গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানায় হেফজ বিভাগের এক শিক্ষার্থীর ওপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ওই মাদ্রাসার শিক্ষকের বিরুদ্ধে। রোববার উপজেলার তারাশী-পবনাড়পাড় এলাকার ওই মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। 

পড়া না পারায় বেত দিয়ে বেধড়ক মারধর ও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ায় হামিম শেখ (৮) নামের এক ছাত্রের বাম হাত ভেঙে গেছে। আহত হামিম শেখ গোপালপুর গ্রামের রুহুল আমিন শেখের ছেলে।

জানা যায়, মাদ্রাসার হাফেজ মো.

ইব্রাহিম খলিলুর রহমান হামিমকে পড়া জিজ্ঞাসা করলে সে উত্তর দিতে না পারায় শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে বেত দিয়ে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে হামিমের হাত ভেঙে যায়। পরে তার নানী সোনাই বেগম মাদ্রাসা তাকে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে এক্স-রেতে হামিমের বাম হাত ভাঙার বিষয়টি নিশ্চিত হলে চিকিৎসকরা ব্যান্ডেজ ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেন।

হামিম শেখ জানায়, হুজুর আমাকে অনেক মারছে, পড়া পারিনি বলেই। শুধু আমাকে না, অন্যদেরও পেটায়। বাড়িতে বলতেও দেয় না। আগে অনেকবার মারলেও কাউকে বলিনি।

নানী সোনাই বেগম বলেন, আমি খাবার দিতে গিয়ে দেখি হামিম কাঁদছে। শিক্ষক বললেন পড়ে গেছে। বাড়ি এনে জামা খুলে দেখি সারা গায়ে বেতের দাগ। হাত ফুলে গেছে। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাই।

তবে মাদ্রাসার মোহতামিম হাফেজ মুফতি আব্দুল্লাহ আল হাফিজ ঘটনার সত্যটা নিশ্চিত করে বলেন, ওস্তাদ শাসনের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছেন। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে পরিচালনা কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. কুমার মৃদুল দাস বলেন, “শিশুটির হাত ভেঙে গেছে। চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি এক মাসের মধ্যে সে সুস্থ হয়ে উঠবে।”

অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ইব্রাহিম খলিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মৌসুমের আগেই প্রস্তুতি নিতে হবে

জলাবদ্ধতা এখন শুধু বড় শহরগুলোর সমস্যা নয়, এটি ছড়িয়ে পড়েছে দেশের জেলা–উপজেলা ও পৌর শহরগুলোতেও। বৃষ্টির মৌসুম শুরু হলেই জলাবদ্ধতার কারণে শহর অচল হয়ে পড়ার পর এ নিয়ে হইচই শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এ সমস্যা নিরসনে যে পূর্বপ্রস্তুতির প্রয়োজন আছে, সেদিকে খেয়ালই রাখা হয় না। যে কারণে ভুগছে মৌলভীবাজারের মতো ছোট শহরগুলোও। বৃষ্টির পানি নেমে না যেতে পারায় পৌর শহরটির অনেক এলাকা এখন নিয়মিতই ডুবছে। বিষয়টি দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, টানা বৃষ্টির ফলে মৌলভীবাজারের অনেক এলাকা ডুবে যাচ্ছে। কারণ, বেশি বৃষ্টি হলে সেই বৃষ্টির পানি ধারণ করার মতো জলাধার এখন আর শহরে নেই। অন্যদিকে নালাগুলোরও একসঙ্গে বেশি পানি টেনে নেওয়ার সক্ষমতা নেই। একটা সময় শহরের পূর্বাঞ্চলে ফাটাবিলের বিশাল এলাকা অনেক পানি ধারণ করতে পারত। আশপাশের বৃষ্টির পানি দ্রুত ফাটাবিলে এসে জমা হতো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ফাটাবিলের সেই প্রকৃতি-পরিবেশ সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। নিচু এলাকা ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে বাসাবাড়ি গড়ে তোলা হয়েছে। এতে একদিকে জল ধারণের জায়গা কমে গেছে, অন্যদিকে পানিনিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। এতে পানি ফুলে-ফেঁপে উঠছে। আর বৃষ্টির মৌসুমে পৌরবাসীর ভোগান্তিও বাড়ছে।

এখানে বর্জ্য অব্যবস্থাপনা গুরুতর প্রভাব ফেলছে। শহরের বিভিন্ন নালায় নিজেদের খুশিমতো ফেলা হচ্ছে পলিথিনসহ ময়লা-আবর্জনা। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নানা রকম বর্জ্য এসব নালায় ফেলা হচ্ছে। আবাসিক এলাকার লোকজনও বাসাবাড়ির বর্জ্য নালার মধ্যে ফেলছেন। এতে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পানি নালা উপচে সড়কের ওপর চলে আসছে; নিচু বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ছে। এ ছাড়া কোদালীছড়া হচ্ছে জেলা শহরের পানিনিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম। বর্ষিজোরা পাহাড় থেকে বেরিয়ে আসা কোদালীছড়াটি প্রায় ১৭ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে হাইল হাওরে গিয়ে মিশেছে। এর মধ্যে প্রায় চার কিলোমিটার পড়েছে শহরের অংশে। কোদালীছড়ার ভাটির দিকে (শহরের বাইরে) শুকনা মৌসুমে বোরো চাষে সেচের জন্য বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দেওয়া হয়ে থাকে। এই বাঁধ পরে অপসারণ করা হয় না।

অনেকে মাছ ধরতে কোদালীছড়ার নানা স্থানে ফাঁদ পেতে থাকেন। এসব কারণে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। এ ছাড়া কোদালীছড়ার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের আজমেরুতে একটি জলকপাট (স্লুইসগেট) আছে। এই জলকপাটের মধ্যে কচুরিপানাসহ নানা রকম বর্জ্য আটকে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে।

মৌলভীবাজারের প্রশাসন জলাবদ্ধতা নিরসনে যথেষ্ট চেষ্টা করছে। কিন্তু বৃষ্টির মৌসুম শুরু হওয়ার আগে বাঁধগুলো অপসারণ না করলে এ সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়। প্রতিবছর পরিকল্পনা করেই কয়েক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। এখানে পৌর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনকে সমন্বয়ের সঙ্গে কাজ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ