বিজ্ঞানের পরিভাষায় বয়স বা ক্রোনোলজিক্যাল এজের মাপকাঠি হচ্ছে সময়। কিন্তু বয়স পরিমাপের আরেকটি পদ্ধতি রয়েছে, তা হলো বায়োলজিক্যাল এজ। এমন মাপজোখ করেন ডাক্তাররা। অদূর ভবিষ্যতে এ কাজ করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। পরিমাপ পদ্ধতিতে উপাত্ত হিসেবে থাকবে সেলফি! হ্যাঁ, ঠিকই। পরিমাপক হবে সেলফি। বিস্ময়কর মনে হলেও ঘটনা কিন্তু সত্যি। কাজটি সম্পাদনা করবে ফেসএজ নামে এআই টুল। যে কারও সেলফি বিশ্লেষণ করে ঠিকঠাক বলে দেবে সেলফির মানুষটির বয়স আনুমানিক কত। শুধু তাই নয়; তার রোগ নিয়ে জানাবে বিশেষ তথ্য-উপাত্ত।
আর রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি বলে দেবে ওই ব্যক্তির বায়োলজিক্যাল বয়স কত হবে।
উল্লিখিত এআই মডেল ডিপ লার্নিং অ্যালগরিদম অনুসরণ করে। যার প্রধান চালিকাশক্তি হলো বেশ কিছু ছবি বিশ্লেষণ করে বলে দেওয়া সেলফি ব্যক্তির মধ্যে কী সমস্যা বিদ্যমান। মডেলের কাজ করার ভিত্তিটা হলো ‘দি আইবল’ পরীক্ষা।
প্রশ্ন আসছে বিষয়টি আদৌ কী! ডাক্তার তাঁর কাছে যাওয়া রোগীকে দেখে অনেকটা ধারণা থেকে বলে দিতে পারেন, তাঁর সমস্যার সম্ভাব্য ধরন কেমন। যাকে বলে ডক্টর ক্লিনিক্যাল আই। সমস্যার ধরন শুনে ক্লিনিক্যাল আই বিবেচনায় যে কোনো ডাক্তার রোগীর প্রাথমিক রোগ শনাক্ত করেন। প্রথমেই যা দেখেন, তা হচ্ছে রোগীর অবয়ব বা মুখাবয়। তা থেকেই অভিজ্ঞ ডাক্তার অনেক কিছু ধারণা করেন।
মূলত ফেসএজ উল্লিখিত কাজটাই করে। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন স্বাস্থ্য সংস্থা মডেলটি তৈরি করেছে। সংস্থাটি জানায়, উদ্ভাবিত মডেলের কাজ কোনোভাবেই ডাক্তারের ক্লিনিক্যাল আইকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করা নয়; বরং ডাক্তার যেভাবে ভাবছেন, ওই ধারণাকে সুসংহত করা। তার ভিত্তিতে নির্ভরযোগ্য চিকিৎসাপত্র তৈরি করা।
গবেষণাপত্রটি ল্যানসেট ডিজিটাল হেলথে প্রকাশ পেয়েছে। বর্তমানে পাইলট স্টাডি চলছে। দ্রুতই মডেলটি বিশ্বের নানা দেশের হাসপাতালে পরীক্ষা করা হবে। ডাক্তাররা নিয়মিত মডেলের সহায়তা নেবেন।
উদ্ভাবক দাবি করেছেন, এমন মডেল ক্যান্সার চিকিৎসায় খুব ভালো কাজ করবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশের বেশ কিছু ক্যান্সার রোগীর ওপর মডেলটি প্রয়োগ করা হয়েছে। মডেলের ভিত্তিতে শুরু হয়েছে চিকিৎসা।
সহজে বলতে গেলে, চেম্বারে যাওয়ার পর ডাক্তার যেভাবে রোগীকে দেখে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করেন, ঠিক ওই কাজটাই করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ডাক্তার এ ক্ষেত্রে এআই প্রযুক্তিকে ক্রস চেক হিসেবে তার সহায়তা নেবেন। তিনি যেমনটা ভাবছেন, তা আদৌ ঠিক কিনা। ফলে এআই ডাক্তারের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মাদ্রাসা শিক্ষকের পিটুনিতে ছাত্রের হাত ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানায় হেফজ বিভাগের এক শিক্ষার্থীর ওপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ওই মাদ্রাসার শিক্ষকের বিরুদ্ধে। রোববার উপজেলার তারাশী-পবনাড়পাড় এলাকার ওই মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে।
পড়া না পারায় বেত দিয়ে বেধড়ক মারধর ও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ায় হামিম শেখ (৮) নামের এক ছাত্রের বাম হাত ভেঙে গেছে। আহত হামিম শেখ গোপালপুর গ্রামের রুহুল আমিন শেখের ছেলে।
জানা যায়, মাদ্রাসার হাফেজ মো. ইব্রাহিম খলিলুর রহমান হামিমকে পড়া জিজ্ঞাসা করলে সে উত্তর দিতে না পারায় শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে বেত দিয়ে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে হামিমের হাত ভেঙে যায়। পরে তার নানী সোনাই বেগম মাদ্রাসা তাকে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে এক্স-রেতে হামিমের বাম হাত ভাঙার বিষয়টি নিশ্চিত হলে চিকিৎসকরা ব্যান্ডেজ ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেন।
হামিম শেখ জানায়, হুজুর আমাকে অনেক মারছে, পড়া পারিনি বলেই। শুধু আমাকে না, অন্যদেরও পেটায়। বাড়িতে বলতেও দেয় না। আগে অনেকবার মারলেও কাউকে বলিনি।
নানী সোনাই বেগম বলেন, আমি খাবার দিতে গিয়ে দেখি হামিম কাঁদছে। শিক্ষক বললেন পড়ে গেছে। বাড়ি এনে জামা খুলে দেখি সারা গায়ে বেতের দাগ। হাত ফুলে গেছে। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাই।
তবে মাদ্রাসার মোহতামিম হাফেজ মুফতি আব্দুল্লাহ আল হাফিজ ঘটনার সত্যটা নিশ্চিত করে বলেন, ওস্তাদ শাসনের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছেন। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে পরিচালনা কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. কুমার মৃদুল দাস বলেন, “শিশুটির হাত ভেঙে গেছে। চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি এক মাসের মধ্যে সে সুস্থ হয়ে উঠবে।”
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ইব্রাহিম খলিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।