নির্বাচনের তপশিল তাহলে কবে ঘোষণা হচ্ছে?
Published: 14th, June 2025 GMT
সংবাদমাধ্যমের বহুল আলোচিত খবর– ‘জাতীয় নির্বাচনের সময় নিয়ে রাজনৈতিক অস্বস্তি কাটতে শুরু করেছে। এপ্রিল থেকে এগিয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে নির্বাচনের সময় নির্ধারণে একমত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপি। তবে এই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচার বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। লন্ডনে শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা ড.
এখন প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে, নির্বাচনের হুইসেলটা তাহলে বাজবে কবে? নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে জেনারেল এরশাদের বিদায়ের পর ২৫ ডিসেম্বর ১৯৯০ তারিখে বিচারপতি আব্দুর রউফের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। কমিশন গঠিত হওয়ার ৬৪ দিনের মাথায় ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদের নির্বাচন সম্পন্ন করে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন স্বল্পতম সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সক্ষমতা প্রমাণ করে। নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে সব প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র থাকায় ভোটার তালিকাও সর্বদাই মোটামুটি হালনাগাদ থাকে। উপরন্তু গত ২ মার্চ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে।
জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সূচনা ছাত্রদের কোটা আন্দোলন দিয়ে শুরু হলেও বিগত তিন নির্বাচনে ভোট না দিতে পারার ক্ষোভ হতেই আপামর জনসাধারণ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। ৫ আগস্ট অভ্যুত্থান সফল হলে ওইদিন অপরাহ্ণে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেশের হাল ধরেন। তিনি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠকের পর জাতির উদ্দেশে ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বার্তা দেন এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখতে অনুরোধ করেন। তিনি সব দায়দায়িত্ব নিয়ে জনগণকে আশাহত না হওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দিয়ে সহযোগিতার অনুরোধ করেছিলেন।
বস্তুত ৮ আগস্ট পর্যন্ত সেনাপ্রধানই ছিলেন চালকের আসনে। ছাত্র-জনতা ও সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টায় ওই দিন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। শপথ নেওয়ার পর তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছিলেন কখন নির্বাচন হবে সেটি সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের (উপদেষ্টামণ্ডলী) সিদ্ধান্ত নয়। নির্বাচন কমিশনকে যে কোনো সময়ে আদর্শ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত রাখবেন।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সবার মনেই প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দিতে থাকে। রাষ্ট্র সংস্কার, জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিকীকরণ এসবের ডামাডোলে নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়টি আড়ালে চলে যেতে থাকে। জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণে নির্বাচনের দিনক্ষণ সম্পর্কে আভাস না দিলেও পরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, স্বল্প সংস্কার করতে চাইলে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে আর অধিক সংস্কার চাইলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানাতে থাকে। সেনাবাহিনী প্রধানও একাধিকবার ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জুনের প্রথম সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বৈঠকের পর জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি বলেন, এপ্রিলের প্রথমার্ধেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি পত্রপাঠ এই সময়সীমা সম্পর্কে অসন্তোষ ব্যক্ত করে। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকের পর অবশ্য দু’পক্ষই দৃশ্যত ছাড় দিয়ে এপ্রিল ও ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানে একমত হয়েছে।
এখন, হিসাব করে দেখা যাক নির্বাচনী তপশিল কবে ঘোষণা হতে পারে? সক্ষমতা ও প্রস্তুতি হিসেবে কমিশনকে নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়ার পরবর্তী দুই-আড়াই মাসের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে। ফেব্রুয়ারিকে পাখির চোখ করলে হাতে সময় আছে ৮ মাস, অঢেল সময়। যদিও এখনও ভোট গ্রহণের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা হয়নি, ২০২৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রমজান মাস শুরুর পরিপ্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের পর নির্বাচনী কার্যক্রম সহজ হবে না।
নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে দেশে যে ৮টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, এর মধ্যে চারটিতেই ভোট গ্রহণ হয়েছে রোববারে। সোমবারে দুটি এবং বুধ ও বৃহস্পতিবারে একটি করে। শুক্র, শনি ও মঙ্গলবারে একটি নির্বাচনেও ভোট গ্রহণ হয়নি। অতীতের রেওয়াজ অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের তারিখ হওয়া উচিত ২০২৬ সালের ১১ বা ১২ ফেব্রুয়ারি কিংবা ১৫ বা ১৬ ফেব্রুয়ারি। রেওয়াজ অনুযায়ী ভোট গ্রহণের ৪৫-৫০ দিন আগে তপশিল ঘোষণা করতে হয়। সেদিক থেকে, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করতে হবে।
এখন আসি, নির্বাচনের আগে কতটুকু সংস্কার করতে কত সময় প্রয়োজন হবে? প্রথমত, জাতীয় সংসদ এক কক্ষবিশিষ্টই থাকবে নাকি দুই কক্ষবিশিষ্ট হবে? যদি এক কক্ষবিশিষ্টই থাকে তবে ৩০০+৫০ থাকবে নাকি ৪০০ হবে? প্রবাসীদের ভোট প্রক্সি ভোট হবে নাকি পোস্টাল ব্যালটে হবে? যদি এক কক্ষই বহাল থাকে বা দুই কক্ষের নিম্নকক্ষে আসন ৪০০ হয় তাহলে সিদ্ধান্ত হওয়ার পর স্বার্থসংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে এলাকা পুনর্বিন্যাস করতে কমপক্ষে ৩ মাস সময় লাগবে।
দ্বিতীয়ত, মহিলা আসন বিদ্যমান উপায়েই হবে নাকি ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে হবে? ধরে নিলাম সে সিদ্ধান্ত সংসদের ধরন ও আসন সংখ্যা নির্ধারণের সময়ই নির্ধারিত হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে এলাকা পুনর্বিন্যাসের পরে ন্যায়সংগতভাবে এর সমাধা করতে গেলে মাসখানেক সময় লাগতেই পারে। ফলে তপশিল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশনের বাড়তি ৪ মাস সময় প্রয়োজন। তপশিল ঘোষণার দিন থেকে ২ মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব। সে ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে হলে রাষ্ট্রকে ছয় মাস আগে তথা জুলাই মাসের মধ্যেই আগামী সংসদের ধরন ও আসন সংখ্যা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। প্রক্সি ভোটের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলে হয়তো বাড়তি কোনো সময় লাগবে না। তবে প্রক্সি ভোট না করে যদি পোস্টাল ব্যালটে ভোট নেওয়া হয় তাহলে ব্যালট পেপার মুদ্রণের পর ভোট গ্রহণের দিনের সময়ের ব্যবধান হতে হবে কমপক্ষে এক মাস, যা বর্তমানে থাকে মাত্র এক সপ্তাহ বা তারও কম। পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের ভোট নিতে হলে নির্বাচন কমিশনকে বাড়তি এক মাস সময় নিতে হতে পারে। মোটের ওপর দেখা যাচ্ছে নিম্নকক্ষে ৪০০ আসন, ঘূর্ণায়মান নারী আসন ও পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসী ভোটের আয়োজন করতে হলে নির্বাচন কমিশনের স্বাভাবিক ২ মাসের অতিরিক্ত ৬ মাস সময় প্রয়োজন পড়বে। ফেব্রুয়ারিতে ভোট গ্রহণ করতে হলে, সেই সময় নির্বাচন কমিশনের হাতে আছেই।
আ ক ম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী: কলাম লেখক; অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত ড স ম বর র ম ভ ট গ রহণ র র জন ত ক র প রথম ঠ ত হয় প রব স য় র পর র সময় সময় ন আগস ট ব এনপ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বাবা-ছেলেকে নিয়ে অপুর ভিডিও প্রকাশের পর বুবলীর পোস্ট, কে কী লিখলেন
বিশ্ব বাবা দিবসে শাকিব খানকে পাওয়া গেল চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস ও শবনম বুবলীর ফেসবুক পোস্টে। বিশেষ এই দিনে ছেলে আব্রাহাম খান জয় বাবার কোলে বসে হারমোনিয়াম বাজিয়ে বাবা শাকিব খানকে গান শোনাচ্ছেন। মুগ্ধ হয়ে ছেলের গান শুনছেন শাকিব।
সেই ভিডিওটি পোস্ট করে অপু বিশ্বাস লিখেছেন, ‘বাবা শব্দটা উচ্চারিত হয় অনেক পবিত্রতা আর ভালোবাসা থেকে। বাবা–ছেলে সম্পর্কে কারও নজর না লাগুক।’
অপু বিশ্বাসের পোস্টের ২১ মিনিট পরেই সন্তান ও শাকিব খানসহ ছবি পোস্ট দিলেন বুবলী।
চিত্রনায়িকা শবনম বুবলীর পোস্টে দেখা যায়, শাকিব খানের বেডরুমে বসে কার্টুন দেখছে ছেলে শেহজাদ খান বীর। শাকিবের চোখে ঘুম থাকলেও বাবা-ছেলে খুনসুটিতে মেতে ওঠেন।
বাবা–ছেলের এই ভিডিওটি পোস্ট করে এই নায়িকা স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘যেমন বাবা তেমন ছেলে। একজন বাবার ভালোবাসা সব সময় ছেলের হৃদয়ে অঙ্কিত থাকে। বাবা দিবসের শুভেচ্ছা।’
দুটি ভিডিও নেটিজেনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দেখেছেন লাখ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারী। তাদের অধিকাংশই বাবা শাকিব খানের প্রশংসা করছেন
প্রসঙ্গত, এবার ইদে শাকিব খান অভিনীত ‘তাণ্ডব’ সিনেমা হলে ঝড় তুলেছে। তারকাসমৃদ্ধ কাস্টিং, গ্ল্যামার ও গল্প মিলিয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ইতোমধ্যেই দেশের অনেক প্রেক্ষাগৃহে ছবিটির শোগুলো হচ্ছে হাউসফুল।