ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের আমানতকারীরা টাকা ফেরত চান। তাঁদের ক্ষতিপূরণসহ ফেরত দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া লুট হওয়া অর্থ দ্রুত উদ্ধারে পি কে হালদারকে দেশে আনাসহ মোট চার দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ব্যক্তি-আমানতকারী ফোরাম।

আজ রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায় আমানতকারী ফোরাম।

সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের সমন্বয়ক তাসদিক আহমেদ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, পি কে হালদার যখন ২০১৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেন, তখন এটি একটি ভালো আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছিল। বক্তব্যে দাবি করা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর ও মহাব্যবস্থাপক শাহ আলম সরাসরি জনসাধারণের আমানত লুটপাটে এই গোষ্ঠীকে সহায়তা করেছেন। এর ফলে আমানতকারীরা বিগত সাত বছর ধরে তাঁদের আমানত ফেরত পাচ্ছেন না।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘আট মাস ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নরের সঙ্গে আমরা দেখা করার চেষ্টা করছি। একাধিকবার চিঠি, ই–মেইলসহ নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করার পরও তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করছেন না। আমরা ব্যক্তি আমানতকারীরা গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে আমাদের দাবি ও বক্তব্য পেশ করতে চাই।’

ভারতে আটক থাকা পি কে হালদার লুট করা অর্থ কোথায় গেছে এর বিস্তারিত জানেন। তাই লুট ও পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ দ্রুত উদ্ধারের জন্য তাঁকে অবিলম্বে আইনি হেফাজতে বাংলাদেশে ফেরত আনার জোর দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের সমন্বয়ক তাসদিক আহমেদ বলেন, আমানতকারীদের আজীবনের সঞ্চয় সাত বছর ধরে আটকে আছে। আমার নিজের ২০ লাখ টাকার ওপরে আমানত রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে প্রায় ১ হাজার ৪৭০ জন ব্যক্তি আমানতকারীর সঞ্চয় ছিল মন্তব্য করে তাসদিক আহমেদ বলেন, কারও কারও এক কোটি টাকার ওপরে আমানত ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে আরও দাবি করা হয়, লুট হওয়া অর্থ উদ্ধার এবং ব্যক্তি আমানতকারীদের আমানত ফেরত—এই দুটিকে পৃথকভাবে ধরে সরকারের পরিকল্পনা করা উচিত। সরকারের মূলধারার ব্যাংকিং খাতের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের সংস্কার গুরুত্বের সঙ্গে করার দাবি জানান আমানতকারীরা।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ব্যক্তি-আমানতকারী ফোরামের সভাপতি বাদল নন্দী, আহ্বায়ক কামরুজ্জামান কামাল ও প্রতিষ্ঠানটির আমানতকারীরা।

২০১৫ সালে শেয়ার কিনে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় হাল ইন্টারন্যাশনাল, বিআর ইন্টারন্যাশনাল, নেচার এন্টারপ্রাইজ ও নিউ টেক এন্টারপ্রাইজ। এসব প্রতিষ্ঠান ২০১৫ সালেই কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। আবার হাল ইন্টারন্যাশনালের ৭০ শতাংশ শেয়ারের মালিক পি কে হালদার নিজে; তাঁর ভাই প্রীতিশ কুমার হালদারের শেয়ার ১০ শতাংশ।

২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর নামে-বেনামে টাকা বের করেন পি কে হালদার। পরে ব্যবস্থাপনায় নিজের পছন্দমতো লোকদের বসান তিনি। চার পরিচালকের মাধ্যমে ৩৪টি হিসাবে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বের করে নেওয়া হয়। এ ছাড়া শীর্ষ কর্মকর্তারা ঋণের নামে ১৫০ কোটি টাকা নিয়ে যান। এসব অনিয়মের জের টানতে হচ্ছে সাধারণ আমানতকারীদের।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

এশিয়া কাপ-২০২৫ এর সুপার ফোরে জায়গা করে নিলো আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান। বুধবার দিবাগত রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে ভারতের সঙ্গী হলো সালমান-শাহীনরা।

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আলো-ঝলমলে রাতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভার পর্যন্ত টিকেছিল আমিরাত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। সেই সুবাদে সহজ জয় নিয়ে শেষ চারে জায়গা নিশ্চিত করে পাকিস্তান।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ১৪৭ রানের টার্গেট দিল পাকিস্তান

বেথেলের ইতিহাস গড়া দিনে ইংল্যান্ডের দাপুটে জয়

এই জয়ের নায়ক নিঃসন্দেহে শাহীন শাহ আফ্রিদি। বিপদের মুহূর্তে নামতে হয় তাকে ব্যাট হাতে। সেখানে ১৪ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কার ঝড়ে অপরাজিত ২৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি, যা পাকিস্তানের সংগ্রহকে দাঁড় করায় লড়াইযোগ্য অবস্থানে। শুধু ব্যাটেই নয়, বল হাতেও ছিলেন সমান কার্যকর। ৩ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচ করে তুলে নেন ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। এমন সর্বাঙ্গীন পারফরম্যান্সে স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠে যায় তার ঝুলিতে।

তবু শুরুটা বেশ আশাব্যঞ্জক ছিল আমিরাতের। ১৩.৫ ওভার পর্যন্ত তারা প্রতিযোগিতায় টিকে ছিল দারুণভাবে। তিন উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করেছিল ৮৫ রান। কিন্তু এরপর যেন ধস নামে। মাত্র ২০ রানের ব্যবধানে বাকি সাত উইকেট হারিয়ে পুরো দল অলআউট হয়ে যায় ১০৫ রানে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন রাহুল চোপড়া, যার ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ১টি ছক্কা। ধ্রুব পারাশার যোগ করেন ২০, মুহাম্মদ ওয়াসিম ১৪ এবং আলিশান শারাফু করেন ১২ রান।

পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণে শাহীনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুটি করে উইকেট নেন হারিস রউফ ও আবরার আহমেদ।

এর আগে ব্যাট হাতে পাকিস্তানও ভুগেছে। চারজন ছাড়া কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি। ফখর জামান খেলেন ৩৬ বলে ৫০ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস, যেখানে ছিল ২টি চার ও ৩টি ছক্কা। শাহীন আফ্রিদির অপরাজিত ২৯ রান ছাড়া অধিনায়ক সালমান আলি আগা ২০ এবং মোহাম্মদ হারিস যোগ করেন ১৮ রান।

আমিরাতের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন জুনায়েদ সিদ্দিকী। তিনি ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে তুলে নেন ৪টি উইকেট। সিমরানজিত সিংয়ের বোলিং ফিগারও কম চমকপ্রদ নয়, ৪ ওভারে ২৬ রান খরচ করে শিকার করেন ৩ উইকেট।

এই জয়ে পাকিস্তান-ভারত দ্বৈরথের আরেকটি অধ্যায় লেখার সুযোগ তৈরি হলো। শুধু তাই নয়, ভাগ্য যদি সহায় হয়, তবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ফাইনাল লড়াইও দেখা যেতে পারে এবারের এশিয়া কাপে।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ