রাত পোহালে ঈদুল আজহা। শেষে সময়ে তাই রাজধানীর হাটগুলোতে চলছে কোরবানির পশু বেচাকেনার ধুম। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে অনেকেই এসেছেন হাটে। ছোট আর মাঝারি গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এদিকে ঈদের এক দিন আগে ক্রেতার চাপে গরুর সংকট দেখা দিয়েছে গাবতলী হাটে। ছোট-মাঝারি পশু রাখার নির্ধারিত জায়গাগুলো শুক্রবার সকালেই খালি। এতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে এসে কাঙ্ক্ষিত পশু কিনতে পারছেন না অনেক ক্রেতাই। বাড়তি চাহিদার চাপ সামাল দিতে হাটে আজও দেশের নানা প্রান্ত থেকে পশু আনা হচ্ছে।
হাটে যেসব পশু রয়েছে, সেগুলোর দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে পছন্দসই গরু পেলে দুই-এক হাজার টাকা বেশি হলেও কিনে বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা। তারা জানান, এখন আর দেখাদেখির সময় নেই। পছন্দ হলে বাজেটের আশপাশের দামে কিনছেন তারা।
ব্যাপারীর বলছেন, নতুন করে পশু না এলে বিকেল নাগাদ খালি হাতে ফিরতে হবে ক্রেতাদের। শেষ মুহূর্তে এসে শুরু হয়েছে বড় গরুর বেচাবিক্রি। ৬ লাখের বেশি দামের পশু নিয়ে ক্রেতাদের আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তারা বলেছেন, বড় গরুগুলো কম দামে ছাড়লে লোকসান গুনতে হবে। তাই শেষ সময় পর্যন্ত তারা দেখতে চান।
মগবাজার থেকে গাবতলী হাটে গরু কিনতে আসা নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাজেট ৯০ হাজার। এই বাজেটে গত বছর মাঝারি সাইজের গরু কিনেছিলাম। শাহজাহানপুর হাটে এই বাজেটের গরু না পেয়ে গাবতলী হাটে এসেছি। এখানেও এসে দেখি ছোট আর মাঝারি গরু নেই।’
রামপুরা থেকে আসা শাহিনুর রহমান বলেন, ‘বাজারে বড় গরুর অভাব নেই, কিন্তু ওগুলো নেওয়ার সামর্থ্য তো সবার নেই। আমরা যারা মধ্যবিত্ত, তাদের পছন্দের গরুই এখন নেই হাটে।’
বিক্রেতারা বলছেন, বড় গরু পালন করতে অনেক খরচ পড়ে, সেই খরচ তুলতে গেলে দাম তো একটু বেশি চাইতেই হয়।
ময়মনসিংহ থেকে গরু নিয়ে আসা খামারি আবু বকর বলেন, ‘বছরের পর বছর খরচ করে বড় গরু পালন করি। এখন হাটে এনে যদি দাম না পাই, তাহলে তো লোকসান গুনতে হবে। ক্রেতারা দাম শুনেই চলে যাচ্ছেন। শেষ মুহূর্তে এসে কিছুটা লস করেই বিক্রি করতে হচ্ছে।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শত্রুতার জেরে সাত গরুকে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ, মারা গেছে ৩টি
গোপালগঞ্জে পূর্ব শত্রুতার জেরে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তিনটি গরু হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আরো চারটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ফলে দুই কৃষক পরিবারের অন্তত পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত শনিবার (১ নভেম্বর) মধ্যরাতে সদর উপজেলার সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কীভাবে গরুগুলো মারা গেছে তা খতিয়ে দেখতে নমুনা সংগ্রহ করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। পুলিশ বলছে, তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
আরো পড়ুন:
নামাজরত বাবাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ, ৩ পুলিশ আহত
গাইবান্ধায় ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা: মামলা দায়ের
এলাকাসাসী জানান, সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামের দুই ভাই মো. রাসুল গাজী ও হাসিব গাজী কৃষি কাজ করে সংসার চালান। তারা খামার করে কয়েকটি গরু লালন-পালন করছেন। শনিবার মধ্যরাত সাড়ে ১২টার দিকে গরুর গোঙানির শব্দ শুনে পাশের বাড়ির এক আত্মীয় ছুটে গিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন দুই ভাইকে। তারা স্থানীয় পশু চিকিৎসককে খবর দেন। সকাল হওয়ার আগেই তিনটি গরু মারা যায়। একই গোয়াল ঘরে থাকা একটি বড় ষাঁড়, একটি বাছুর ও অপর গোয়ালে থাকা দুটি ষাঁড় এখনো অসুস্থ।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মো. রাসুল গাজী জানান, শত্রুতা করেই খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তাদের গরুগুলোকে হত্যা করা হয়েছে। রাতেই টের পেয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেও বাঁচানো যায়নি গরুগুলো। দুই ভাইয়ের আরো চারটি গরু অসুস্থ রয়েছে। এতে তাদের অন্তত ৫-৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি জানান, এ ঘটনায় সদর থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
কারা তাদের গরু হত্যা করেছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাসুল গাজী বলেন, “ঘর থেকে বের হয়ে কয়েকজনকে দৌঁড়ে যেতে দেখেছি। তাদের চেহারা দেখতে পারিনি। ফলে কাউকে চিনতে পারিনি।”
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হাসিব গাজী বলেন, “কারো সঙ্গে আমাদের শত্রুতা থাকতেই পারে। এই অবলা পশুগুলো কার কী ক্ষতি করেছে। কোন অপরাধে এদের হত্যা করা হলো। আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
এলাকাবাসী মো. ইমদাদ শেখ বলেন, “গত শনিবার রাতে বৃষ্টি হয়। এই সুযোগে গরুগুলোকে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা চাই দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।”
গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোবিন্দ চন্দ্র সর্দার বলেন, “সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামে কয়েকটি গরুকে বিষ খাওয়ানো হয় এমন খবর পেয়ে সকালে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান। তিনি অসুস্থ গরুগুলোকে চিকিৎসা দেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পয়জনজনিত কারণেই গরুগুলো মারা গেছে। মারা যাওয়া গরুর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই গরু তিনটির মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।”
গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে তদন্ত শুরু করি। মারা যাওয়া গোরুগুলোর নমুনা সংগ্রহ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/বাদল/মাসুদ