কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে গতকাল বুধবার রাতে পৃথক ঘটনায় দুই নারী খুন হয়েছেন। টেকনাফে এক কিশোরের ছুরিকাঘাতে রাজিয়া বেগম (৩৩) নামের এক নারী নিহত হন। আর উখিয়ায় পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী আয়েশা খাতুনকে (২৫) জবাই করে হত্যা করেন স্বামী ছৈয়দ আলম (২৭)। দুটি ঘটনায় অভিযুক্তদের আটক করেছে পুলিশ।

টেকনাফের ঘটনাটি ঘটে গতকাল রাত দেড়টার দিকে সদর ইউনিয়নের ছোট হাবিরপাড়ায়।  টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রাজিয়া বেগম স্থানীয় শফিকের চায়ের দোকানে কর্মরত ছিলেন। তাঁর কিশোর ছেলের সঙ্গে প্রতিবেশী আরেক কিশোরের ক্যারম খেলা নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। খবর পেয়ে রাজিয়া বেগম সেখানে গিয়ে কিশোরদের বকাঝকা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই কিশোর কোমরে থাকা ছুরি দিয়ে রাজিয়াকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।

আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন রাজিয়াকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। ওসি বলেন, অভিযুক্ত কিশোরকে আটক করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটিও। কিশোর অপরাধী হওয়ায় তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

অন্যদিকে, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উখিয়ার কুতুপালং ২-ওয়েস্ট নম্বর রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের ডি-১২ ব্লকে আয়েশা খাতুনকে জবাই করে হত্যা করা হয়। ওসি মুহাম্মদ আরিফ হোছাইন জানান, দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ চলছিল আয়েশা খাতুন ও তাঁর স্বামী ছৈয়দ আলমের মধ্যে। বুধবার সন্ধ্যায়ও তাঁদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে ছৈয়দ আলম ধারালো অস্ত্র দিয়ে আয়েশাকে জবাই করে পালিয়ে যান।

পরে খবর পেয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আয়েশার মৃতদেহ উদ্ধার করে। রাত ১০টার দিকে অভিযান চালিয়ে ছৈয়দ আলমকে আটক করা হয়। তিনি জামাল হোছাইনের ছেলে।

পুলিশ জানায়, দুই নারীর লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। পৃথক দুটি ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ