গাজায় ঈদের দ্বিতীয় দিন ইসরায়েলের হামলায় নিহত ৭২
Published: 8th, June 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনেও গাজা জুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েল। শনিবার (৭ জুন) ঈদের দ্বিতীয় দিন দফায় দফায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৭২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরো প্রায় ১০০ জন হয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু। পাশাপাশি খাদ্য বিতরণ কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)।
স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনে গাজা শহরের সাবরা এলাকায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের দুটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ছয় শিশুসহ কমপক্ষে ১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৫০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
উদ্ধারকারী দল আশঙ্কা করছে, নিহতের সংখ্যা ৩০ জনেরও বেশি হতে পারে, কারণ এখনও অনেক মানুষ নিখোঁজ এবং সম্ভবত ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে।
আরো পড়ুন:
ঈদের দিনেও গাজায় নিহত ৪২, খাবার বিতরণ বন্ধ
গাজায় ঈদের দিনেও ইসরায়েলের হামলা, নিহত ২০
দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের পশ্চিমে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্র লক্ষ্য করে ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে একই পরিবারের চার সদস্যসহ ১২ জন নিহত এবং ৪০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
গাজা শহরের পশ্চিমে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরো সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজার উত্তরাঞ্চলের আল-সাফতাওয়ি এলাকায় বেসামরিকদের একটি দলকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি কামানের গোলাবর্ষণে দুই ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের পশ্চিমে আবু শ্রেখ এলাকায় একটি বেসামরিক সমাবেশ লক্ষ্য করে বিমান হামলায় আরো তিনজন নিহত হয়েছেন।
একই এলাকার আল-মুজাইদা জ্বালানি স্টেশনের কাছে একটি বাড়িতে পৃথক হামলায় এক শিশুসহ আরো তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
নাসের হাসপাতালের একজন মেডিকেল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খান ইউনিসের পূর্বে বানি সুহেলা শহরে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন।
খান ইউনিসের অন্যত্র, আল-আমাল পাড়ায় পৃথক ড্রোন হামলায় একজন নিহত এবং একজন আহত হয়েছেন।
চিকিৎসা সূত্র আনাদোলুকে জানিয়েছে, জাবালিয়া আল-নাজলা এলাকায় বেসামরিকদের একটি দলকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলায় আরো আটজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
একই সূত্র জানিয়েছে, জাবালিয়ার আল-ফালুজা এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় আরো দুজন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় চিকিৎসা সূত্রের তথ্যানুযায়ী, গাজা শহরের পূর্বে আল-তুফাহ পাড়ায় বেসামরিক লোকদের একটি দলকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় পাঁচজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহতে আল-দুররা স্টেডিয়ামের কাছে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় আরো দুজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
আলাদাভাবে, রাফাহর পশ্চিমে একটি মার্কিন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ছয়জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনি সূত্রের ভিত্তিতে আনাদোলুর এক পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৭ মে থেকে রাফাহতে চালু হওয়া বিতর্কিত মার্কিন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে মানবিক সাহায্য পেতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত ফিলিস্তিনির মোট সংখ্যা ১১৫ জনে দাঁড়িয়েছে, ৫৮০ জনেরও বেশি আহত এবং নয়জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
গাজায় শুক্রবার (৬ জুন), ঈদুল আজহার প্রথম দিনে ইসরায়েলি বিমান হামলা ও গোলাগুলিতে ৩৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
মুসলিম ক্যালেন্ডার পদ্ধতিতে বছরে দুটি ঈদ (প্রধান মুসলিম ছুটির দিন) পালন করা হয়। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এটি গাজাবাসীদের জন্য চতুর্থ ‘নিরানন্দের’ ঈদ। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যামূলক যুদ্ধ শুরু করে, যার ফলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৪ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং গাজা প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল জন ফ ল স ত ন ইসর য় ল ঈদ র দ এল ক য় ন ন হত ইসর য ব তরণ
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ