সদ্য বিদায়ী মে মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৬৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এ মাসে এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে। এপ্রিলের পর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তপ্ত মাস মে। সেই মাস বৃষ্টিতে ভিজেছে পুরো দেশ।

দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয় জুন মাসে। সেই মাসে বৃষ্টি কতটা হবে? আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এ মাসে স্বাভাবিক বা এর চেয়ে কম বৃষ্টি হতে পারে। তবে সেখানে একটা ‘যদি’ আছে। কী সেটা?

আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ সোমবার দেওয়া জুন মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে সেই ‘যদি’র ব্যাখ্যা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এ মাসে এক থেকে দুটি লঘুচাপ হতে পারে। এর মধ্যে একটি নিম্নচাপও হতে পারে। তবে সেখানেও একটা ‘কিন্তু’ আছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো.

বজলুর রশীদ আজ প্রথম আলোকে বলেন, একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে এ মাসের মাঝামাঝি; কিন্তু এর প্রভাব বাংলাদেশের দিকে কতটা পড়বে তা অনিশ্চিত এখনো। কারণ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, নিম্নচাপের বড় প্রভাব না–ও পড়তে পারে। আর তা যদি না পড়ে; তবে বৃষ্টি বেশি না–ও হতে পারে।

দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাই মাসে ৫২৩ মিলিমিটার। এর পরই বেশি বৃষ্টি হয় জুন মাসে ৪৫৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার। মে মাসে গড় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয় ২৯৮ মিলিমিটার। এবারের মে মাসে হয়েছে ৪৮৬ মিলিমিটার। গত ৩১ মে সিলেটে ৪০৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এত বৃষ্টি সিলেটের রেকর্ড, জানান বজলুর রশিদ।

মে মাসের শুরুটা অবশ্য হয়েছিল তাপপ্রবাহ দিয়ে। ওই মাসে চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ১০ মে সেই তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চুয়াডাঙ্গায়। দেশের যতটা অংশজুড়ে মে মাসে তাপপ্রবাহ চলেছিল, তা এ বছর আগে হয়নি। কিন্তু মাসের মাঝামাঝি এসে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার (২৭ মে) বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। এটি এক পর্যায়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। গত বৃহস্পতিবার এর প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টি হয়। এরপর থেকে বৃষ্টি লেগেই আছে। এখন যে বৃষ্টি চলছে, তার কারণ অবশ্য দেশে ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়া মৌসুমি বায়ু।

দেশে এ বছর নির্দিষ্ট সময়ের অন্তত সাত দিন আগে গত ২৪ মে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করে। নিম্নচাপের প্রভাব কমে যাওয়ার পর থেকে বৃষ্টির কারণ হলো, মৌসুমি বায়ুর অধিক সক্রিয়তা। এটিই আজ পর্যন্ত বৃষ্টি ঝরাচ্ছে। তবে আগামীকাল থেকে বৃষ্টি কমে যেতে পারে বলেই আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়েছে।

জুন মাসে এক বা দুটি মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আবার বৃষ্টির কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর–পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে স্বল্পমেয়াদে বন্যা হতে পারে। এ মাসে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কোহলির আইপিএল জয়ের আনন্দ ‘১০ গুণ’ বাড়িয়েছেন যে দুই কিংবদন্তি

আইপিএল ফাইনাল দেখতে ভারতে যাওয়ার ছবি উড়োজাহাজে থাকতেই পোস্ট করেছিলেন ক্রিস গেইল। এবি ডি ভিলিয়ার্স তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হ্যান্ডলে কোনো ছবি পোস্ট করেননি। চুপি চুপি চলে যান ভারতে। কাল রাতে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দেখা গেল দুজনকেই। ম্যাচ শেষে মাঠেও দেখা গেল। বিরাট কোহলির সঙ্গে এ দুই কিংবদন্তির ফ্রেমবন্দী ছবি দেখে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর নষ্টালজিক সমর্থকেরা বলতেই পারেন ‘হলি ট্রিনিটি!’

আরও পড়ুন১৮ বছর, ২৬৭ ম্যাচ ও ৮৬৬১ রানের বিনিময়ে পাওয়া কোহলির এই ট্রফি৩ ঘণ্টা আগে

ডি ভিলিয়ার্স ও গেইল বেঙ্গালুরুতে খেলাকালীন সময়ে তিনজনকে একসঙ্গে এ নামেই ডেকেছেন সমর্থকেরা। ২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বেঙ্গালুরুতে খেলে ৮৪ ইনিংসে ৩১৬৩ রান করেন গেইল। ৫ সেঞ্চুরির সঙ্গে ফিফটি ১৯টি। গেইল অবশ্য পাঞ্জাবের হয়েও খেলেছেন। কাল রাতের ফাইনালে তিনি বেঙ্গালুরুকে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি পাঞ্জাবকেও সমর্থন দেন। বেঙ্গালুরুর জার্সি পরার পাশাপাশি পাঞ্জাবি পাগড়িও পরে মাঠে গিয়েছিলেন গেইল।

ডি ভিলিয়ার্স ২০১১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত খেলেন বেঙ্গালুরুতে। ১৫৬ ম্যাচে ৪৪৯১ রান করেন। কাল ম্যাচের শেষ দুই ওভারে বাউন্ডারি সীমানার বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন এই প্রোটিয়া কিংবদন্তি। মাঠ থেকে তাঁকে দেখে আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন কোহলি। বেঙ্গালুরুর জয়ের পর মাঠে তাঁদের উদ্‌যাপনে যোগ দেন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি গেইলও। মাঠেই সম্প্রচারক চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ দুজনের উপস্থিতি নিয়ে কোহলি বলেছেন, তাতে শিরোপা জয়ের আনন্দটা ‘১০ গুণ বেড়ে বিশেষ’ হয়েছে।

সম্প্রচারক চ্যানেলের ক্যামেরার সামনে তিন কিংবদন্তি মিলে দারুণ এক উদ্‌যাপনও করেন। বেঙ্গালুরুর দীর্ঘদিনের স্লোগান ছিল ‘এ সালা কাপ নামদে (এবার কাপটা হবে আমাদের)!’ ১৮ বছর অপেক্ষার পর শিরোপা জিতে ক্যামেরা ও মাইক্রোফোনের সামনে চিৎকার করে স্লোগানটি পাল্টে দেন তিন কিংবদন্তি, ‘এ সালা কাপ নামদু (এবার কাপ আমাদের)!’

আরও পড়ুনআইপিএলে কে কোন পুরস্কার পেলেন২ ঘণ্টা আগে

ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে আইপিএলে দারুণ কিছু ম্যাচ জেতানো জুটি রয়েছে কোহলির। তাঁকে নিয়ে কোহলি বলেন, ‘সে ফ্র্যাঞ্চাইজির (বেঙ্গালুরু) হয়ে যা করেছে, সেটা অসাধারণ। ম্যাচের আগে বলেছি তাকে, এই ম্যাচটা আমাদের জন্য যা, তোমার জন্যও তা–ই এবং আমি চাই যখন আমরা ট্রফি উঁচিয়ে ধরব, তখন তুমি আমাদের সঙ্গে উদ্‌যাপন করবে। কারণ, সে আরসিবির জন্য যা করেছে, সেটা সত্যিই বিশেষ কিছু।’

প্রোটিয়া কিংবদন্তিকে নিয়ে কোহলি আরও বলেন, ‘সে সবচেয়ে বেশি ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছে এবং চার বছর হলো অবসর নিয়েছে। এই দলে তার প্রভাবটা এতেই স্পষ্ট...বেঙ্গালুরুর মানুষ এবং এই দলের কাছে সে কতখানি, সেটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। তাই আমি বলেছি, আমাদের সঙ্গে বিজয়মঞ্চে দাঁড়িয়ে ট্রফি উঁচিয়ে ধরাটা তার প্রাপ্য।’

শেষ দুই ওভারে সীমানার বাইরে ডি ভিলিয়ার্সকে দেখে আবেগাপ্লুত হওয়া নিয়েও কথা বলেন কোহলি। ডি ভিলিয়ার্সকে উদ্দেশ করে কিংবদন্তি বলেন, ‘শেষ দুই ওভারে সীমানার বাইরে তোমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখাটা ছিল আরও বিশেষ কিছু। (শেষ ওভারে) হফের (হ্যাজলউড) দ্বিতীয় বলটি ছক্কা না হওয়ার পর তাদের পাঁচ ছক্কার দরকার ছিল। (ডি ভিলিয়ার্সকে দেখিয়ে) আমি জানি না ইনিংসের শেষ তিন বলে কীভাবে অশ্রু আটকে রাখতে পেরেছি। কিন্তু তুমি জানো, তখন কেমন লাগে। সেও (গেইলকে দেখিয়ে) জানে কেমন লাগে।’

আরও পড়ুনদেড় যুগ পর আইপিএলজয়ী কোহলিকে ১৫ বছর পর ট্রফিজয়ী কেইনের শুভেচ্ছা ১ ঘণ্টা আগে

গেইল সে মুহূর্তে জড়িয়ে ধরেন কোহলিকে। তারপর মুখে হাসি ফুটিয়ে বলেন, ‘১৮ বছর! কী সৌভাগ্যের নম্বর (কোহলির জার্সি নম্বরও ১৮)! তোমার জন্য খুশি লাগছে। আমি তোমার জন্যই। ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্যও খুশি লাগছে।’

কোহলি এরপর বলেন, ‘এটা (আইপিএল ট্রফি) আমার কাছে খুব বিশেষ কিছু হওয়ার কারণ হলো তাদের সঙ্গে এটা ভাগ করে নিতে পারছি। কারণ, নিজের সেরা সময় আমি তাদের সঙ্গে ভাগ করেছি এবং আমি জানি (ট্রফি) জয়ের জন্য আমরা কী পরিমাণ চেষ্টা করেছি...আমরা সবাই কষ্ট (ট্রফি না জেতায়) পেয়েছি, কারণ, আমরা সবাই নিজেদের সেরা সময়টা এই ফ্র্যাঞ্চাইজিকে দিয়েছি। আমরা একদম অন্তরের অন্তস্থল থেকে আরসিবির জন্য শিরোপাটি জিততে চেয়েছিলাম। হলফ করে বলছি, এটাকে (ট্রফি জয়) এখন ১০ গুণ বেশি বিশেষ কিছু মনে হচ্ছে, কারণ, তারা আমার পাশে দাঁড়িয়ে। এ শিরোপা আমার জন্য যতটা প্রাপ্য, তাদেরও ততটাই। আমি জানি, মানুষ আবেগপ্রবণ এবং তারাও নিজেদের সর্বস্ব নিংড়ে দিয়েছে। তাই এটায় তাদেরও সমান ভাগ।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ