আমার বাবা মা দুইজনই সোনালি ব্যাংকে চাকরি করতেন। তাদের চাকরিসূত্রে বিভিন্ন জেলায়, বিভিন্ন সময়ে থাকতে হয়েছে। দুইজনেরই একই জায়গায় পোস্টিং হতো। তো দেখা যেত আমরা এক সময় এক জায়গায় থাকতাম কিন্তু ঈদের সময় দাদাবাড়ি নওগাঁতে ঈদ করতে আসতাম। তখন কমিউনিকেশন এতো ভালো ছিল না। যখন ঈদে বাড়ি যেতাম এমনও হয়েছে আঠারো ঘণ্টা, বিশ ঘণ্টা ট্রেনে ভ্রমণ করতে হতো। তো এই যে ভ্রমণ, অনেক আনন্দের ছিল। ট্রেনে সবাই মিলে  ঘুরছি, খাচ্ছি, আর ট্রেন যাচ্ছে- আমাদের মনে আনন্দ থাকতো, অপেক্ষা থাকতো। কখন পথ শেষ হবো, কখন বাড়ি যাবো; কখন সবার সাথে দেখা হবে। ঈদের ওই কয়টা দিন জীবনের অন্যদিনগুলোর থেকে আলাদা হয়ে উঠতো। আনন্দ, হৈ, হুল্লোড় সবকিছুতে পরিপূর্ণ হয়ে  উঠতো। 

আমরা দাদা বাড়িতে যেতাম। পরদিন হয়তো দাদা, বাবা, চাচাদের সঙ্গে গরু কিনতে যেতাম। সেই গরুর সঙ্গে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরতাম। কোরবানির জন্য কেনা গরুটিকে খাওয়ানো ছিল আরেকটি আনন্দের কাজ। কিন্তু এই কাজটি করতে করতে গরুটির প্রতি মায়া জন্মে যেত। তারপর গরুটিকে কোরবানি করা হলে ভীষণ মন খারাপ হয়ে যেত। ছোটবেলায় খুব কান্নাকাটি করতাম, কোরবানি করতে দিতেই চাইতাম না। মন খারাপ থাকতো। তারপর বাড়ির বড়রা বুঝাতেন। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতাম।

নওগাঁ শহরেই আমার দাদাবাড়ি। সব চাচা, ফুফুরা ঈদ করতে আসতো।  এমনও দেখা যেত যে, সব মেম্বার মিলে প্রায় ৭০জন হযে গেছে। ঘরের ভেতরে আর বাড়ির টানা বারান্দায় বসে গল্প, আড্ডা এমনকি ঘুমানোর ব্যবস্থাও হতো।

আরো পড়ুন:

নিজেকে দীপিকার প্রেমিক দাবি করে আলোচনায় মুজম্মেল

ঈদের তৃতীয় দিন ছোট পর্দার নাটক-টেলিফিল্ম

ঈদে সবচেয়ে মজার হচ্ছে, আমরা কাজিনেরা সবাই মিলে ছোট ছোট আট দশজন ছিলাম। আমরা ঈদের দিন আমরা একটা রিকশা ভাড়া করতাম এবং ওই রিকশায় আট থেকে দশজন উঠতাম। আমার কাছে খুব বিষ্ময় লাগে যে, একটি রিকশায় আট, দশজন কীভাবে এটে যেত!

দাদা বাড়িতে শেষ ঈদ করেছি ৯৮ সালের দিকে। বাবা মা রাজশাহীতে সেটেল হয়েছিলেন। বাবা মারা গেছেন আর চৌদ্দ বছর হলো। চাচারাও অনেকেই নেই। ভাই-বোনেরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বাড়ি যাওয়ার উপলক্ষ্যগুলোই শেষ  হয়ে গেছে। কিন্তু যেই যে দীরঘ সময় ধরে দাদাবাড়িতে যেতাম, সেই যে অপেক্ষা ছিল; সেই আনন্দটুকু মিস করি। ভীষণ মিস করি।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন টক ঈদ স ম ত আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

গরুর সঙ্গে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরতাম

আমার বাবা মা দুইজনই সোনালি ব্যাংকে চাকরি করতেন। তাদের চাকরিসূত্রে বিভিন্ন জেলায়, বিভিন্ন সময়ে থাকতে হয়েছে। দুইজনেরই একই জায়গায় পোস্টিং হতো। তো দেখা যেত আমরা এক সময় এক জায়গায় থাকতাম কিন্তু ঈদের সময় দাদাবাড়ি নওগাঁতে ঈদ করতে আসতাম। তখন কমিউনিকেশন এতো ভালো ছিল না। যখন ঈদে বাড়ি যেতাম এমনও হয়েছে আঠারো ঘণ্টা, বিশ ঘণ্টা ট্রেনে ভ্রমণ করতে হতো। তো এই যে ভ্রমণ, অনেক আনন্দের ছিল। ট্রেনে সবাই মিলে  ঘুরছি, খাচ্ছি, আর ট্রেন যাচ্ছে- আমাদের মনে আনন্দ থাকতো, অপেক্ষা থাকতো। কখন পথ শেষ হবো, কখন বাড়ি যাবো; কখন সবার সাথে দেখা হবে। ঈদের ওই কয়টা দিন জীবনের অন্যদিনগুলোর থেকে আলাদা হয়ে উঠতো। আনন্দ, হৈ, হুল্লোড় সবকিছুতে পরিপূর্ণ হয়ে  উঠতো। 

আমরা দাদা বাড়িতে যেতাম। পরদিন হয়তো দাদা, বাবা, চাচাদের সঙ্গে গরু কিনতে যেতাম। সেই গরুর সঙ্গে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরতাম। কোরবানির জন্য কেনা গরুটিকে খাওয়ানো ছিল আরেকটি আনন্দের কাজ। কিন্তু এই কাজটি করতে করতে গরুটির প্রতি মায়া জন্মে যেত। তারপর গরুটিকে কোরবানি করা হলে ভীষণ মন খারাপ হয়ে যেত। ছোটবেলায় খুব কান্নাকাটি করতাম, কোরবানি করতে দিতেই চাইতাম না। মন খারাপ থাকতো। তারপর বাড়ির বড়রা বুঝাতেন। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতাম।

নওগাঁ শহরেই আমার দাদাবাড়ি। সব চাচা, ফুফুরা ঈদ করতে আসতো।  এমনও দেখা যেত যে, সব মেম্বার মিলে প্রায় ৭০জন হযে গেছে। ঘরের ভেতরে আর বাড়ির টানা বারান্দায় বসে গল্প, আড্ডা এমনকি ঘুমানোর ব্যবস্থাও হতো।

আরো পড়ুন:

নিজেকে দীপিকার প্রেমিক দাবি করে আলোচনায় মুজম্মেল

ঈদের তৃতীয় দিন ছোট পর্দার নাটক-টেলিফিল্ম

ঈদে সবচেয়ে মজার হচ্ছে, আমরা কাজিনেরা সবাই মিলে ছোট ছোট আট দশজন ছিলাম। আমরা ঈদের দিন আমরা একটা রিকশা ভাড়া করতাম এবং ওই রিকশায় আট থেকে দশজন উঠতাম। আমার কাছে খুব বিষ্ময় লাগে যে, একটি রিকশায় আট, দশজন কীভাবে এটে যেত!

দাদা বাড়িতে শেষ ঈদ করেছি ৯৮ সালের দিকে। বাবা মা রাজশাহীতে সেটেল হয়েছিলেন। বাবা মারা গেছেন আর চৌদ্দ বছর হলো। চাচারাও অনেকেই নেই। ভাই-বোনেরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বাড়ি যাওয়ার উপলক্ষ্যগুলোই শেষ  হয়ে গেছে। কিন্তু যেই যে দীরঘ সময় ধরে দাদাবাড়িতে যেতাম, সেই যে অপেক্ষা ছিল; সেই আনন্দটুকু মিস করি। ভীষণ মিস করি।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ