জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ ফৌজদারি অপরাধের বিভিন্ন মামলা বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হচ্ছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ ধরনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ওই সব ট্রাইব্যুনালের আইন কর্মকর্তা ও বিচার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে এ তথ্য অবহিত 
করা হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। গণঅভ্যুত্থানের সময় হতাহতের ঘটনায় ইতোমধ্যে সারাদেশে বিভিন্ন থানা ও আদালতে প্রায় ১ হাজার ৬০০ মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয় শতাধিক হত্যা মামলা। এসব মামলার অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা ২ লাখ ৩৮ হাজার। মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা, পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা আসামি হিসেবে রয়েছেন। মামলার ৯ মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত কোনোটিরই তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিলের পর স্পর্শকাতর মামলাগুলো দ্রুত বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন একাধিক আইন কর্মকর্তা।

অনেক গুরুতর অপরাধের মামলা নিষ্পত্তি করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। দুর্ধর্ষ ও দাগি অপরাধীরা আইনের ফাঁকফোকর ও বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রতার সুযোগে জামিনে বের হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে এ সব অপরাধীকে নিয়ন্ত্রণ ও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন গুরুতর অপরাধ-সংক্রান্ত মামলার বিচারকাজ দ্রুত শেষ করা, সন্ত্রাস দমন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ করে খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, বিস্ফোরক, অবৈধ অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য-সংক্রান্ত অপরাধের বিচার দ্রুত শেষ করতে ২০০২ সালে সরকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন পাস করে। বর্তমানে ঢাকায় চারটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। এ ছাড়া রংপুর ও ময়মনসিংহ ছাড়া ৫টি বিভাগীয় শহরে ৫টি ট্রাইব্যুনাল রয়েছে।     

মামলাশূন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল
প্রায় এক বছর ধরেই মামলাশূন্য হয়ে পড়েছে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালগুলোতে। নিজস্ব মামলা না থাকায় অন্যান্য বদলি (সেশন) মামলা দিয়ে সচল রাখা হচ্ছে এসব ট্রাইব্যুনালের নিয়মিত বিচারকাজ। ফলে ২৩ বছর আগে যে উদ্দেশ্য নিয়ে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল, সেটি এখন আর সেভাবে নেই। সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, চুরি ও মাদকের মতো মামলা পাঠিয়ে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের ‘বিশেষত্ব’ নষ্ট করা হয়েছে। এতে ধীরে ধীরে ট্রাইব্যুনাল তার নিজস্ব মর্যাদা হারাচ্ছে। 

স্পর্শকাতর ও চাঞ্চল্যকর মামলা বাছাইয়ের পর দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা পাঠানোর বিধান হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সে ধারাবাহিকতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল থেকে আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর অনেক মামলা এই ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে এসব ট্রাইব্যুনালে মামলা পাঠানো বন্ধ রয়েছে। মনিটরিং সেলের কার্যক্রম কার্যত নেই। কিন্তু এরই ফাঁকে মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে অন্যান্য বদলি (সেশন) মামলা বিচারের জন্য পাঠিয়ে ট্রাইব্যুনালকে কার্যকর রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ১২টি, দুই নম্বর ট্রাইব্যুনালে ৯টি, তিন নম্বর ট্রাইব্যুনালে ১টি এবং চার নম্বর ট্রাইব্যুনালে ২টি মামলা বিচারাধীন। সব মিলিয়ে ঢাকায় মামলার সংখ্যা ২৪। ঢাকার বাইরে অপর ট্রাইব্যুনালগুলোতে মামলা অনেক কম। তবে ঢাকার চারটি ট্রাইব্যুনালে সেশন মামলার সংখ্যা ৬ হাজার ১৯৭। 
ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুর রশীদ মোল্লা সমকালকে বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত নতুন কোনো মামলা আসেনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের কার্যক্রমও আপাতত বন্ধ। এ ট্রাইব্যুনালে নিজস্ব মামলা মাত্র ১২টি, আর সেশন মামলার পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার। মূল মামলা না থাকায় রাষ্ট্রের কাছে এসব ট্রাইব্যুনালের গুরুত্ব ও মর্যাদার জায়গাটা কমে যাচ্ছে।’ শেখ হাসিনার মামলা এলেই আদালত চাঙ্গা হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। 
ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি মুহম্মদ আবদুন নুর ভুঞা বাবুল বলেন, ‘মামলা নেই বললেই চলে, যা আছে সেটা খুবই নগণ্য। আলোচিত বা স্পর্শকাতর কোনো মামলা পেনডিং নেই। তবে সেশন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে।’

ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘গত ১৬ অক্টোবর দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোনো মূল মামলা আসেনি। জুলাই-আগস্টের ঘটনায় এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলা বিচারের জন্য এই ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর কথা শুনেছি।’
ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল থেকে নতুন কোনো মামলা পাঠানো হচ্ছে না। পুরোনো মামলা দিয়েই কোনো রকম চলছে। সরকার পরিবর্তনের পর পুরোনো মামলার সিডি ও নথিপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। বিচার বিভাগকে তারা একেবারে ধ্বংস করে চলে গেছে। এখন শুনছি মন্ত্রণালয় থেকে জুলাই-আগস্টের ঘটনায় করা মামলা বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব চ র র জন য কর মকর ত অপর ধ র আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঈদ পরবর্তী সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, সে অনুযায়ী নির্বাচন হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি আছে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ দেবে নির্বাচন কমিশন। তারা যে সময়ে নির্বাচনের ডেট ঠিক করবে, আমার মনে হয় আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেই সময়ের প্রস্তুতি আছে। আমাদের পুলিশও প্রস্তুত আছে।’

এখনও পুলিশ সচল হয়নি- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ কথা কে বলেছে! আপনারা যদি আগের ১৫ বছরের মতো ভাবেন, গেলেই পুলিশ পিটুনি দেবে, আমরা তো সেই পুলিশ চাচ্ছি না। আমরা মানবিক পুলিশ চাচ্ছি। যারা সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করবে।’

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘এখনের পুলিশ হচ্ছে মানবিক পুলিশ। তারা এখন ভালো ব্যবহার করে দেখেই সাধারণ জনগণ ভাবছে পুলিশ সচল হয়নি। পুলিশ কিন্তু আগের থেকে আরও বেশি একটিভ।’

তিনি বলেন, ‘আজকে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য সবাই একসঙ্গে হয়েছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবার সন্তোষজনক ছিল। এটা আপনারাও লিখেছেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ