ঝুট কাপড়ে শাহীনের সঙ্গে ভাগ্যবদল ৭০ নারীর
Published: 12th, June 2025 GMT
বদলগাছী উপজেলার ভান্ডারপুর গ্রামের যুবক শাহীন হোসেন। পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে ১২টি মেশিন দিয়ে শুরু করেন পাপোশ তৈরি। কারখানার নাম দেন ‘বিআরবি কার্পেট হাউস’। এরপর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নিজের ভাগ্যের পরিবর্তনের পাশাপাশি কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন অন্তত ৭০ নারীর।
সীমিত মূলধনে গার্মেন্টস থেকে সংগ্রহ করা ঝুট কাপড় দিয়ে হাতে তৈরি পাপোশ বানানো শুরু করেন শাহীন। তাঁর তৈরি পাপোশের চাহিদা বাড়তে থাকে। সরবরাহ শুরু করেন দেশের বিভিন্ন জেলায়। বাড়ানো হয় উৎপাদন। গ্রামের দরিদ্র নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। বর্তমানে তাঁর তত্ত্বাবধানে বাড়িতে বসে কাজ করছেন ৭০ জন নারী। প্রতি মাসে গড়ে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন তারা।
শাহীন হোসেনের কারখানায় রয়েছে ১২০টি মেশিন। পাপোশ তৈরির প্রধান কাঁচামাল (ঝুট কাপড় ও উলের নানা রঙের সুতা) আনা হয় বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা থেকে। প্রতি কেজি ঝুট কাপড় ৩০ টাকা, উলের সুতা ৮০ টাকা এবং টানা সুতা ১৫০ টাকা দরে কেনা হয়। এসব উপকরণ থেকে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে দুই হাজার পিস পাপোশ। চাহিদা থাকায় পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। মাস শেষে মোটা অঙ্কের লাভ থাকলেও গত তিন মাসে তাতে টান পড়েছে। ঝুট কাপড় ও সুতার দাম প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় লাভের অঙ্ক কিছুটা কমেছে।
শাহীন হোসেন বলেন, ঝুট আগে ফ্যাক্টরিতে আবর্জনা হিসেবে ফেলে রাখা হতো। এতে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হতো। সেই ঝুট থেকে পাপোশ তৈরি করছি। বিক্রির জন্যও কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। প্রতি সপ্তাহে কারখানায় এসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পাপোশ কিনে নিয়ে যায়।
কারখানার শ্রমিক মৌসুমী বলেন, ‘বাড়ির কাজের পাশাপাশি এখানে কাজ করছি। মজুরি দিয়ে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, নিজের হাতখরচ রেখে স্বামীর হাতেও কিছু টাকা দিতে পারছি। এতে সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।’
বিসিক জেলা কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন বলেন, ‘শাহীনসহ অন্য উদ্যোক্তারা আবেদন করলে যাচাই-বাছাই করে তাদের ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া কেউ ব্যবসা ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষণসহ পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতে চাইলেও সহযোগিতা করব।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নওগ
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদপুরে জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা, হাসপাতাল বন্ধ
চাঁদপুর পৌর কবরস্থানে নবজাতক দাফনের সময় নড়ে ওঠা এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় শহরের তালতলা দি ইউনাইটেড হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ফারুক হোসেন গাজী (৪৫)। এই ঘটনায় আগামী দুই দিনের মধ্যে রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন হাসপাতালটিতে নানা অবৈধ কার্যক্রম চলে আসছে। ওই নবজাতকের জন্মও হয় এই হাসপতালে। জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা করার ভিডিও ভাইরাল হলে বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নবজাতককে কবরস্থানে নিয়ে আসা ওয়ার্ড বয় ফারুক গাজীকে গ্রেপ্তার করে।
এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন পৌর কবর স্থানের কেয়ারটেকার মো. শাহজাহান মিয়াজী।
এদিকে দি ইউনাইটেড হাসপাতালে এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি বলেন, “হাসপাতালে এসে ব্যবস্থাপনায় জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেও কোন সাড়া মিলেনি। চিকিৎসক নেই, হাসপাতালের প্যাথলজি ও ওটির সঠিক পরিবেশ নেই। একই সাথে পোস্ট অপারেটিভ রোগীর জন্য কোন সুব্যবস্থা নেই এবং হাসপাতালের কাগজপত্রও নবায়ন নেই।”
তিনি আরো বলেন, “প্রাথমিকভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং ওটি, প্যাথলজি ও সংশ্লিষ্ট কক্ষ সীলগালা করা হয়েছে। একই সাথে রোগীদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্য স্থানে সেবার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের অভিযানে পরিচালিত কার্যক্রম সিভিল সার্জন বরাবর প্রদান করা হবে। সিভিল সার্জন হাসপাতালের নিবন্ধন বাতিলসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।”
এ ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল হাসান ফয়সাল, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান। অভিযানে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ সহযোগিতা করেন।
অপরদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত শেষে হাসপাতালের ড্রাগ সনদসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরীক্ষা করে দেখেন জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান।
ঢাকা/অমরেশ/এস