নতুন টাকার সংকট, সালামিতে ভরসা পুরোনো টাকা বা এমএফএস
Published: 5th, June 2025 GMT
এবার ঈদের আগে নতুন নকশার ২০, ৫০ ও ১ হাজার টাকার নোট বাজারে ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে নতুন ছাপানো নোটের সংখ্যা এতই কম যে খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব কর্মকর্তা সেই নতুন নোটের দেখা পাননি। এবার ঈদের আগে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা নতুন নোট বাজারে ছাড়া হয়। অন্যান্যবার ঈদের আগে ১৫-২০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়া হতো। এবার কম নোট বাজারে ছাড়ার কারণে খুব বেশি মানুষ নতুন নোট হাতে পাননি।
আগামী শনিবার পালিত হবে ঈদুল আজহা। নতুন নোটে ঈদের সালামির ধারা দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত। তাই প্রতি ঈদের আগে নতুন নোটের জন্য ব্যাংকে কম বেশি ভিড় লেগেই থাকে। এবার আগ্রহী গ্রাহকেরা নতুন নোটের জন্য ব্যাংকে ভিড় করেন, তবে নতুন নোট পেয়েছেন খুব অল্পসংখ্যক মানুষ। তাই অনেকের নতুন নোটে ঈদসালামি দেওয়ার শক পূরণ হবে না। এ কারণে ঈদের সালামির জন্য এখন হয় পুরোনো নোটই ভরসা, নয়তো ডিজিটাল ঈদসালামি।
আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে নগদ টাকার ব্যবহার দিন দিন কমে যাচ্ছে। নির্দিষ্ট আয়ের মানুষেরা বেতনের অর্ধেক টাকাও এখন আর নগদ খরচ করেন না। ব্যাংকের টাকা প্রয়োজনে স্থানান্তর হয় অন্য ব্যাংকে। প্রয়োজনে ব্যাংকের টাকা যায় বিকাশ, নগদ ও রকেটের মতো মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় (এমএফএস)। এ ছাড়া এখন ব্যাংক হিসাবধারীরাও নগদ লেনদেনের বদলে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে বেশি আগ্রহী। ফলে এমএফএস ও অ্যাপ হয়ে উঠেছে ডিজিটাল সালামি দেওয়ার বড় মাধ্যম। এসব মাধ্যমে ঈদের সালামি হিসেবে যে কাউকে তাৎক্ষণিকভাবে যেকোনো অঙ্কের টাকা পাঠানো যায়।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ওয়াহিদা বেগম পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকার মিরপুরে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই নাতি-নাতনিদের ঋণের সালামি দিয়ে আসছি। এবারও তারা অপেক্ষা করবে। এ ছাড়া দুজন নাতি বিদেশে, দুজন গেছে গ্রামে ঈদ করতে। ফলে ডিজিটাল সালামি এখন আমার ভরসা। নাতি-নাতনিরা সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। তাদের ব্যাংক হিসাব ও এমএফএস হিসাব রয়েছে। ফলে সেখানেই এবার সালামি পাঠাব।’
কেবল ঈদ নয়; দেশের বড় উৎসবকে কেন্দ্র করে শুভেচ্ছাবার্তাসহ টাকা পাঠানোর সেবা চালু করে বিকাশ। প্রিয়জনকে উপহার পাঠানো আরও রঙিন ও আনন্দময় করে তুলতে ২০২১ সালে বিকাশ তাদের অ্যাপে ‘ঈদসালামি এবং ঈদ শুভেচ্ছা’ অপশন দুটি চালু করে। শুভেচ্ছা কার্ডসহ সালামি পাঠাতে বিকাশ অ্যাপ থেকে যে নম্বরে সেন্ড মানি করা হবে, তা নির্বাচন করার পরপরই নিচের অংশে ‘আপনার উদ্দেশ্য সিলেক্ট করুন’ ট্যাব দেখা যাবে। সেখানে থাকা ঈদসালামি অথবা ঈদ মোবারক অপশনগুলো থেকে যেকোনো একটি নির্বাচন করতে পারবেন। এরপর টাকার অঙ্ক লিখে পরের ধাপে গেলে রেফারেন্স অংশের নিচে ‘কার্ডের মেসেজ আপডেট করুন’ ট্যাব দেখা যাবে। বিকাশ অ্যাপে সংযুক্ত রয়েছে ‘ঈদের আনন্দ ঘরে ঘরে, সালামি দিলাম বিকাশ করে’ অথবা ‘এই ঈদ আপনার জীবনে নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি। ঈদ মোবারক’।
গ্রাহকেরা চাইলে এই মেসেজ দুটি রাখতে পারেন অথবা নিজের পছন্দমতো নতুন মেসেজ লিখে দিতে পারেন। বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাতেই মেসেজ লেখার সুযোগ রয়েছে। স্বাক্ষরের অংশে নিজের নাম বা সম্পর্কের পরিচয়, যেমন মা, চাচা, মামা, ভাই, বোন ইত্যাদি লিখে দিতে পারবেন। পরের ধাপে বিকাশ পিন দিলেই শুভেচ্ছা বার্তাসহ সেন্ড মানি করা হয়ে যাবে।
যে গ্রাহক শুভেচ্ছা বার্তা বা ঈদসালামি পেয়েছেন, তিনি তাঁর ডিভাইসের নোটিফিকেশনে একটি গিফট বক্স দেখতে পাবেন। বক্সে ক্লিক করে বিকাশ অ্যাপে ঢুকলেই সালামির পরিমাণ এবং মেসেজ দেখতে পাবেন।
পাশাপাশি রকেট, নগদসহ অন্য সেবার মাধ্যমেও যেকোনো অঙ্কের টাকা পাঠানোর মাধ্যমে ডিজিটাল সালামি দেওয়া যাবে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস পে, ব্র্যাক ব্যাংকের আস্থা, সিটি ব্যাংকের সিটিটাচসহ আরও বেশ কিছু ব্যাংকের অ্যাপ বেশ জনপ্রিয়। অ্যাপ ব্যবহার করেও গ্রাহকেরা এবার ডিজিটাল সালামি পাঠাতে পারবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নত ন ন ট ঈদস ল ম গ র হক
এছাড়াও পড়ুন:
এমএফএস-ব্যাংক আন্তলেনদেন চালু হয়েছে, শুরু করতে পারেনি বিকাশ ও নগদ
মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস), ব্যাংক ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারগুলোর (পিএসপি) মধ্যে আন্তলেনদেন চালু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় এই সেবা আজ শনিবার চালু হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় দুই এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও নগদ এই সেবা চালু করতে পারেনি। এমনকি রকেটও সেবাটি চালু করতে পারেনি। ফলে বেশির ভাগ ব্যবহারকারী এই সেবার বাইরে রয়ে গেছেন।
বিকাশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে সেবাটি চালুর জন্য। যেকোনো সময় গ্রাহকেরা সেবাটি পাবেন। অন্যদিকে নগদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সেবা চালু করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করা হয়েছিল, তাতে সাড়া মেলেনি। ফলে চালু করা যায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেবাটি চালু করতে বিকাশ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। পূর্ণাঙ্গ লাইসেন্স না থাকায় নগদকে সংযোগ দেওয়া হয়নি। অনেকেই সেবাটি চালু করেছে। আশা করছি শিগগির সবাই সেবাটি চালু করতে পারবে।’
এর আগে গত মাসের শুরুতে এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দেশে নগদ অর্থ লেনদেন কমানোর জন্য ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ অব বাংলাদেশ (এনপিএসবি) অবকাঠামো ব্যবহার করে সব ব্যাংক, এমএফএস প্রতিষ্ঠান এবং লেনদেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তলেনদেন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ ১ নভেম্বর থেকে ব্যাংক, পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো এই লেনদেন শুরু করবে।
কারা চালু করতে পেরেছেআজ থেকে কারা এই সুবিধা চালু করতে পেরেছে, তার একটি তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেখা গেছে, দেশের ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপি মিলে ১০টি প্রতিষ্ঠান এই সেবা চালু করেছে। এই তালিকায় রয়েছে ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকের এমক্যাশ, ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, রকেট ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ইসলামিক ওয়ালেট এই সেবা চালু করেছে। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকের টাকা জমা সুবিধা চালু হয়েছে। তবে এসব হিসাব থেকে টাকা পাঠানো সুবিধা চালু হয়নি। বাকি ১০টি প্রতিষ্ঠান জমা ও পাঠানো দুটো সুবিধা চালু করেছে।
বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস অ্যান্ড পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম এক লিখিত বক্তব্যে জানান, ‘বিকাশ শুরু থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের আন্তলেনদেন সেবা চালুর উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত আছে এবং সেই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে এই সেবার সর্বশেষ সংস্করণে যুক্ত হওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস, এই সুবিধা গ্রাহকদের জন্য ডিজিটাল লেনদেন আরও সহজ ও সুবিধাজনক করে তুলবে। তবে আন্তলেনদেনের কার্যকারিতা এই ব্যবস্থায় সংযুক্ত অন্য অংশীজনদের ওপরও নির্ভর করে। তাই এই মুহূর্তে আমরা শক্তিশালী অথেনটিকেশন এবং স্তরভিত্তিক (লেয়ারড) নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি, যাতে লেনদেন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় এবং এ-সংক্রান্ত কোনো বিরোধ (ডিসপিউট) দেখা দিলে তা সমাধান করা যায়। সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পর আমরা আশা করি খুব দ্রুতই গ্রাহকেরা পূর্ণাঙ্গভাবে সেবাটি ব্যবহার করতে পারবেন।’
নগদের কর্মকর্তারা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এনপিএসবির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে কয়েক দফা চিঠি দিলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। যদিও মাশুল নির্ধারণ, কারিগরি কমিটিসহ এ-সংক্রান্ত সব সেবায় নগদের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এরপরও সংযোগ না পাওয়ায় সেবাটি চালু করা যায়নি।
এদিকে রকেটের কর্মকর্তারা বলেন, ‘ছুটির দিনের কারণে এখনো সেবাটি চালু করা যায়নি। তবে আমরা প্রস্তুত আছি। আশা করছি রোববার থেকে শুরু হবে।’
খরচ কতনতুন নিয়মে ব্যাংক থেকে যেকোনো ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপিতে এক হাজার টাকা পাঠালে গ্রাহককে সর্বোচ্চ ১ টাকা ৫০ পয়সা মাশুল গুনতে হবে। তবে ব্যাংক চাইলে আগের মতো বিনা খরচে এ সেবা দিতে পারবে।
বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো এমএফএসগুলো একে অপরের পাশাপাশি ব্যাংক ও পিএসপিতে টাকা পাঠাতে পারবে। এতে এক হাজার টাকা পাঠাতে খরচ হবে সর্বোচ্চ সাড়ে আট টাকা। আর যেকোনো পিএসপি হিসাব থেকে ব্যাংক বা এমএফএসে টাকা পাঠালে প্রতি হাজারে খরচ দিতে হবে দুই টাকা।