কোরবানির পশু বিক্রি আজ, দুই সিটিতে ১৯ হাট
Published: 3rd, June 2025 GMT
৭ জুন দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হবে। ঈদের চার দিন আগে থেকে রাজধানীতে পশুর হাট বসে। সে হিসাবে আজ মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকার দুই সিটি এলাকায় কোরবানির পশুর বেচাবিক্রি শুরু হচ্ছে।
এ বছর স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় কোরবানির হাট চূড়ান্ত হয়েছে মোট ১৯টি। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় বসছে ১২টি পশুর হাট। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় বসছে ৭টি পশুর হাট।
এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি এলাকায় এখনো একটি হাটে ইজারাপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়নি। আর দক্ষিণ সিটিতে আরও দুটি হাটের ইজারার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এসব হাটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দিয়েছে ঢাকার দুই সিটি কর্তৃপক্ষ।
উত্তরে কোরবানির হাট
ঈদুল আজহায় ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন একমাত্র স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীতেও কোরবানির পশু বেচাবিক্রি হবে। এ ছাড়া অস্থায়ী হাটগুলোর মধ্যে খিলক্ষেত থানাধীন ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মস্তুল চেকপোস্ট–সংলগ্ন খালি জায়গার হাট, তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট–সংলগ্ন খালি জায়গার হাট, উত্তরা দিয়াবাড়ি ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টর–সংলগ্ন বউ বাজারের খালি জায়গার হাট, মিরপুর-৬ নম্বর সেকশনে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গার হাট, মোহাম্মদপুর এলাকার বছিলা ৪০ ফুট সড়ক–সংলগ্ন খালি জায়গায় হাট, উত্তরা-১০ নম্বর সেক্টর-সংলগ্ন রানাভোলা অ্যাভিনিউ খালি জায়গার হাট, ভাটারা সুতিভোলা খালের পাশে খালি জায়গার হাট, খিলক্ষেতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচের খালি জায়গায় হাট, কাচকুড়া বাজার-সংলগ্ন রহমাননগর হাট, মেরুল বাড্ডা কাঁচাবাজার হাট এবং রামপুরার পূর্ব হাজিপাড়ার ইকরা মাদ্রাসার খালি জায়গায় হাট।
দক্ষিণে যেসব স্থানে হাট
ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায় চূড়ান্ত হওয়া হাটগুলোর মধ্যে উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ ক্লাবের খালি জায়গায় হাট, ডেমরার আমুলিয়া আলীগড় মডেল কলেজের উত্তর পাশের খালি জায়গায় হাট, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের পশ্চিম পাশে নদীর পাড়ে খালি জায়গায় হাট, দনিয়া ক্লাবের পূর্ব পাশে ও ছনটেক মহিলা মাদ্রাসার পশ্চিমের খালি জায়গায় হাট, লালবাগের পোস্তা এলাকায় রহমতগঞ্জ ক্লাবের খালি জায়গায় হাট এবং হাজারীবাগে ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজের পূর্ব পাশের খালি জায়গায় হাট। এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতাধীন স্থায়ী পশুর হাট সারুলিয়াতেও কোরবানির পশু বেচাবিক্রি হবে।
আরও তিন জায়গায় হাটের প্রস্তুতি
ঢাকার দুই সিটিতে এখনো তিনটি হাট ইজারার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি দুই সিটি কর্তৃপক্ষ। এর কারণ সরকার নির্ধারিত দর না পাওয়া। তাই এসব হাটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মতামত চেয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছে দুই সিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। যদিও ওই তিন হাটের নির্ধারিত জায়গায় হাট বসানোর প্রস্তুতি নিতে ও বিক্রির জন্য পশু এনে রাখতে দেখা গেছে।
এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি এলাকায় মিরপুরের কালশী বালুর মাঠের খালি জায়গার হাট একটি। গতকাল সোমবার ঢাকা উত্তর সিটির সম্পত্তি বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, এ হাটের জন্য সরকার নির্ধারিত ৮০ লাখ টাকা দর হলেও তিন দফা দরপত্র আহ্বান করে কাঙ্ক্ষিত দর পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় ৩০ লাখ টাকা দর পাওয়া যায়। এ দর দিয়েছেন মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান। তৃতীয় দফায় এ হাটের জন্য কোনো দর জমা পড়েনি।
আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায় মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে দুটি হাটের ইজারা। একটি হলো রাজধানীর নারিন্দায় সাদেক হোসেন খোকা মাঠের দক্ষিণ পাশের খালি জায়গা ও ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল। অন্যটি ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গার হাট। তবে ওই দুটি জায়গাতেই হাট বসানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যদিও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ বলছে, দুটি হাটের অনুমোদন পেতে তাঁরা আইন অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন।
হাট ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ প্রথম আলোকে বলেন, স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য, প্রাণিসম্পদ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মিলে হাটের নিরাপত্তা, যানজট, অবৈধ হাট বসতে না দেওয়া, হাটে আনা পশুর স্বাস্থ্য—এসব বিষয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত মাঠপর্যায়ে কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। হাটগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে। এ ছাড়া হাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা, জাল টাকা শনাক্তের ব্যবস্থা থাকবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ ট বস এল ক য় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এই অদম্য মেয়েদের আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না
অবহেলিত মেয়েরা কঠিন একটি কাজ সম্পন্ন করেছেন। অনেকের কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। অসাধ্য এক অর্জনকে বাস্তবের জমিনে নামিয়ে এনেছেন আমাদের বাঘিনীরা। সাফ পর্যায় জয় করে নারীদের ফুটবলকে এশীয় পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। বিশ্বকাপও খেলে ফিরতে পারেন এই অদম্য বাঘিনীরা।
এখন বলাই যায়, নারী ফুটবলের বিশ্ব পর্যায়ে কড়া নাড়ছেন আমাদের মেয়েরা। ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাঁরা। শুধু ফুটবলই নয়, আমাদের নারী জাগরণের নতুন দিশা হতে পারে মেয়েদের এই সাফল্য। এই মেয়েরা সারা দেশের মেয়েদের জন্য উদাহরণ। নারী অধিকার, নারী ক্ষমতায়নের নতুন দিনের আলোকবর্তিকা আমাদের নারী ফুটবল দল।
ফুটবলে মেয়েদের এই সাফল্যের পেছনে আছে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস। সফলতা খুব সহজে আসেনি। নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে কঠিন এক সংগ্রামের ফসল মেয়েদের আজকের এই অর্জন। ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত পল্লি থেকে কোহাটি কিষ্ক, কলসিন্দুরের মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার, তহুরা খাতুন, সানজিদা আক্তার বা রাঙামাটির দুর্গম গ্রাম মগছড়ি থেকে ঋতুপর্ণা চাকমাদের আজকের এই পর্যায়ে আসার ইতিহাসটা আমরা কমবেশি সবাই জানি।
এই পথচলায় সামাজিক বিধিনিষেধ ছিল। ছিল আর্থিক টানাপোড়েন, অনিশ্চয়তা। জীবনের এমন কোনো সংকট নেই, যা তাঁদের সামনে আসেনি। কিন্তু হিমালয়সম সেই বাধাকে সাহসিকতার সঙ্গে পেছনে ঠেলে আজকে তাঁরা এশীয় পর্যায়ে নিজেদের উন্নীত করেছেন।
তাঁদের অর্জনের তুলনায় রাষ্ট্র দিতে পেরেছে খুবই কম। বলতে গেলে, তাঁরা পেটেভাতে দেশের জন্য খেলে দিচ্ছেন। যেন খেলার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চলছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আদলে। যৎসামান্য যে বেতন দেওয়া হয়, সেটাও অনিয়মিত। যেকোনো সাফল্যের পর যখন মেয়েদের কাছে শুনতে চাওয়া হয়, ‘আপনারা কী চান?’ উত্তরে মেয়েরা জানান, ‘নিয়মিত বেতনটা চাই। আর বেতনটা বাড়ালে আরও ভালো হয়।’ ২০২৫ সালে এসে এটা মেনে নেওয়া কঠিন।
দেশে মেয়েদের নিয়মিত লিগ হয় না। অন্য কোনো টুর্নামেন্টও হয় না নিয়মিত। নিয়মিত খেলার জন্য আমাদের মেয়েদের ভুটান লিগে খেলতে যেতে হয়। কেবল আবাসিক ক্যাম্পের প্রশিক্ষণ ও কিছু প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলেই মেয়েদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় নামতে হয়। সেই সব খেলায় তাঁরা নিয়মিত লিগ খেলা দলগুলোকে বলে-কয়ে হারাচ্ছে।
আমাদের খেলাধুলাকে রাজধানীকেন্দ্রিক না রেখে প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। শুধু নারী ফুটবল নয়, সব ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে তৃণমূল থেকে। তবেই নতুন নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে। ঢাকাকেন্দ্রিক খেলার কুফল কী হতে পারে, তার বড় উদাহরণ আমাদের ছেলেদের ফুটবল। সারা দেশে নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক লিগ না হওয়ার কারণে নতুন নতুন ফুটবলার বেরিয়ে আসছেন না।কী পরিমাণ প্রতিভার অধিকারী হলে ন্যূনতম সুবিধা না পেয়েও এ পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করা যায়, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। ভারত ও নেপালে নিয়মিত মেয়েদের খেলা হয়, লিগ হয়। আর আমরা তাদের এখন নিয়মিতই হারাই। এখন সাফের বাইরের দলগুলোকেও আমরা হারাতে শুরু করেছি।
এই মেয়েদের প্রচেষ্টা ও সাহস নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রচণ্ড রকম ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে তাঁরা খেলতে নামেন। ভয়হীন ফুটবল খেলেন। সব থেকে বড় কথা, খেলার যেকোনো ধরনের ট্যাকটিকসের সঙ্গেই তাঁরা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন। আগে আমাদের মেয়েরা কিছুটা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতেন। রক্ষণ সামলে প্রতি-আক্রমণে যেতেন। এবার এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে মেয়েরা পুরো খেলার ধরন বদলে ফেলেছেন।
আমাদের মেয়েরা এবার হাই প্রেসিং ফুটবল খেলেছেন। এই দল আগের থেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন ফুটবল খেলে। বল পায়ে রাখতে পারে। তাদের বল ডিস্ট্রিবিউশন আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। পাসিংও ভালো। পজিশন সেন্স চমৎকার। বিশেষ করে বল হারালে দ্রুত নিজেরা অবস্থান নিতে পারে।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে হাই লাইন ডিফেন্স করে গেছে দুর্দান্তভাবে। আর বাহরাইনের সঙ্গে শামসুন্নাহার জুনিয়র যেভাবে গতি সঞ্চার করে ডিফেন্স থেকে বেরিয়ে ওয়ান টু ওয়ানে গোলরক্ষককে পরাজিত করলেন ঠান্ডা মাথায়, তা আমাদের পুরুষ দলের স্ট্রাইকার বা উইঙ্গাররাও করতে পারেন না। নিয়মিত খেলার মধ্যে না থাকা একটি দলের কাছে এর বেশি আশা করা উচিত নয়। কিন্তু তাঁরা আমাদের সেই আশাকে ছাড়িয়ে গেছেন। তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে মাঠে খেলাটা তৈরি করতে পারেন।
মেয়েদের এই লড়াইকে ধরে রাখতে হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সিরাত জাহান স্বপ্না বা আঁখি খাতুনের মতো খেলোয়াড়দের আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে ফুটবল থেকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। মেয়েদের প্রতিযোগিতামূলক লিগ নিয়মিত আয়োজন করতে হবে। এর পাশাপাশি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে লিগের আয়োজন করতে হবে।
‘সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এই মেয়েরা আমাদের ফুটবল নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।’