ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখার ঘোষণা খামেনির, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব খারিজ
Published: 4th, June 2025 GMT
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পরিহার করা দেশের স্বার্থের বিরোধী। আজ বুধবার এক ভাষণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এটি ইরানের আত্মনির্ভরতা ও ‘আমরাই পারি’ দর্শনের পরিপন্থী।
এমন এক সময়ে খামেনির এই বক্তব্য এল, যখন ওমানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পাঁচ দফা আলোচনা শেষে ওয়াশিংটনের একটি নতুন পরমাণু চুক্তির প্রস্তাব পৌঁছেছে তেহরান। প্রস্তাবে ইরানের মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ এবং মজুত থাকা যাবতীয় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার শর্ত রাখা হয়েছে।
আজ বুধবার ইরানের ইসলামি বিপ্লবের নেতা রুহুল্লাহ খোমেনির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে আলী খামেনি বলেন, ‘ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ আমাদের পরমাণু কর্মসূচির মূল চাবিকাঠি। শত্রুরা এটিই লক্ষ্য করেছে।’
যুক্তরাষ্ট্র যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা শতভাগ নিজেদের স্বার্থের বিরোধী উল্লেখ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ‘আমেরিকার ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অহংকারী নেতারা বারবার আমাদের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধের দাবি জানান। ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করবে কি না, তা নির্ধারণ করার আপনারা কে?’
ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নতুন প্রস্তাব মেনে না নিলে ইরানের ওপর চাপ আরও বাড়ানো হবে। দ্বিতীয়বার ক্ষমতা গ্রহণের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদের মতো ইরানের ওপর আবারও ‘সর্বোচ্চ চাপ’ দেওয়ার নীতি গ্রহণ করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আলোচনায় ফল না এলে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
তীব্র অর্থনৈতিক সংকট, জ্বালানি ও পানির ঘাটতি এবং ইসরায়েলের সঙ্গে আঞ্চলিক সংঘাতে বিপর্যস্ত তেহরান মনে করছে, নতুন প্রস্তাবে তাদের বাস্তব সংকটগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে।
সম্প্রতি ফাঁস হওয়া আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) এক গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান তিন মাসের ব্যবধানে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির এ মাত্রা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার খুব কাছাকাছি উল্লেখ করে সংস্থাটি বলেছে, দেশটি ৪০৮ কেজি ইউরেনিয়াম মজুত করেছে, যা বিশ্বের কোনো পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন দেশের জন্য নজিরবিহীন।
২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করেছিল ইরান। এই চুক্তির আনুষ্ঠানিক নাম জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ), যা সংক্ষেপে ইরান পরমাণু চুক্তি নামে পরিচিত। ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম নজরদারি করার জন্য এই চুক্তি করা হয়েছিল, যাতে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে।
চুক্তির বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছিল পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু ২০১৮ সালে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন এই চুক্তি থেকে একতরফা বের হয়ে যায়। ফলে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যায়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে চুক্তিটি নবায়নের জন্য জোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু সফল হননি। গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে তেহরানের সঙ্গে নতুন পরমাণু চুক্তির চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে দেশ দুটির কর্মকর্তাদের মধ্যে ওমান ও অস্ট্রিয়ায় কয়েক দফায় অপ্রত্যক্ষ বৈঠক হয়েছে।
আরও পড়ুনইরানের উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়ামের মজুত ৪০৮ কেজি, যা নজিরবিহীন: আইএইএ৩১ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ইউর ন য় ম প রস ত ব ইউর ন য র জন য নত ন প পরম ণ
এছাড়াও পড়ুন:
‘শান্তিপূর্ণ কার্যক্রম’ থেকে বঞ্চিত হলে পারমাণবিক চুক্তি নয়: ইরান
শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যেতে না দিলে চুক্তি করবে না ইরান। পাশাপাশি দেশটি পারমাণবিক চুক্তিতে রাজি হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা চেয়েছে।
ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে চলমান আলোচনায় ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি প্রধান বিরোধের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে এ আলোচনা চলছে। আলোচনায় ইরান বলছে, তারা একটি শান্তিপূর্ণ বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচি চালাচ্ছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ইরানের এ কর্মসূচিকে চূড়ান্তসীমা বা ‘রেড লাইন’ হিসেবে বিবেচনা করছে।
সোমবার মিসরের রাজধানী কায়রোতে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসির সঙ্গে বৈঠক করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কার্যক্রম’ থেকে বঞ্চিত হলে পারমাণবিক চুক্তি করবে না তেহরান। আরাগচি বলেন, যদি লক্ষ্যই হয় ইরানকে নিজের শান্তিপূর্ণ কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত করা, তাহলে চুক্তি যে হবে না, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
আরাগচি জোর দিয়ে বলেছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ‘গোপন করার কিছু নেই’। তিনি বলেন, ‘ইরানের একটি শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি রয়েছে...আমরা যেকোনো পক্ষ বা সংস্থাকে এ নিশ্চয়তা দিতে প্রস্তুত।’
আরাগচির মন্তব্যের আগে সোমবার রাফায়েল গ্রোসি পরমাণু কর্মসূচির নিয়ে আরও স্বচ্ছ হতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানান। এমন এক সময়ে গ্রোসির এ আহ্বান এল, যখন সম্প্রতি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আইএইএর একটি গোপন প্রতিবেদন ফাঁস হয়েছে। এতে দেখা গেছে, তেহরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ জোরদার করেছে।
আইএইএর ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৭ মে পর্যন্ত ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ৪০৮ দশমিক ৬ কেজি ইউরেনিয়াম মজুত করেছে। পরমাণু অস্ত্র নেই—এমন যেকোনো দেশের ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ এ পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুত নজিরবিহীন ঘটনা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৯০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ হলেই তা পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য উপযুক্ত।
আরও পড়ুনইরানের উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়ামের মজুত ৪০৮ কেজি, যা নজিরবিহীন: আইএইএ৩১ মে ২০২৫