Samakal:
2025-11-04@01:05:34 GMT

গ্যাস সংকটে কমছে উৎপাদন

Published: 3rd, June 2025 GMT

গ্যাস সংকটে কমছে উৎপাদন

আড়াইহাজারে তীব্র গ্যাস সংকটের কবলে পড়েছে শিল্পকারখানা। এতে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। বন্ধের পথে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কারখানার মালিকরা। 
উপজেলায় দেড় শতাধিক বড় শিল্পকারখানা রয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই পোশাকশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব কারখানায় কাজ করছে কয়েক লাখ শ্রমিক। তিন মাস ধরে গ্যাস সংকট থাকায় বিপদে পড়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ থেকে রক্ষা পেতে কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) ও ডিজেলচালিত জেনারেটর চালাচ্ছে তারা। এতে খরচ বাড়ায় বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়, কমেছে উৎপাদন সক্ষমতা। এ পরিস্থিতিতে কারখানা সচল রাখা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মালিকরা।

আড়াইহাজারে পোশাক কারখানার পাশাপাশি রয়েছে স্পিনিং, অ্যালুমিনিয়াম, সাইজিং, ডাইং কারখানাও। এসব কারখানার যন্ত্রপাতি সচল রাখতে কমপক্ষে ১৫ পিএসআই গ্যাস সরবরাহ প্রয়োজন।  দিনের বেলায় পাওয়া যাচ্ছে মাত্র শূন্য দশমিক ৫ থেকে ১ পিএসআই, রাতের বেলায় দেড় থেকে ২ পিএসআই।
এ অবস্থায় অধিকাংশ সময় বেকার বসে থাকতে হচ্ছে শ্রমিকদের। ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। কমেছে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতাও। ফলে শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। সময়মতো পণ্য সরবরাহ এবং শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে উদ্যোক্তারা।
মালিকরা বলছেন, গ্যাস সংকটের কারণে তারা সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে পারছেন না। কারখানা বাঁচাতে দ্রুত গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট দূর করার আহ্বান জানিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিটিএমএ।
হাজী আক্তার টেক্সটাইল অ্যান্ড প্রসেসিং মিলস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘চার মাস ধরে গ্যাসই পাই না। ঈদ ও শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে অধিক ব্যয়ে অন্যান্য জ্বালানি দিয়ে ২০ শতাংশ মেশিন চালু রাখা হয়েছে। এর সমাধান না হলে কারখানাটি বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না।’

বিকল্প উপায়ে বাড়ছে ব্যয়
গ্যাসের তীব্র সংকটের কারণে লিড প্লাটিনাম সনদপ্রাপ্ত সবুজ কারখানার স্বীকৃতি পাওয়া মিথিলা টেক্সটাইলের ওভেন ডাইং কারখানায় তুষচালিত বয়লার ব্যবহার শুরু করে। এ কারখানা কর্তৃপক্ষের মতে, গ্যাসের বদলে তুষ দিয়ে বয়লার চালানোর ব্যয় তিনগুণ বেশি। বয়লারে এক টন বাষ্প তৈরি করতে এখন ৭১৪ টাকার গ্যাস খরচ হয়; যা ধানের তুষ দিয়ে করতে লাগে ২ হাজার ১৯২ টাকা।
মিথিলা গ্রুপের পরিচালক মাহবুব খান হিমেল বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে বিদেশি বায়ারদের চালান দিতে গিয়ে বর্তমানে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে এবং মুনাফার বদলে ব্রেক ইভেন পয়েন্টে (আয়-ব্যয় যখন সমান্তরাল) নেমে এসেছি। তা সত্ত্বেও আমরা মানসম্পন্ন ফ্যাব্রিক্স সাপ্লাই দিয়ে তাদের আস্থা ধরে রাখার চেষ্টা করছি। গত বছরের অক্টোবরের পর থেকে গ্যাসের চাপ তলানিতে নেমে আসায় কারখানা চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। উৎপাদনের পরিমাণ নেমে এসেছে ৩০ শতাংশে। শুধু গ্যাসের অভাবে অনেক বায়ারের অর্ডার নিতে পারছি না।’ দ্রুত গ্যাসের সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তিনি।

জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে গ্যাস দাবি
ছয় ইঞ্চি ব্যাসের সরবরাহ লাইনের মাধ্যমে মিথিলা গ্রুপ, এন জেড গ্রুপ, ফকির গ্রুপ, নান্নু গ্রুপ, সিমটেট গ্রুপ, এশিয়াটিক গ্রুপ, ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিলসসহ রপ্তানিমুখী শতাধিক শীর্ষ শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ করায় প্রায়ই গ্যাসের চাপ কমে যায়। এতে জেনারেটর ও বয়লার চালানো সম্ভব হয় না। তাই চাহিদামতো গ্যাস পেতে এসব শিল্পকারখানার মালিক আড়াইহাজারে প্রতিষ্ঠিত জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ডিআরএস অপটেক ভাল্ব থেকে গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে বিটিএমএর ভাইস প্রেসিডেন্ট সালেউদ জামান খান বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যবস্থা সংকটে পড়ায় শিল্প খাতের উৎপাদন তলানিতে ঠেকেছে। শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে শিল্পমালিকদের হিমশিম অবস্থা। কিছু প্রতিষ্ঠান সিএনজি এবং ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন সচল রাখার চেষ্টা করায় বাড়ছে উৎপাদন খরচ। এ সংকট নিরসনে শিগগির সরকারের ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাসের আড়াইহাজার শাখার ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী রায়হান কবির জানান, সারাদেশেই গ্যাসের সরবরাহ কম। গ্যাস সরবরাহস্থল থেকে এ উপজেলা সর্বশেষ প্রান্তে। ফলে অন্য কারখানাগুলো গ্যাস নেওয়ার পরে এ এলাকায় এসে গ্যাসের চাপ তেমন থাকে না। সরকার এলএনজি (লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস) আমদানির মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে উত্তরণে কাজ করছে। এ সংকটের সমাধান শিগগির হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। 
এ বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অপারেশন) এস এম জাকির হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ য স সরবর হ বয়ল র

এছাড়াও পড়ুন:

জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন

দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় যখন শিল্প উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, তখন গ্যাসকূপ খননে অগ্রগতি কম হওয়ার বিষয়টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশের অর্থনৈতিক সংকট এবং বিনিয়োগের গতি থমকে যাওয়ার পেছনে নিশ্চিতভাবেই জ্বালানিসংকটের বড় ভূমিকা আছে।

দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন না বাড়িয়ে বিগত সরকার উচ্চ মূল্যের এলএনজি আমদানির যে নীতি নিয়েছিল, তারই প্রতিফল এটা। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসার চিন্তা থাকলেও বাস্তব প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। ফলে গ্যাস–সংকটের বৃত্ত থেকে আমরা এখনো বেরিয়ে আসতে পারিনি।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, বিদ্যুৎ, শিল্প, ব্যবসা ও বাসাবাড়ির জ্বালানিতে বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩৮০ কোটি ঘনফুট। বর্তমানে গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে ২৭০-২৮০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত হচ্ছে ১৭৭ কোটি ঘনফুট। এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে ১১০ কোটি ঘনফুটের মতো। সব মিলিয়ে দৈনিক গ্যাসের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ কোটি ঘনফুট।

দেশের অর্থনীতির প্রাণ ফেরাতে এবং শিল্প ও বিনিয়োগের স্থবিরতা কাটাতে হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই। ২০১৭ সালে দেশীয় উৎস থেকে সর্বোচ্চ ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয়েছিল। এর পর থেকে এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরতা শুরু হয়। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সংকট, বিশ্ববাজারে এলএনজির দামের অনিশ্চয়তা ও অবকাঠামোগত সক্ষমতার ঘাটতিতে চাহিদামতো এলএনজি আমদানি সম্ভব হচ্ছে না।

এ বাস্তবতায় জ্বালানিবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান হতে পারে। স্থল ও সমুদ্রে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান এবং পুরোনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে নতুন কূপ খনন সমানতালে করা প্রয়োজন। সংকটে পড়ে বিগত সরকার ২০২২ সালে চার বছরে ৫০টি কূপ উন্নয়ন, সংস্কার ও অনুসন্ধানের কাজ হাতে নিলেও সেটি ধীরগতিতে এগোয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন বাতিল করা হয়। দরপত্র ডেকে চুক্তি করায় সময় বেশি লেগেছে, কিন্তু খরচ কমেছে। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কূপ খননের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ২০টি কূপ খননের কাজ শেষ হয়েছে। ফলে দৈনিক যেখানে ৬২ কোটি ঘনফুট গ্যাস নতুন উত্তোলন হওয়ার কথা ছিল, সেখানে ২১ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে ১০০টি কূপ খনন প্রকল্পও হাতে নিয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে কূপ খননের প্রকল্প নেওয়া হলেও দেশে রিগ বা খননযন্ত্রের ঘাটতি রয়েছে। বাপেক্স, বিজিএফসিএলসহ গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের সঙ্গে যুক্ত দেশীয় কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বহুদিন ধরে বলা হলেও বিগত কোনো সরকারই তাতে কর্ণপাত করেনি। এ ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণী জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে বলে আমরা মনে করি। এ ছাড়া দ্বীপজেলা ভোলায় প্রায় ১ হাজার ৪৩২ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সম্ভাব্য মজুত থাকলেও সক্ষমতা অনুসারে গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে না। সেখানকার উৎপাদিত গ্যাস বাইরে আনার জন্য এখনো পাইপলাইন স্থাপন করা হয়নি, আবার সেখানেও শিল্পায়নের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়নি। সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান প্রক্রিয়াও থমকে আছে।

জ্বালানি নীতিতে অবশ্যই জাতীয় সক্ষমতা ও দেশীয় উৎস থেকে জ্বালানি সরবরাহের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সমস্যায় পড়লে তাৎক্ষণিক সমাধানের যে টোটকা, সেখান থেকে জ্বালানি খাতকে বের করে আনতে হবে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। স্থল ও সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান, কূপ খনন, উন্নয়ন ও সরবরাহের অবকাঠামো তৈরিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এইচএসসি ও সমমান উত্তীর্ণদের জন্য ৩ কোটি টাকার স্কলারশিপ ঘোষণা
  • বিশ্বকে ১৫০ বার ধ্বংস করার মতো পারমাণবিক অস্ত্র আমাদের আছে: ট্রাম্প
  • দুই সপ্তাহের মধ্যে তেহরানে সুপেয় পানি ফুরিয়ে যেতে পারে
  • ‎নামাজরত বাবাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ, ৩ পুলিশ আহত
  • চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
  • জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন
  • বাজারে আগাম সবজি আসতে দেরি, দাম চড়া
  • দেশের প্রথম মালয়েশিয়ান ডিগ্রি ক্যাম্পাস: ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাস
  • সড়ক বিভাজকে মোটরসাইকেলের ধাক্কা, কিশোর নিহত
  • টমাহক কত দূরে আঘাত হানতে পারে, রাডারে কেন ধরা পড়ে না