ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের আমানতকারীরা টাকা ফেরত চান
Published: 15th, June 2025 GMT
ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের আমানতকারীরা টাকা ফেরত চান। তাঁদের ক্ষতিপূরণসহ ফেরত দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া লুট হওয়া অর্থ দ্রুত উদ্ধারে পি কে হালদারকে দেশে আনাসহ মোট চার দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ব্যক্তি-আমানতকারী ফোরাম।
আজ রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায় আমানতকারী ফোরাম।
সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের সমন্বয়ক তাসদিক আহমেদ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, পি কে হালদার যখন ২০১৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেন, তখন এটি একটি ভালো আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছিল। বক্তব্যে দাবি করা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর ও মহাব্যবস্থাপক শাহ আলম সরাসরি জনসাধারণের আমানত লুটপাটে এই গোষ্ঠীকে সহায়তা করেছেন। এর ফলে আমানতকারীরা বিগত সাত বছর ধরে তাঁদের আমানত ফেরত পাচ্ছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘আট মাস ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নরের সঙ্গে আমরা দেখা করার চেষ্টা করছি। একাধিকবার চিঠি, ই–মেইলসহ নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করার পরও তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করছেন না। আমরা ব্যক্তি আমানতকারীরা গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে আমাদের দাবি ও বক্তব্য পেশ করতে চাই।’
ভারতে আটক থাকা পি কে হালদার লুট করা অর্থ কোথায় গেছে এর বিস্তারিত জানেন। তাই লুট ও পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ দ্রুত উদ্ধারের জন্য তাঁকে অবিলম্বে আইনি হেফাজতে বাংলাদেশে ফেরত আনার জোর দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের সমন্বয়ক তাসদিক আহমেদ বলেন, আমানতকারীদের আজীবনের সঞ্চয় সাত বছর ধরে আটকে আছে। আমার নিজের ২০ লাখ টাকার ওপরে আমানত রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে প্রায় ১ হাজার ৪৭০ জন ব্যক্তি আমানতকারীর সঞ্চয় ছিল মন্তব্য করে তাসদিক আহমেদ বলেন, কারও কারও এক কোটি টাকার ওপরে আমানত ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে আরও দাবি করা হয়, লুট হওয়া অর্থ উদ্ধার এবং ব্যক্তি আমানতকারীদের আমানত ফেরত—এই দুটিকে পৃথকভাবে ধরে সরকারের পরিকল্পনা করা উচিত। সরকারের মূলধারার ব্যাংকিং খাতের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের সংস্কার গুরুত্বের সঙ্গে করার দাবি জানান আমানতকারীরা।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ব্যক্তি-আমানতকারী ফোরামের সভাপতি বাদল নন্দী, আহ্বায়ক কামরুজ্জামান কামাল ও প্রতিষ্ঠানটির আমানতকারীরা।
২০১৫ সালে শেয়ার কিনে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় হাল ইন্টারন্যাশনাল, বিআর ইন্টারন্যাশনাল, নেচার এন্টারপ্রাইজ ও নিউ টেক এন্টারপ্রাইজ। এসব প্রতিষ্ঠান ২০১৫ সালেই কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। আবার হাল ইন্টারন্যাশনালের ৭০ শতাংশ শেয়ারের মালিক পি কে হালদার নিজে; তাঁর ভাই প্রীতিশ কুমার হালদারের শেয়ার ১০ শতাংশ।
২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর নামে-বেনামে টাকা বের করেন পি কে হালদার। পরে ব্যবস্থাপনায় নিজের পছন্দমতো লোকদের বসান তিনি। চার পরিচালকের মাধ্যমে ৩৪টি হিসাবে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বের করে নেওয়া হয়। এ ছাড়া শীর্ষ কর্মকর্তারা ঋণের নামে ১৫০ কোটি টাকা নিয়ে যান। এসব অনিয়মের জের টানতে হচ্ছে সাধারণ আমানতকারীদের।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এক দশকে ১ লাখ হেক্টর বনভূমি কমেছে
দেশে এক দশকে বনভূমি হ্রাস পেয়েছে ১ লাখ ১ হাজার হেক্টর, যা ঢাকা শহরের আয়তনের প্রায় সাড়ে তিন গুণ। গত এক দশকে দেশ থেকে হারিয়ে গেছে ৬৪ প্রজাতির গাছ।
সারা দেশে বনাঞ্চলে যে পরিমাণ গাছ আছে, গ্রামাঞ্চলে গাছের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি। তবে গ্রামে গাছের ঘনত্ব কম। আর বন উজাড় বেশি হয়েছে পার্বত্যাঞ্চলে। সেখানে একমুখী প্রজাতির ফসল চাষের প্রসার ও সড়ক সম্প্রসারণের কারণে বন উজাড় হচ্ছে।
বনের সার্বিক চিত্র জানতে ২০২৪ সালে বন অধিদপ্তরের করা জাতীয় বন জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। জরিপটি প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
পার্বত্য অঞ্চলে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সেটাকে মাথায় রেখে আমরা একটা পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছি। বান্দরবানের লামা অঞ্চল দিয়ে ফরেস্ট রিস্টোরেশনের (বন পুনরুদ্ধার) কাজ শুরু করব আমরা।সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, উপদেষ্টা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়২০১৫ সালে জাতীয় বন জরিপে বন আচ্ছাদনের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ৭৬ শতাংশ, সেটি এখন কিছুটা হ্রাস পেয়ে ১২ দশমিক ১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বন জরিপে দেশে বনভূমি আছে ১৭ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর। আগের বন জরিপে যেটির পরিমাণ ১৮ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর।
জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সেটাকে মাথায় রেখে আমরা একটা পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছি। বান্দরবানের লামা অঞ্চল দিয়ে ফরেস্ট রিস্টোরেশনের (বন পুনরুদ্ধার) কাজ শুরু করব আমরা।’
‘জীববৈচিত্র্য রক্ষা, অবক্ষয়িত বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা’র আহ্বান জানিয়ে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৭২ সালে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক দিবসের মর্যাদা দেয়।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ফাওয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিকভাবে বন উজাড়ীকরণের হার ১ দশমিক ১ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে সেটি ২ দশমিক ৬ শতাংশ।
বন অধিদপ্তরের ২০টি দল মাঠপর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করে ২০২৪ সালের মার্চে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তাদের তথ্য সংগ্রহ শেষ হয়। উপকূলীয় বন, শালবন, সুন্দরবন, পার্বত্যাঞ্চল ও গ্রামীণ এলাকায় মোট ১ হাজার ৮৫৮টি নমুনা প্লটের ভিত্তিতে এ জরিপের ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছে।
জরিপে দেশে প্রতি হেক্টরে গাছের ঘনত্ব পাওয়া গেছে ১১৭টি। সবচেয়ে বেশি গাছের ঘনত্ব আছে সুন্দরবনে। এখানে গাছের ঘনত্ব প্রতি হেক্টরে ৭০২টি। বনাঞ্চলের চেয়ে গ্রামীণ এলাকায় গাছের ঘনত্ব কম হলেও মোট গাছের পরিমাণ বেশি। গ্রামীণ এলাকায় মোট গাছের সংখ্যা প্রায় ৯০ কোটি।
২০১৫ সালের বন জরিপে গাছের সংখ্যা ছিল ১৬৯ কোটি। সাম্প্রতিক জরিপে সেটা কিছুটা কমে হয়েছে ১৫৭ কোটি। গত এক দশকে হ্রাস পাওয়া গাছের সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি। জরিপে সারা দেশে ৩২৬টি গাছের প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৪২টি প্রজাতি পাওয়া গেছে পার্বত্যাঞ্চলে। সুন্দরবনে পাওয়া গেছে ২২ প্রজাতির গাছ। এর আগে বন জরিপে (২০১৫) ৩৯০ প্রজাতির গাছ শনাক্ত করেছিল বন অধিদপ্তর। গত এক দশকে হারিয়ে গেছে ৬৪ প্রজাতির বৃক্ষ।
কেন কমছে পার্বত্যাঞ্চলের বন
২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ডারউইন ইউনিভার্সিটি পরিচালিত এক গবেষণায় পার্বত্যাঞ্চল বাংলাদেশের মোট বন আচ্ছাদনের ৪০ শতাংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে দ্রুত প্রসার ঘটছে অর্থকরি ফলের চাষ (হর্টিকালচার) ও একমুখী প্রজাতির বনায়ন (মনোকালচার), যেমন রাবারবাগান।
জানতে চাইলে জাতীয় বন জরিপের সঙ্গে যুক্ত থাকা বন অধিদপ্তরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (সদ্য অবসরপ্রাপ্ত) জহির ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে বৈধ ও অবৈধভাবে বন উজাড় হয়ে আসছে। এখানে একদিকে বন উজাড় হচ্ছে, অন্যদিকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কারণে বনায়ন করা যায় না। যার কারণে এখানে বনভূমি হ্রাস পাওয়ার পরিমাণ বেশি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক কামাল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে বন বিভাগ কিছু করতে পারে না। পাহাড়িরা কিছু গামার আর সেগুনগাছের বাগান করেন। পুরো পার্বত্য অঞ্চলে সড়ক সম্প্রসারণ হয়েছে গত কয়েক দশকে। যেমন সীমান্ত রোড হয়েছে।
কামাল হোসাইন বলেন, এ ছাড়া এখানে বিনোদনকেন্দ্র ও রিসোর্টের সংখ্যা বাড়ছে। এটা একটা দিক। অন্যদিকে অনেক প্রভাবশালী এখন ড্রাগন, কাজু ও আমের চাষ করছেন প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে। এ অঞ্চলের বনের ওপর বহুমুখী চাপের কারণে এখানে বনাঞ্চল হ্রাস পাওয়ার হার অন্যান্য অঞ্চল থেকে বেশি।
কামাল হোসাইন আক্ষেপ করে বলেন, ‘কেউ বনকে ভালোবাসে না। মানুষের লোভের শিকার হয়েছে এখানকার প্রাকৃতিক বন। এটাই আমাদের সর্বনাশ করেছে।’