অনেকেই এসে জড়িয়ে ধরেছেন, বলেছেন আপনাকে অনেক ভালো লাগে: রাজ
Published: 17th, June 2025 GMT
শরিফুল রাজ। জনপ্রিয় অভিনেতা। ঈদে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত সিনেমা ‘ইনসাফ’। সঞ্জয় সমদ্দার পরিচালিত সিনেমাটিতে অ্যাকশন অবতারে দেখা গেছে রাজকে। মুক্তির পর থেকেই সিনেমাটি নিয়ে হলে হলে ঘুরছেন। দর্শকদের উচ্ছ্বাস দেখছেন, নিজে শুনছেন তাঁর চরিত্রটি নিয়ে ভালো লাগার গল্প। ইনসাফ ও দর্শকদের সঙ্গে কাটানো সে সময় অভিজ্ঞতা নিয়েই কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
ঈদের সময়টায় আপনার সময় কাটছে কেমন?
দারুণ কাটছে; তবে সেটা হলে হলে গিয়ে দর্শকের সঙ্গে কাটিয়েছি। আমি আসলে আমার প্রথম সিনেমা ‘আইসক্রিম’ থেকেই হলে হলে ঘুরি। সিনেমা মুক্তির পর দর্শকরা যে আবেগ আর উচ্ছ্বাস নিয়ে সিনেমা দেখেন, সেটা নিজ চোখে দেখা। এটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় অভিজ্ঞতা। এবারও ইনসাফ দেখে তাদের প্রতিক্রিয়া দেখেছি। অনেকেই এসে জড়িয়ে ধরেছে, বলেছে আপনাকে অনেক ভালো লাগে। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
পরাণ ও হাওয়ার সময় দর্শকদের যে ভালোবাসা পেয়েছিলেন সেই পরিমাণ ভালোবাসা কি এই সিনেমার বেলাতে পাচ্ছেন?
পরাণ ও হাওয়া বেশ কয়েক বছর আগের সিনেমা। সিনেমাগুলোও ভিন্ন গল্পের, ভিন্ন পরিচালকের ভিন্ন ঢঙের। তখন রাজ যেমন ছিল এখন কিন্তু কিছুটা পরিবর্তন আসছে। তবে হলে দর্শকদের যে ভালোবাসা পাচ্ছি সেই উচ্ছ্বাস ও প্রক্রিয়া কিন্তু একই রকম। তবে তখন আরও বেশি হলে গিয়েছিলাম। এইবার তো এত হলে যাওয়া হচ্ছে না। তবে আগামীতে শো ও হল বাড়লে আমার বিশ্বাস, সেসব হলেও যাব। তবে যে ভালোবাসা দেখছি ও পাচ্ছি, তাতেই আমি তৃপ্ত।
ভিডিওতেও দেখলাম আপনি বলছেন “আমি দক্ষিণী না, বাংলাদেশি অভিনেতা”– এই পরিচয়বোধ এত জোরালো কেন?
কারণ আমি বিশ্বাস করি, আমাদের এই বাংলাদেশি গল্প বলার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। যখন কেউ আমাকে দক্ষিণী অভিনেতা ভেবে ফেলে, তখন মনে হয় আমি নিজেকে পুরোপুরি তুলে ধরতে পারিনি। তাই আমি সবসময় বলি, আমি বাংলাদেশের সন্তান, এই দেশের মাটির গন্ধ আমার অভিনয়ে থাকতে হবে। আমি বাংলাদেশের অভিনেতা।
ইনসাফ শুধুই অ্যাকশনধর্মী সিনেমা নয়, এতে নাকি সামাজিক মেসেজও আছে?
এটা শুধুই অ্যাকশন সিনেমা নয়। এই দেশের নানা অঙ্গনের দুর্নীতি, অবিচার আর নীরবতা নিয়ে কথা বলেছে সিনেমাটা। এতে একটা প্রতিবাদের ভাষা আছে। সেটা এসেছে নির্মাতা সঞ্জয় সমদ্দারের ভেতর থেকে। আমি কেবল সেই চরিত্রটিকে পর্দায় রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এই চেষ্টা করার মধ্যেই আমার শিল্পীসত্তা খুঁজে পাই, আনন্দও পাই। আসলে এটাই তো আমার কাজ।
তাসনিয়া ফারিণের সঙ্গে প্রথমবার কাজ করলেন। কেমন অভিজ্ঞতা?
ফারিণ অনেক ভালো অভিনেত্রী, সেটা আগে থেকেই জানতাম। সিনেমায় ওকে আরও বেশি দেখতে চাই। এই সিনেমা যারাই দেখেছেন, এক বাক্যে ফারিণের প্রশংসা করেছেন। ফারিণের চরিত্রটি দারুণ সাহসী চরিত্র। সিনেমায় ওর আরও জোরালো হওয়া দরকার সিনেমায়। আমি বিশ্বাস করি, ও যদি আরও বেশি সিনেমায় কাজ করে, তাহলে দুর্দান্ত কিছু দেবে ইন্ডাস্ট্রিকে।
ঈদে দর্শকের হলে ফেরা নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
আজ থেকে আট-দশ বছর আগে সিনেমার যে পরিস্থিতি ছিল, সেটা এখন অনেকটাই বদলেছে। ঈদে মুক্তি পাওয়া সব ধরনের সিনেমা দেখতে মানুষ সিনেমা হলে যাচ্ছে। এটা অনেক বড় ‘পজিটিভ সাইন’। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, সারা বছর হয়তো এমন হবে না, কিন্তু এখন যা হচ্ছে, সেটাও তো কম না। আমি আশাবাদী। ভবিষ্যতে ঈদ ছাড়াও সিনেমা দেখতে হলে যাবে দর্শক। তবে সেজন্য ঈদ ছাড়াও তো ভালো ভালো সিনেমা মুক্তি দিতে হবে। দর্শকদেরও বুঝাতে হবে সেটা।
সিনেমা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনার কোনো নির্দিষ্ট কৌশল আছে?
ব্যবসায়িকভাবে সফল হবে, এই চিন্তা করে আমি কোনো সিনেমা হাতে নিই না। আমি চেষ্টা করি গল্পটা বুঝতে। আমার অভিনীত অনেক সিনেমা ভালো ব্যবসা করেছে, কিন্তু সেটা আমার একার কৃতিত্ব নয়। নির্মাতাদের পরিশ্রম আর ভালো গল্পই আসল বিষয়। আমি শুধু চেষ্টা করি চরিত্রটিকে নিজের ভেতর ধারণ করতে। সেটা ধারণ করতে সব ধরনের পরিশ্রম করতে প্রস্তুত থাকি।
নিজের চলচ্চিত্রকারদের নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
আমি আমার নির্মাতাদের কাছে কৃতজ্ঞ। যারা আমাকে কাস্ট করেন, তারা বিশ্বাস করেই করেন। আমি চেষ্টা করি সেই বিশ্বাসটাকে পর্দায় প্রমাণ করতে। আমার সব সিনেমাই যে হিট হয়েছে তা নয়। সব সিনেমা হিট হবেও না। কিন্তু আমি চাই, প্রতিটি সিনেমায় নিজের সেরাটা দিই। ইনসাফের বেলায়ও সেই চেষ্টা ছিল। এতে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ শট ছিল। চেষ্টার কারণে সেগুলো কিন্তু সহজ হয়ে গেছে।
আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান আগামী দিনে?
আমি চাই, আমার সিনেমা সফল হোক। সেই সফলতা শুধু আমার না, যারা টাকা লগ্নি করেন, যিনি গল্প লেখেন, পরিচালনা করেন, ক্যামেরার পেছনে থাকেন। সবাই মিলে যে একটা স্বপ্ন বানান, সেটা যেন সফল হয়। আর আমি যেন সেই স্বপ্নের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে পারি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শর ফ ল র জ অভ ন ত চর ত র ইনস ফ আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।