ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যেদিকেই তাকান, সেখানেই বিপদ ঘনিয়ে আসছে বলে মনে হচ্ছে।

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে নেতানিয়াহু সরকারের সমালোচনাও বেড়ে চলেছে। আন্তর্জাতিক নেতাদের পাশাপাশি সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীদের কাছ থেকেও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আসছে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েল ক্রমেই বেশি একঘরে হয়ে পড়ছে; কারণ, গাজায় দেশটির চাপিয়ে দেওয়া দুর্ভিক্ষের ছবি বিশ্ব গণমাধ্যমে ছেয়ে গেছে।

দেশের ভেতরও নেতানিয়াহুকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, তিনি শুধু নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে এ যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন।

নেতানিয়াহুকে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এতটা চাপে আগে কখনো দেখা যায়নি। তিনি এখন ইসরায়েলিদের মধ্যে অত্যন্ত অপ্রিয়, আর এই মোহভঙ্গ দিনে দিনে বাড়ছে।

আইনি দিক থেকে, দুর্নীতির মামলার বিচারে প্রসিকিউশন পক্ষ নেতানিয়াহুর জেরা শুরু করেছে। আর রাজনৈতিকভাবে, তাঁর জোট সরকার যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

নেতানিয়াহুকে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এতটা চাপে আগে কখনো দেখা যায়নি। তবে এটি কি সত্যিই ইসরায়েলের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রীর শেষ সময়? উঠেছে সেই প্রশ্ন। এর জবাব খুঁজে দেখা যাক—

নেতানিয়াহু এখন ইসরায়েলিদের মধ্যে অত্যন্ত অপ্রিয়, আর এই মোহভঙ্গ দিনে দিনে বাড়ছে।

নেতানিয়াহু ইসরায়েলিদের কাছে কতটা অজনপ্রিয়?

খুবই। এ অজনপ্রিয়তা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বহুদিন ধরেই অভিযোগ যে তিনি গাজায় যুদ্ধকে নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছেন। গত মার্চে ইসরায়েল হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে দিলে ও গাজায় আটক জিম্মিদের আরও ঝুঁকিতে ফেললে এ অভিযোগ নতুন করে জোর পায়।

গত মাসের শেষ দিকে ‘চ্যানেল ১২’–এর এক জরিপে দেখা যায়, বেশির ভাগ ইসরায়েলি মনে করেন, নেতানিয়াহু জিম্মিদের ফেরত আনার চেয়ে ক্ষমতা ধরে রাখাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

ইসরায়েলের অধিকাংশ বিক্ষোভ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় আটক হওয়া জিম্মিদের মুক্তির দাবিকে কেন্দ্র করে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার ফলে জিম্মিদের জীবনের ঝুঁকি যে বাড়ছে, সেটিও এ বিক্ষোভের আরেক কারণ।

অনেকেই বলছেন, নেতানিয়াহুর সময় শেষ…এ কথা বহু বছর ধরে শোনা যাচ্ছে। আর উনি এখনো টিকে আছেন…কিন্তু আমি আর কোনো জাদু কৌশল দেখতে পাচ্ছি না, যা তাঁকে টিকিয়ে রাখবেমিচেল বারাক, নেতানিয়াহুর সাবেক সহযোগী

তবে সাম্প্রতিক সময়ে একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যক ইসরায়েলি গাজার মানুষের ওপর তাঁদের সরকারের চাপিয়ে দেওয়া দুর্ভোগের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

দেশের একদল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গাজার ধ্বংসযজ্ঞের নিন্দা জানিয়ে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি, প্রতি শনিবার রাতে তেল আবিবে যে বড় পরিসরে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে, সেখানে অনেকেই ফিলিস্তিনি শিশুদের আরও বেশি ছবি তুলে ধরছেন।

এমনকি সেনাবাহিনীর ভেতরও গাজা যুদ্ধ নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে।

যুদ্ধ করতে রিজার্ভ সেনাদের অস্বীকৃতি জানানোর খবর প্রকাশিত হওয়ার পর, বিভিন্ন বিভাগের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া ইসরায়েলিদের মুক্তির দাবিও জানান তাঁরা। তেল আবিব, ইসরায়েল, ২৪ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক সরক র র ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

কাহালুর জামাই মেলায় মানুষের ঢল

বগুড়ার কাহালু উপজেলায় দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার পৌর এলাকার পাল্লাপাড়া গ্রাম উন্নয়ন কমিটির আয়োজনে কাহালু সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ আয়োজন করা হয়। মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল ঐতিহ্যবাহী লাঠি ও পাতা খেলা। শিশু-কিশোরদের জন্য ছিল নাগরদোলা ও নৌকাদোল।

মেলা উপলক্ষে নতুন জামাই ও আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ জানানো হয় আশপাশের কয়েকটি গ্রামে। বাড়িতে বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নের ধুম পড়ে। এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বেড়াতে আসেন মেয়েজামাই। তারা একসঙ্গে কেনাকেটা করেন। বাঁশ, মাটি ও প্লাস্টিকের তৈরি খেলনার পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতা। ছিল নারীদের প্রসাধনীর দোকানও।

এদিন অতিথি আপ্যায়নে মিষ্টির দোকানগুলোয় ক্রেতার উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। হরেক রকমের মিষ্টি তৈরি করে বিক্রি করছেন দোকানি। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, তালের শাঁসসহ বিভিন্ন ফল বিক্রি করতে দেখা যায়। চটপটি, বারোভাজা ও ফুসকার দোকানেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

এ মেলা ঘিরে আশপাশের এলাকায় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। শিশু-কিশোরদের বাজানো বাঁশির শব্দ ছিল পুরো এলাকায়। মেলায় কথা হয় পাল্লাপাড়া গ্রামের জামাই মোরশেদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এক বছর আগে বিয়ে করেছেন এলাকায়। কয়েকদিন আগে ঈদের দাওয়াতে এসেছিলেন শ্বশুরবাড়ি। এদিন আসেন জামাই মেলা উপলক্ষে।

মেলায় সকালে মাছ ও মাংসের দোকান বসে। বিকেলে ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করেই মানুষের ঢল নামে। শিশু-কিশোরদের হাত ধরে মেলায় ঘুরতে আসেন অভিভাবকসহ স্বজনরা। শিশুদের বায়না মেটাতে হিমশিম খেতে হয় অনেককে।

আয়োজকদের অন্যতম সাবেক কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক বলেন, ৩৫ বছর থেকে এ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এলাকার জামাইদের দাওয়াত করা হয় বলে এটি ‘জামাই মেলা’ হিসেবে পরিচিত। এ মেলা এখন এলাকার ঐতিহ্য। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ