প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনই জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সে নির্বাচন অনুষ্ঠান—এ দুটি বিষয়ে অবিচল থাকবে বিএনপি। গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ওই সূত্র জানিয়েছে, সভায় জাপান সফরে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বিএনপিকে লক্ষ্য করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা নিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা আলোচনা করেন। গত বৃহস্পতিবার টোকিওর নিক্কেই ফোরামের অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সব দল নয়, বাংলাদেশে শুধু একটি দলই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। এরপর বিএনপিসহ বিভিন্ন দল এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা মনে করেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়ে তাঁর ওই বক্তব্যকে নাকচ করে দিয়েছে। যদিও অধ্যাপক ইউনূস এখনো তাঁর আগের অবস্থানেই আছেন। তিনি এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে বলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সাক্ষাৎকারে একাধিকবার বলেছেন।

কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আদায়ে সরকারের ওপর চাপ তৈরির গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাবে। নির্বাচনের সময় নিয়ে সরকারের সঙ্গে যত মনোমালিন্যই হোক, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনই সে নির্বাচন চায় বিএনপি। তবে এ ক্ষেত্রে সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে অপারগ হলে তখন ভিন্ন চিন্তা করবে। এ জন্য ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে রেখে কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ ছাড়া সভায় উচ্চ আদালতের রায়ের পরেও ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে শপথ পড়াতে এখনো গড়িমসি করায় সরকারের সমালোচনা করা হয়। বিএনপির নেতারা মনে করেন, অতীতে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার সরকার যা করেছে, এ সরকারও একই কাজ করছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মনে করি, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। কারণ, দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে তা দেশের জন্য ক্ষতি হবে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে গুলশানের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে তারেক রহমান লন্ডন থেকে, মির্জা ফখরুল ইসলাম ব্যাংকক থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন অন ষ ঠ ন ব এনপ র কম ট র সরক র ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

দাসত্বের সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি: শিক্ষা উপদেষ্টা

শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেছেন, “বিগত ফ্যাসিস্ট রেজিম যে দাসত্বের সংস্কৃতি চালু করেছিল আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দলীয় লেজুরবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”

বুধবার (৩০ জুলাই) সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের লেভেল-১, সেমিস্টার-১ এ ভর্তিকৃত নবীণ শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, “জুলাই ২৪ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা জাতি হিসেবে পুনর্জন্ম লাভ করেছি। গত ১৭ বছর আমরা আমাদের নাগরিকত্ব সপে দিয়েছিলাম একটি ফ্যাসিবাদ সরকারের কাছে। যারা পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে দাসত্বের চুক্তি করেছিল। আমরা কখনো ভাবিনি এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে।” 

আরো পড়ুন:

কৃষি উপদেষ্টা-চীনা রাষ্ট্রদূত সাক্ষাৎ 

আইএমও কাউন্সিল নির্বাচনে জিবুতির সমর্থন চাইল বাংলাদেশ

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “খুন, আয়নাঘর, বিচারহীনতার মধ্য দিয়ে চলছিল এই বাংলাদেশ। এর থেকে পরিত্রাণ তোমরাই দিয়েছো। ছাত্র-জনতার এই অর্জনকে ম্লান হতে দেওয়া যাবে না।”

‍“নতুন বাংলাদেশে তোমরা নিজেদেরকে আপন স্বকীয়তায় উপস্থাপন করবে, রাজনৈতিক দলগুলো কিভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে তা তোমরা নির্ধারন করবে। তোমাদের ধৈর্যশীল ও রুচিশীলতার পাশাপাশি উন্নত মনের বিবেকবান ও সুন্দর মনের মানুষের পরিচয় দিতে হবে”, যোগ করেন তিনি। 

উপদেষ্টা বলেন, “পেশিশক্তির ব্যবহার রোধ করতে হবে। সহনশীলতা ও সহমর্মিতার সংস্কৃতি চালু করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে সহশিক্ষার কার্যক্রমে গুরুত্বারোপের পাশাপাশি সমাজে পিছিয়ে পরাদের এগিয়ে নিতে সহায়তা করতে হবে।”

ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, “নবীন শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমে নিজেদের সম্পৃক্ত করে মেলে ধরবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গ্লোবাল নলেজ বাড়ানোর জন্য বিশ্ব আঙ্গিকে লাইব্রেরিকে উপযুক্ত করতে হবে, যা গবেষণার কাজকে আরো ত্বরান্বিত করবে।”

ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সামিউল আহসান তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিকৃবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আলিমুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. এ.টি.এম. মাহবুব-ই-ইলাহী।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম, প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কাওছার হোসেন, প্রক্টর প্রফেসর ড. জসিম উদ্দিন আহাম্মদ, রেজিস্ট্রার (অ.দা) প্রফেসর ড. মো. আসাদ-উদ-দৌলা।

ঢাকা/নূর/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ