দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার বোমা নিয়ে জার্মানির কোলন শহরে আতঙ্কের কারণে ২০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শহরটির প্রায় অর্ধেক অংশ গতকাল বুধবার হঠাৎই স্থবির ও জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে। অবশ্য আড়াই টন ওজনের তিনটি বোমা নিষ্ক্রিয় করার পর আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লোকজন ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন।

গতকাল বুধবার সকালে কোলন শহরের ডয়ট্জ এলাকায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের তিনটি অবিস্ফোরিত বোমা পড়ে থাকার সংবাদ পাওয়া যায়। এসব বোমা নিষ্ক্রিয় করতে প্রায় ২০ হাজার মানুষকে তাৎক্ষণিক নিজ নিজ বাসা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হয়।

পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবীরা অবিরাম মাইকে এই ঘোষণা দিতে থাকলে শহরবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ১০ লাখের বেশি মানুষের কোলন শহরের ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী সময়ে এটিই সবচেয়ে বড় ধরনের সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা।

গতকাল বিকেল থেকেই বোমা নিষ্ক্রিয় করতে বিশেষজ্ঞরা অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করেন। বোমা পাওয়া কোলন শহরের ডয়ট্জ এলাকার চারপাশে প্রায় এক হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে ‘স্পারজোন’ বা চলাচল নিষিদ্ধ এলাকা তৈরি করা হয়। ওই এলাকায় বসবাসকারী সব বাসিন্দাকে তাঁদের বাড়িঘর ছেড়ে বন্ধু, আত্মীয় বা শহর কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে বলা হয়।

এসব অঞ্চলের মধ্যে ছিল কোলনের পুরোনো শহরাংশ, কয়েকটি স্কুল, হাসপাতাল, বৃদ্ধাশ্রম, ডে-কেয়ার সেন্টার এবং প্রায় ৬০টি হোটেল। দুপুরের পর শহরের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ওই এলাকায় ঘুরে ঘুরে সবাইকে সরিয়ে নিতে সাহায্য করেন। এলাকা জনশূন্য হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট কাজ শুরু করে।

এ ধরনের বড় অভিযানের কারণে কোলনের রাইন নদীর ওপর গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সেতু ও দক্ষিণ দিকের ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে শহরের যোগাযোগব্যবস্থা অনেকটা থমকে যায়। এ ছাড়া জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা টেডি টেকলেব্রহানের নির্ধারিত শো–ও বাতিল করতে হয়।

শহর কর্তৃপক্ষ বলেছে, তিনটি বোমা একসঙ্গে পাওয়ার কারণেই মানুষের জীবন রক্ষার তাগিদে অনেক লোককে সরিয়ে নিতে হয়েছে।

৮০ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলেও জার্মানিতে মাটির নিচে এখনো বহু অবিস্ফোরিত বোমা রয়ে গেছে, বিশেষ করে বড় বড় শহরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রবাহিনী লাখ লাখ বোমা ফেলেছিল। অনেক বোমা তাৎক্ষণিকভাবে বিস্ফোরিত হয়নি এবং বছরের পর বছর মাটির নিচে রয়ে গেছে। নির্মাণ কাজ বা অন্য কারণে সেগুলো আবিষ্কৃত হলে সঙ্গে সঙ্গে এলাকা খালি করে নিরাপদভাবে নিষ্ক্রিয় করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ষ ক র য় কর ন শহর শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দিয়ে উড়োজাহাজে গ্রেপ্তার ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পতন চেয়ে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাজ্যে ৪১ বছর বয়সী এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত রোববার লন্ডনের লুটন বিমানবন্দর থেকে গ্লাসগোগামী একটি ফ্লাইটে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ব্যক্তির নাম অভয় নায়েক। তিনি লন্ডনের কাছে বেডফোর্ডশায়ারের লুটন শহরের বাসিন্দা।

অভয় নায়েক ইজিজেট ফ্লাইটে হামলা ও যাত্রীদের নিরাপত্তাঝুঁকিতে ফেলার মতো আচরণ করেছেন। তিনি উড়োজাহাজে বোমা ফাটানোর হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি মাঝ আকাশে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে চিৎকার করেছিলেন, যা যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।

ওই ঘটনার একটি ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, অভয় নায়েক স্লোগান দিচ্ছেন, ‘আমেরিকার পতন হোক’, ‘ট্রাম্পের পতন হোক’। এরপরই তিনি ‘আল্লাহু আকবর’ (যার অর্থ ‘আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’) বলে স্লোগান দেন। পরে দুজন ব্যক্তি তাঁকে কাবু করে উড়োজাহাজের মেঝেতে ফেলে দেন।

ওই ব্যক্তির নাম অভয় নায়েক। তিনি কোন ধর্মের অনুসারী, সে ব্যাপারে তাৎক্ষিণক কিছু জানা যায়নি।

ওই ব্যক্তির এমন আচরণের পর পাইলটরা বাধ্য হয়ে গ্লাসগোতে জরুরি অবতরণ করেন। সেখানেই স্কটিশ পুলিশ এসে অভয় নায়েককে গ্রেপ্তার করে।

স্কটল্যান্ডের পুলিশ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘গত রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে গ্লাসগোতে পৌঁছানো ইজিজেটের একটি ফ্লাইটে এক ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন এমন খবর পেয়ে আমরা সেখানে যাই।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, ঘটনাটি এককভাবে ওই ব্যক্তির, অন্য কেউ জড়িত নন। যেসব ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়েছে, সেগুলো সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন।’

উড়োজাহাজ অবতরণের পরই অভয় নায়েককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ ও যাত্রীদের নিরাপত্তাঝুঁকিতে ফেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।

ইজিজেট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘বেপরোয়া আচরণের কারণে একজন যাত্রীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা কর্তৃপক্ষকে তদন্তে সহযোগিতা করছি।’

পাইসলি শেরিফ আদালতে হাজিরার সময় অভয় নায়েক কোনো বক্তব্য দেননি। তাঁকে বিচারিক হেফাজতে পাঠানো হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে তাঁকে আবার আদালতে হাজির করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ