এ ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল ও ব্যাশিং আমি ডিজার্ভ করি না: সারোয়ার তুষার
Published: 17th, June 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ব্যক্তিগত কথোপকথন ফাঁস এবং তা ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠলেও তিনি কোনো অপরাধ করেননি। এ ঘটনাকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ও ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে সারোয়ার তুষার লিখেছেন, আমি ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে না। মানুষ হিসেবে আমার আরও ডেভেলপ করার স্কোপ আছে। যদি কোনো ভুল করি, অবশ্যই আপনারা আমাকে তা জানাবেন, আমি শুধরে নিতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু আমি কোনো অপরাধ করি নাই৷ এ ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল ও ব্যাশিং আমি ডিজার্ভ করি না। কোনো মানুষই করেন না। এই স্মিয়ার ক্যাম্পেইন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমার দলের কেন্দ্রীয় একজন যুগ্ম আহ্বায়ক নারী সহকর্মীকে যেভাবে অপমান করা হচ্ছে, তার সাথে আমার ছবি জুড়ে দিয়ে, জঘন্য কুৎসিত কথাবার্তা লিখে, ভিডিও বানিয়ে আমার আর তার নামে প্রচার করা হচ্ছে। যারা এই কুৎসিত কাজগুলো করছেন, দয়া করে করবেন না। রাজনৈতিক বিরোধিতা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে রাখার আহ্বান জানাই। আমার দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের নারী সহকর্মীরা এর আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুৎসা ও হ্যারাজমেন্টের শিকার হয়েছেন। এখন আমার সঙ্গে তাদের জড়িয়ে এই নোংরামিগুলো করবেন না। তারা সম্মানিত ও সম্ভ্রান্ত নারী। রাজনীতির বাইরেও তাদের ব্যক্তিগত জীবন আছে৷ তাদের জীবন বিষিয়ে তুলবেন না। আমার চরিত্রহনন করতে গিয়ে তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করবেন না৷ এটা আমার অনুরোধ৷ তারা কোনো দোষ করেননি। দুই ব্যক্তির ব্যক্তিগত কথোপকথন বিনা অনুমতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়া জঘন্য কাজ। আমি ভুলের ঊর্ধ্বে না। কিন্তু আমার তিন মাস আগের ব্যক্তিগত কথোপকথন কাঁটছাঁট করে পরিপ্রেক্ষিহীনভাবে অনলাইনে ছেড়ে দিয়ে আমাকে অপদস্থ করার মধ্যে কোনো গৌরব নাই৷’
সারোয়ার তুষার বলেন, ‘এর আগেও আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ডিপার্টমেন্টের কালচারাল প্রোগ্রামের অভিনয়ের ছবিকে বিকৃত করে আমার বিরুদ্ধে স্মিয়ার ক্যাম্পেইন চালানো হয়েছে। আমি আমার জবান স্রেফ আমার রাজনৈতিক বিরোধীদের রাজনৈতিক সমালোচনায় খরচ করি। ব্যক্তিগত আক্রমণ, চরিত্রহনন ও কুৎসা রটনা করি না। একিলিস ও হেকটরের যুদ্ধে একিলিস হেকটরকে বধ করেন ঠিকই; কিন্তু একজন বীর যোদ্ধার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে কুণ্ঠা করেন না।’
তিনি বলেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চব্বিশের ৭ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত আমি লাগাতারভাবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে রাজপথে অংশ নিয়েছি। ৫ আগস্টের পর আমি বিএনপির ব্যাপারে বেশ সমালোচনামুখর হয়েছি আমার রাজনৈতিক অবস্থানের জায়গা থেকে৷ সমালোচনা ও ভিন্নমত বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রাণভোমরা।
তিনি আরও বলেন, পরিশেষে, সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়ালের অভিজ্ঞতা বীভৎস। কারণ সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল কিছু শুনতে চায় না; তার কাছে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত থাকে। আমার শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধু ও মিত্ররা আমার ওপর ভরসা করেন। আমার প্রতি তাদের প্রত্যাশাও অনেক। আমার কোনো সাময়িক বিচ্যুতির কারণে তারা বিব্রত হয়ে থাকলে তাদের প্রতি আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। আমি জানি আমার জড়ানোর মাত্রা কতটুকু, আর কতটুকু আমি অর্গানাইজড ভার্চুয়াল মবের শিকার।
তুষার বলেন, ‘আমার নামে ভুয়া স্ক্রিনশট ও কনভার্সেশন ভাইরাল করা হয়েছে। স্ক্রিনশটের ওই কনভার্সেশনগুলো আমার না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দল স্বপ্রণোদিত হয়ে আমার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, আমি লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দেব। ’
‘প্রসঙ্গত, আমি কাউকে কোনো ধরনের হুমকি-ধামকি দেই নাই। দেয়ার মতো পরিস্থিতিতেই আমি নাই। এ ব্যাপারে আমার নামে ফেসবুকে যা প্রচার করা হচ্ছে তা সর্বৈব মিথ্যা। আমি এমনকি আমার এই পোস্টেও সংশ্লিষ্ট অপরপক্ষের পরিচয় প্রকাশ করছি না। যা যা বলার আছে, তা আমি দলের কাছেই লিখিতভাবে বলব। সোশ্যাল মিডিয়ার সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমার আহবান থাকবে, আমার দলের কেন্দ্রীয় কোনো নারী বা দলের বাইরের অন্য কোনো নারীকে ঘিরে কুৎসা রটনা করবেন না।’
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আমি আরও পরিশীলিত হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখব। আমাকে যারা সমালোচনা ও বিরোধিতা করেন, তাদের প্রতিও আমার আহ্বান থাকবে আপনারা রাজনৈতিক বিরোধিতাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও চরিত্রহননে পর্যবসিত করবেন না। বাংলাদেশপন্থার জয় হোক।
এদিকে এনসিপির পক্ষ থেকে সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে। তাঁকে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস প র জন ত ক করব ন ন দল র ক
এছাড়াও পড়ুন:
মেটা এআই অ্যাপের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের সুবিধা কী গোপনীয়তা উদ্বেগ তৈরি করছে?
মেটার নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যাপ মেটা এআইয়ে ব্যবহৃত ব্যক্তিগত কথোপকথন, অডিও ক্লিপ ও ছবি অনেক সময় ব্যবহারকারীদের অজান্তেই প্রকাশিত হচ্ছে। অ্যাপের ‘শেয়ার’–সুবিধা ঘিরে তৈরি হওয়া এই বিভ্রান্তি নিয়ে ব্যবহারকারীদের মধ্যে গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
অ্যাপটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবটকে প্রশ্ন করার পর ব্যবহারকারীদের সামনে একটি ‘শেয়ার’ বাটন দেখা যায়। সেই বাটন চাপলে কথোপকথনের একটি প্রিভিউ পর্দায় ভেসে ওঠে। যেখান থেকে তা অনলাইনে প্রকাশ করা যায়। অনেকেই এসব তথ্য শেয়ারও করছেন। তবে অনেক ব্যবহারকারী বুঝতেই পারেন না, তাঁরা যে তথ্য বা বার্তা শেয়ার করছেন, তা সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে অ্যাপে প্রতিনিয়ত এমন অনেক তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা সাধারণত ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকার কথা। সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক র্যাচেল টোব্যাক এমনও তথ্য শনাক্ত করেছেন, যেখানে ব্যবহারকারীর বাসার ঠিকানা ও আদালতের স্পর্শকাতর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। শুধু লিখিত বার্তাই নয়, অ্যাপে শেয়ার হওয়া অডিও ক্লিপেও উঠে এসেছে বিব্রতকর প্রশ্ন।
গোপনীয়তার এ ধরনের ঘাটতির কারণে ব্যবহারকারীরা বুঝে উঠতে পারছেন না, কোন তথ্য কীভাবে শেয়ার হচ্ছে এবং তাঁদের প্রোফাইল যদি ইনস্টাগ্রামে পাবলিক থাকে, তাহলে সেই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লগইন করলে কথোপকথনগুলোও সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে প্রযুক্তি গণমাধ্যম টেকক্রাঞ্চ মেটার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বিভ্রান্তির জন্য মূলত মেটার ফিচার ডিজাইন দায়ী। ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত কথোপকথন ‘স্যোশাল শেয়ার’ হিসেবে প্রকাশ করার মতো সুবিধা সংযুক্ত করার চিন্তা প্রযুক্তিগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। বিশ্লেষকদের মতে, অ্যাপের বর্তমান কাঠামোতে গোপনীয়তা রক্ষার ন্যূনতম নিশ্চয়তা না থাকায় এটি ব্যবহারকারীদের জন্য একটি ডিজিটাল ঝুঁকিতে পরিণত হচ্ছে। মেটা যদি ব্যবহারকারীদের আস্থা অর্জন করতে চায়, তবে অ্যাপের ডিজাইন ও গোপনীয়তা নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা ছাড়া উপায় নেই।
অ্যাপ বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান অ্যাপফিগারসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ২৯ এপ্রিল বাজারে আসার পর এখন পর্যন্ত মেটা এআই অ্যাপটি ৬৫ লাখবার নামানো হয়েছে।
সূত্র: টেকক্রাঞ্চ