সামাজিক সুরক্ষা খাতের বরাদ্দ থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে মোট বরাদ্দের প্রায় ৪৫ শতাংশ রাখা হয়েছে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন ও কৃষি ভর্তুকিতে। দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতিবিদরা অভিযোগ করে আসছিলেন, সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখাতেই এর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত না হলেও এ তিন খাতের বরাদ্দকেও দেখানো হয়েছে।

সংস্কারের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার সামাজিক নিরাপত্তা খাতে এক ধাক্কায় কর্মসূচির সংখ্যা ৪৫টি কমিয়ে ফেলেছে। আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সংখ্যা ১৪০ থেকে কমিয়ে ৯৫-এ নামিয়ে আনা হচ্ছে। বিগত সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সামাজিক সুরক্ষার আওতায় কয়েকটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। প্রস্তাবিত বাজেটে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের আওতা থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এবং খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়েছ। আগে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় মোট ২৭টি কর্মসূচির মাধ্যমে এ সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা হতো। প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু অসামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি বাদ ও একই ধরনের কর্মসূচি একীভূত করে এ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২২টি কর্মসূচির প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায়ও কর্মসূচি কাটছাঁট করা হচ্ছে। 

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সঞ্চয়পত্রের সুদ থেকে শুরু করে পেনশন বাবদ বরাদ্দকেও সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ হিসেবে দেখানো হতো। অন্তর্বর্তী সরকার নতুন বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদকে এ খাত থেকে বাদ দিচ্ছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৮ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যাপ্তি ও গুরুত্ব বিবেচনায় আগামী অর্থবছরে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা, যা মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অথচ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতে, একটি দেশের সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ হওয়া উচিত অন্তত জিডিপির ৫ শতাংশ।

সামাজিক সুরক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়া সত্ত্বেও প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের (দশম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড) পেনশন বাবদ ৩৫ হাজার ২৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ এ খাতেই দেখানো হয়েছে। এমনকি কৃষি ভর্তুকির ১৭ হাজার কোটি টাকাও এ খাতে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ এ দুই খাতেই রয়েছে মোট বরাদ্দের ৪৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ দেখানো হয়েছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এ বরাদ্দ কমিয়ে ১ লাখ ২ হাজার ১২৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। 

আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর চলমান কয়েকটি কর্মসূচির সুবিধাভোগী ও ভাতার পরিমাণ ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগী ৬০ লাখ ১ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৬১ লাখ করা হচ্ছে। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার জন বাড়িয়ে করা হচ্ছে ২৯ লাখ। একইভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষা বৃত্তির সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৯৭ হাজার, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী খাতে সুবিধাভোগী ৯৪ হাজার, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের সুবিধাভোগী ২ লাখ এবং মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগী ১ লাখ ১৬ হাজার বাড়ানো হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বরাদ্দ কমানোও হয়েছে। 

প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনায় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, বহুদিন ধরে অর্থনীতিবিদরা পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ এবং কৃষি ভর্তুকি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করে আসছিলেন। প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাত থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদ বাদ দেওয়া হলেও পেনশন ও কৃষি ভর্তুকির একটা বড় বরাদ্দকে এ খাতেই দেখানো হয়েছে। 

জানতে চাইলে গতকাল সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড.

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সমকালকে বলেন, সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে সরকার দীর্ঘদিনের কিছু সমস্যা তুলে ধরার চেষ্টা করেছে, এটা ইতিবাচক। তবে এ উদ্যোগ পর্যাপ্ত নয়। কিছু ক্ষেত্রে মাসিক ভাতার হার ৫০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানোর পরও মাসিক ৬০০-৭০০ টাকা দেওয়া হলে পাঁচজনের একটি পরিবারের শুধু চালও এক সপ্তাহের বেশি যাবে না। তাই তারা প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু কর্মসূচিতে ভাতার অন্তত ২ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছে। পরীক্ষামূলক হলেও আগামী বাজেটেই এটি করা যেতে পারে। কারণ সরকারের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত একটু বেশি সুরক্ষা দিয়ে উপকারভোগীদের স্বাবলম্বী করে তোলা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রস ত ব ত ব জ ট স ম জ ক স রক ষ র র বর দ দ র আওত য় ভর ত ক সরক র প নশন

এছাড়াও পড়ুন:

পণ্য রপ্তানিতে বিলিয়ন ডলারের কাছে ইয়াংওয়ান, অর্ধবিলিয়ন ছাড়িয়ে হা-মীম, মণ্ডল ও ডিবিএল

বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানিতে শীর্ষ অবস্থানটি দক্ষিণ কোরীয় ব্যবসায়ী কিহাক সাংয়ের মালিকানাধীন ইয়াংওয়ান করপোরেশনের। এই তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশীয় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদের মালিকানাধীন হা-মীম গ্রুপ।

ইয়াংওয়ান ও হা-মীম ছাড়াও রপ্তানিতে সেরা দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা বাকি আট শিল্প গ্রুপ হচ্ছে মণ্ডল গ্রুপ, ডিবিএল গ্রুপ, অনন্ত, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ, পলমল গ্রুপ, প্যাসিফিক জিনস গ্রুপ ও মাইক্রো ফাইবার গ্রুপ।

সেরা দশে থাকা নয়টি শিল্প গ্রুপের রপ্তানির ৯০ থেকে ১০০ শতাংশই তৈরি পোশাক। এই তালিকায় ব্যতিক্রম শুধু প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য থেকে শুরু করে জুতা, আসবাব, প্লাস্টিক ও হালকা প্রকৌশল পণ্য—প্রায় সবই আছে শিল্প গ্রুপটির রপ্তানির তালিকায়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রপ্তানি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে প্রথম আলো বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের শীর্ষ ১০ শিল্পগোষ্ঠীর এই তালিকা তৈরি করেছে। এনবিআরের পরিসংখ্যান থেকে স্থানীয় বা প্রচ্ছন্ন রপ্তানি ও নমুনা রপ্তানি বাদ দিয়ে প্রকৃত রপ্তানির হিসাব নেওয়া হয়েছে।

এনবিআরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশ থেকে মোট ৪৬ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৬৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষ দশ গ্রুপের সম্মিলিত রপ্তানির পরিমাণ ৫ দশমিক ২৫ বিলিয়ন বা ৫২৫ কোটি মার্কিন ডলার, যা মোট রপ্তানির ১১ শতাংশ।

গত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক শিল্পগোষ্ঠী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পণ্য রপ্তানিতে বিলিয়ন ডলারের কাছে ইয়াংওয়ান, অর্ধবিলিয়ন ছাড়িয়ে হা-মীম, মণ্ডল ও ডিবিএল
  • টানা তিন মাস কমল দেশের পণ্য রপ্তানি
  • বেসরকারি ঋণ তলানিতে, তবে ঋণপত্র খোলায় গতি
  • টানা দুই মাস আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে
  • উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি প্রোগ্রাম, জেএসসি ছাড়াও ভর্তি
  • তিন মাসে গৃহকর আদায় কমেছে ৩০ কোটি টাকা
  • সঞ্চয়পত্র কেনার পর যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন
  • জুলাই–সেপ্টেম্বরে ঋণছাড়ে এগিয়ে বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়া, কোনো অর্থ দেয়নি চীন