মামলা যাচ্ছে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে
Published: 14th, June 2025 GMT
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ ফৌজদারি অপরাধের বিভিন্ন মামলা বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হচ্ছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ ধরনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ওই সব ট্রাইব্যুনালের আইন কর্মকর্তা ও বিচার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে এ তথ্য অবহিত
করা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। গণঅভ্যুত্থানের সময় হতাহতের ঘটনায় ইতোমধ্যে সারাদেশে বিভিন্ন থানা ও আদালতে প্রায় ১ হাজার ৬০০ মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয় শতাধিক হত্যা মামলা। এসব মামলার অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা ২ লাখ ৩৮ হাজার। মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা, পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা আসামি হিসেবে রয়েছেন। মামলার ৯ মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত কোনোটিরই তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিলের পর স্পর্শকাতর মামলাগুলো দ্রুত বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন একাধিক আইন কর্মকর্তা।
অনেক গুরুতর অপরাধের মামলা নিষ্পত্তি করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। দুর্ধর্ষ ও দাগি অপরাধীরা আইনের ফাঁকফোকর ও বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রতার সুযোগে জামিনে বের হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে এ সব অপরাধীকে নিয়ন্ত্রণ ও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন গুরুতর অপরাধ-সংক্রান্ত মামলার বিচারকাজ দ্রুত শেষ করা, সন্ত্রাস দমন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ করে খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, বিস্ফোরক, অবৈধ অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য-সংক্রান্ত অপরাধের বিচার দ্রুত শেষ করতে ২০০২ সালে সরকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন পাস করে। বর্তমানে ঢাকায় চারটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। এ ছাড়া রংপুর ও ময়মনসিংহ ছাড়া ৫টি বিভাগীয় শহরে ৫টি ট্রাইব্যুনাল রয়েছে।
মামলাশূন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল
প্রায় এক বছর ধরেই মামলাশূন্য হয়ে পড়েছে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালগুলোতে। নিজস্ব মামলা না থাকায় অন্যান্য বদলি (সেশন) মামলা দিয়ে সচল রাখা হচ্ছে এসব ট্রাইব্যুনালের নিয়মিত বিচারকাজ। ফলে ২৩ বছর আগে যে উদ্দেশ্য নিয়ে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল, সেটি এখন আর সেভাবে নেই। সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, চুরি ও মাদকের মতো মামলা পাঠিয়ে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের ‘বিশেষত্ব’ নষ্ট করা হয়েছে। এতে ধীরে ধীরে ট্রাইব্যুনাল তার নিজস্ব মর্যাদা হারাচ্ছে।
স্পর্শকাতর ও চাঞ্চল্যকর মামলা বাছাইয়ের পর দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা পাঠানোর বিধান হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সে ধারাবাহিকতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল থেকে আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর অনেক মামলা এই ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে এসব ট্রাইব্যুনালে মামলা পাঠানো বন্ধ রয়েছে। মনিটরিং সেলের কার্যক্রম কার্যত নেই। কিন্তু এরই ফাঁকে মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে অন্যান্য বদলি (সেশন) মামলা বিচারের জন্য পাঠিয়ে ট্রাইব্যুনালকে কার্যকর রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ১২টি, দুই নম্বর ট্রাইব্যুনালে ৯টি, তিন নম্বর ট্রাইব্যুনালে ১টি এবং চার নম্বর ট্রাইব্যুনালে ২টি মামলা বিচারাধীন। সব মিলিয়ে ঢাকায় মামলার সংখ্যা ২৪। ঢাকার বাইরে অপর ট্রাইব্যুনালগুলোতে মামলা অনেক কম। তবে ঢাকার চারটি ট্রাইব্যুনালে সেশন মামলার সংখ্যা ৬ হাজার ১৯৭।
ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুর রশীদ মোল্লা সমকালকে বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত নতুন কোনো মামলা আসেনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের কার্যক্রমও আপাতত বন্ধ। এ ট্রাইব্যুনালে নিজস্ব মামলা মাত্র ১২টি, আর সেশন মামলার পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার। মূল মামলা না থাকায় রাষ্ট্রের কাছে এসব ট্রাইব্যুনালের গুরুত্ব ও মর্যাদার জায়গাটা কমে যাচ্ছে।’ শেখ হাসিনার মামলা এলেই আদালত চাঙ্গা হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি মুহম্মদ আবদুন নুর ভুঞা বাবুল বলেন, ‘মামলা নেই বললেই চলে, যা আছে সেটা খুবই নগণ্য। আলোচিত বা স্পর্শকাতর কোনো মামলা পেনডিং নেই। তবে সেশন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে।’
ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘গত ১৬ অক্টোবর দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোনো মূল মামলা আসেনি। জুলাই-আগস্টের ঘটনায় এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলা বিচারের জন্য এই ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর কথা শুনেছি।’
ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল থেকে নতুন কোনো মামলা পাঠানো হচ্ছে না। পুরোনো মামলা দিয়েই কোনো রকম চলছে। সরকার পরিবর্তনের পর পুরোনো মামলার সিডি ও নথিপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। বিচার বিভাগকে তারা একেবারে ধ্বংস করে চলে গেছে। এখন শুনছি মন্ত্রণালয় থেকে জুলাই-আগস্টের ঘটনায় করা মামলা বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব চ র র জন য কর মকর ত অপর ধ র আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত
নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।
কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।
১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)
আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)
ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।
৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)
ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।
৪. ঋণের মেয়াদ
কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।
৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)
শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।
৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)
ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।
৭. প্রসেসিং ফি
আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।
৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)
বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।
৯. জামানত (কোলেটারাল)
ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।
১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও
আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।