ইসরায়েল গত শুক্রবার ভোর রাতে ইরানের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা করে। এর জবাবে ইসরায়েলে হামলা শুরু করে ইরান। পাল্টাপাল্টি এই হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।  

ইসরায়েল ও ইরান শনিবার সারারাত একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা-পাল্টা হামলা চালিয়ে গেছে। রোববার ভোরেও ইরান তেল আবিব ও হাইফা শহরে ড্রোন হামলা করেছে। ইসরায়েলও দাবি করেছে যে, রোববার তারা তেহরানের একটি পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। খবর বিবিসির

শনিবার রাত থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত যা যা ঘটেছে:

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৩৯ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ৩৯) জানায় যে, তারা তেহরানে বিমান হামলা চালিয়েছে। ওই হামলায় তারা ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত একটি ভবন ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে আঘাত করে।

শনিবার রাতে এক দফা মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালানোর পর রোববার ভোরে ইসরায়েলের কয়েকটি শহরে আবারও হামলা করেছে ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, এই দফায় ইরান ‘ব্যাপক ড্রোন হামলা’ চালিয়েছে। মধ্য ইসরায়েলের বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

এর আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি তাদের খবরে জানিয়েছিল যে, ইসরায়েলের তেল আবিব ও হাইফা শহরে ‘একশোর বেশি মিসাইল’ হামলা করা হয়েছে।

ইরানের তেল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শাহরান তেল ডিপোতে ইসরায়েল হামলা করেছে।

ইরানের মিসাইল হামলায় ইসরায়েলের হাইফা শহরের একটি তেল শোধনাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রোববার ইরানের হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ১০ জন মারা গেছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে ইসরায়েলের হামলায় ইরানে কতজন মারা গেছে তা আনুষ্ঠানিকভাবে না জানা গেলেও ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমের ইস্ট আজারবাইজানের গভর্নর ৩০ জন সেনা সদস্যসহ মোট ৩১ জনের মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেন। বিবিসির পক্ষ থেকে এসব দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র র বব র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রশাসনের মামলায় নাম নেই বাজার কমিটির হোতাদের

নানা আলোচনা সমালোচনা থাকলেও ফের জমে উঠেছে সিলেটের বৃহত্তম জনতার বাজার গরুর হাট। এই হাট নিয়ে প্রশাসনের আপত্তি এবং মামলা থাকলেও বাজার কমিটি বলছে, আদালতের নির্দেশনা নিয়েই তারা বাজার পরিচালনা করছেন। অভিযোগ রয়েছে, ওই মামলায় বাজার কমিটির অধিকাংশ সদস্যের নাম নেই। আসামি করা হয়েছে নিরীহ ব্যক্তিদের।
রোববার সরেজমিন নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের ওই বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের মতোই বাজার জমে উঠেছে। বাজারটি নিয়ে প্রশাসনের মামলা থাকলেও তা আমলে নিচ্ছে না পরিচালনা কমিটি। এমনকি মামলার ইস্যু ধরে প্রশাসনও কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। মামলা ও প্রশাসনিক বাধার শঙ্কা তুচ্ছ করে মহাসড়কের পাশের এই পশুরহাট বসিয়েছে পরিচালনা কমিটি।
এই হাটের ওপর জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে এখনও। তা সত্ত্বেও শনিবার ২১তম বারের মতো পশুর হাট আয়োজন করে বাজার কমিটি। এ দফায় ৪ থেকে ৫ হাজার গরু উঠেছে। এরই মধ্যে বিক্রি হয়েছে হাজারের বেশি গরু। তবে ঠিক কতটি গরু বিক্রি হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব বাজার কমিটির কাছে পাওয়া যায়নি।
এদিকে জনতার বাজার নিয়ে প্রশাসনের দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়নি বাজার কমিটির অধিকাংশ প্রভাবশালী নেতাকে। তাদের জায়গায় যাদের নাম দেওয়া হয়েছে তাদের অনেকের কোনো সম্পৃক্ততাই নেই বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে। সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন বাজার পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। বাজার পরিচালনা কমিটির যারা আসামি নয় তারাই পরিচালনা করছেন এবারের হাট। রাজনৈতিক আধিপত্যে হেরফের হয়েছে আসামির তালিকায়। মূলত বাজার কমিটির সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে আসামির তালিকার বাইরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজার পরিচালনা কমিটির এক নেতা বলেন, জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির মধ্যে, বিএনপি, জামায়াত, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জাসদের লোকজন থাকলেও ৫৭ সদস্যের কমিটির মাত্র ১০জন সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু আওয়ামী ঘরানার লোকজন বেশির ভাগ আসামি। যারা আসামি নয় তারা এখন বাজার পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
২০২৫ সালের ৩১ মে জনতার বাজার গরুর হাট বসানো নিয়ে হাটে দায়িত্ব পালনরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সন্দ্বীপ তালুকদারের সঙ্গে কমিটির লোকজনের তর্কবিতর্ক ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগ এনে বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের গোলাপকে প্রধান আসামি করে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ মামলায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। 
সিলেটের সবচেয়ে বড় এই পশুর হাট পরিচালনা করে বিপুল অর্থ আদায় করা হচ্ছে। সরকারিভাবে বৈধ ইজারা ব্যবস্থার ভিত্তিতে না হওয়ায় এখান থেকে কোনো রাজস্ব আদায় করা না হলেও বাজার কমিটি প্রত্যয়নের নামে রশিদের মাধ্যমে প্রতিটি পশুর জন্য বিক্রেতার কাছ থেকে আদায় করেন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। 
অভিযোগ রয়েছে, এভাবে প্রতি হাটে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ আদায় করা হয়। যার কোনো বৈধতা নেই। চার মাসে অন্তত ২০টির বেশি হাট বসেছে এখানে। যার মাধ্যমে কোটি টাকার বেশি আদায় করা হয়েছে।
বাজারের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জনতার বাজার নিয়ে ত্রিমুখী খেলা চলছে। প্রশাসন, রাজনৈতিক চক্র ও সামাজিক নেতৃত্ব একটি জটিলতা তৈরি করে জনতার বাজারের রাজস্ব আদায়ে বেড়াজাল তৈরি করেছেন। 
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফরিদুর রহমান হাটটিকে অবৈধ ঘোষণা করেন। ৩১ জানুয়ারির পর হাট বন্ধের নির্দেশ দেন তিনি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে মাইকিং করতে হয়। টাঙানো হয় নোটিশও। নির্দেশনায় উল্লেখ ছিল, মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বা অনুমোদনহীন হাট পরিচালনা করলে হাট-বাজার আইন ২০২৩ এবং মহাসড়ক আইন ২০২১ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এসব নির্দেশনার বিরুদ্ধে জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমদ হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। তখন জেলা প্রশাসনের আদেশ হাইকোর্ট স্থগিত করে রুল জারি করে। এরপর থেকে উক্ত বাজারটি থেকে সরকারিভাবে কোনো রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে না; বরং আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে বাজার পরিচালনা কমিটি। তারা প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করছে দাবি করলেও সে টাকা সরকারি খাতে জমা হচ্ছে না।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বাজার কমিটির সদস্যরা এই টাকা ভাগ করে নিচ্ছেন। ২ হাজার থেকে ৫ হাজার, ১০ টাকা করে ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছেন নেতারা। বাজার কমিটির খাতায় এসব হিসাব থাকলেও কেউ টাকা নেওয়ার কথা সরাসরি স্বীকার করেননি। সচেতন মহল বলছেন, হাটটি নিয়ে প্রশাসন ও বাজার কমিটির মধ্যে জটিলতা তৈরি হওয়ায় এর কোনো প্রত্যয়ন বা অর্থ আদায়ের আইনগত ভিত্তি নেই।
জনতার বাজার পরিচলানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, কাজী তোফায়েল আহমদ বলেন, জোর করে বাজার বসানো হয়নি। ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে আসছে, জনতার বাজার, এলাকার জনতাই বসিয়েছে। বর্তমানে তাদের কমিটি বাজার পরিচালনা করছে না। এলাকার যুব সমাজ আইনশৃঙ্খলা দেখভালের দায়িত্বে কিছু স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিয়ে বাজার তদারকি করছে। তারা হয়তো প্রত্যয়নের মাধ্যমে সামান্য কিছু টাকা আদায় করছে। 
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দুলাল মিয়া বলেন, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অসুস্থ থাকায় তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। এখন পর্যন্ত জনতার বাজার নিয়ে দায়ের করা মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাঁর জানা মতে, আসামিরা আদালতের মাধ্যমে জামিন নিয়েছে।
ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, তাদের পক্ষ থেকে খাস আদায় হচ্ছে না। কেউ রশিদের মাধ্যমে টাকা আদায় করে থাকলে, সেটা অবৈধ। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে হাটটি স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি উঠেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ