গরুদৌড় অনুষ্ঠিত হতো। 

শীতকালে গ্রামের বিভিন্ন সংগঠন বা ক্লাবগুলোর আয়োজনে নাটকের আসর বসতো। এসব নাটক অনেক সময় স্থানীয় ছেলেরাই করতো। মঞ্চের পাশে বসে একজন প্রমটার স্ক্রিপ্ট পড়ত, শুনে শুনে অভিনেতারা মঞ্চে অভিনয় করত। তখনতো মেয়ে মানুষ অভিনয়ে তেমন পাওয়া যেত না, নাটকের প্রয়োজনে ছেলেরাই মেয়ে সাজতো।  কখনও কখনও এক রাত আবার কখনও কখনও এক থেকে তিন রাত পরযন্ত নাটক হতো। 

সে সময় শীতকালে পালাগানের আসর বসতো। স্থানীয় অনেকেই গাইতে পারতো। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গা থেকে শিল্পীদের ভাড়া করে আনা হতো। ময়মনসিংহ গীতিকা, মলুয়া এই রকম পালাগুলো পরিবেশিত হতো। এই আসর বসতো ক্লাবের উদ্যোগে। স্থানীয়দের অর্থায়নে এসব অনুষ্ঠান হতো। পালাগানের আসরে পালাকাররা একটু উঁচু জায়গায় বসে বা দাঁড়িয়ে পালা পরিবেশন করতো। মঞ্চের চারপাশে সামনে দর্শকরা নিজ দায়িত্বে বসার ব্যবস্থা করে নিত। কেউ খড় বিছিয়ে বা পাটি বিছিয়ে অথবা পিঁড়ি পেতে বসার ব্যবস্থা করতো। পালাগানের আসর বেশির ভাগ সময় এটা উন্মুক্ত জায়গায় হতো। তবে কখনও কখনও স্কুলঘরের ভেতরেও হতো।

কবিগান ছিলো বিনোদনের আরেকটা মাধ্যম। তাৎক্ষণিক স্বরচিত কবিতা বিতর্কের মতো পরিবেশন হতো। যেমন নারী-পুরুষ, লোহা-সোনা এগুলো কোনটা বেশি ভালো- এই নিয়ে চলতো কবিতায় কবিতায় লড়াই।
কোনো কোনো গ্রামে যাত্রা হতো। সম্পন্ন গৃহস্থ বা ক্লাব যাত্রাপালার আয়োজন করতো। কিন্তু যাত্রা দেখতে হতো দর্শনীর বিনিময়ে। চারপাশ টিন দিয়ে ঘিরে একটি মাত্র দরজা রাখা হতো দর্শকের ঢোকার জন্য। যাত্রাপালার মঞ্চের চারপাশে দর্শকরা খড় বিছিয়ে বসতো। 

গ্রামের বিয়েকে কেন্দ্র করে মানুষ আনন্দের উপলক্ষ খুঁজে পেত। বিশেষ করে মেয়ের বিয়েতে সবাই সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণ করতো। তারা স্বতঃস্ফুরতভাবে গেইট বানানো থেকে শুরু করে অতিথি বরণ, সমাদর এবং বিদায় দেওয়া-সবকিছুতেই গ্রামের মানুষ সাহায্য করতো।  

নারীরা বিয়ের গীত গাইতো। প্রায় সব গ্রামেই তখন ছিল, বিয়ে বাড়িতে গিয়ে পান খেতো এবং গীত গাইতো। আবার অনেক সময় বিয়ে বাড়িতে অনেক সং সেজে উপস্থিত হতো। বিভিন্ন ধরণের কর্মকাণ্ড করে মানুষকে আনন্দ দিত। 

আশির দশকের দিকে মানুষের সে কি অভাব। অর্থকষ্ট- প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করা মানুষগুলো যে বিনোদনের উপায় খুঁজে পেতো সেটাই বিষ্ময়কর। বলা যায় মানুষের বিনোদন ছিলো জীবনযাত্রা নির্বাহের সমান্তরালে।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এস এম জ হ দ হ স ন অন ষ ঠ ন র জন য উপস থ আসর ব র আসর

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কারা বেশি কাঁদেন? 
  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত