বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল উৎপাদনের শর্তে শিথিলতা চান ব্যবসায়ীরা
Published: 18th, June 2025 GMT
বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল বা ই–বাইক উৎপাদন শিল্পে শুল্ক–কর আরোপের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কিছু শর্ত শিথিলের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বামা)। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি।
বামার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী দ্বীন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, পরিবেশবান্ধব যানবাহন উৎপাদনে সরকার সহায়তা দিলেও ই–বাইক শিল্পে কার্যকর অগ্রগতির পথে কিছু শর্ত বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। স্থানীয়ভাবে ই–বাইক উৎপাদন শিল্প বিকাশে ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এসআরওর মাধ্যমে এই খাতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তবে এ জন্য ১৪টি শর্ত পরিপালনের কথা বলা হয়েছে এসআরওতে।
বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, দেশে ই–বাইক শিল্প মূলত পশ্চাৎ সংযোগ শিল্প বা ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজভিত্তিক। অর্থাৎ এই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো যন্ত্রাংশের জন্য একাধিক জোগানদাতা ও উৎপাদকের ওপর নির্ভর করে চলে। কিন্তু এনবিআরের নতুন প্রজ্ঞাপনে (এসআরও) এমন কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে, যেগুলো এসব শিল্পের জন্য বাস্তবায়ন করা কঠিন।
চিঠিতে বলা হয়, এনবিআরের প্রজ্ঞাপনে ই–বাইক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব কারখানায় ‘মেটাল হাউজিং’ বা চেসিসসহ বিভিন্ন ধাতব যন্ত্রাংশ তৈরির শর্ত দেওয়া হয়েছে। সে জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হবে, যদিও এসব যন্ত্রাংশ উৎপাদনে বড় বিনিয়োগ ও আলাদা দক্ষতা দরকার।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘মেটাল হাউজিং’ বলতে সাধারণত ব্যাটারির একটি অংশ বোঝায়। কিন্তু এসআরওতে এমনভাবে বলা হয়েছে, যেন ই–বাইক প্রস্তুতকারকদের ব্যাটারিও তৈরি করতে হবে। সরকার ব্যাটারি উৎপাদনে আলাদা উৎসাহ দিচ্ছে। ই-বাইক প্রস্তুতকারকদের নিজস্ব ব্যাটারি বানাতে বাধ্য করা হলে ব্যাটারি শিল্পের অন্য উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তখন আর বাইক প্রস্তুতকারকেরা আলাদা করে কারও কাছ থেকে ব্যাটারি কিনবেন না।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এনবিআরের শর্তে ই-বাইক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের কারখানায় প্লাস্টিক হাউজিং বা কেসিং তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (যেমন ইনজেকশন মোল্ডিং মেশিন, ড্রায়ার, গ্রাইন্ডার, পেইন্ট বুথ প্রভৃতি) বসাতে হবে। কিন্তু এই প্লাস্টিক হাউজিং বা কেসিং মূলত ব্যাটারির অংশ। অথচ ই-বাইক প্রস্তুতকারকদের এই ব্যাটারির অংশ তৈরি করতে বাধ্য করা হচ্ছে; বিষয়টি ব্যয়বহুল ও লাভজনক নয়, বরং তা ব্যাটারি–সংশ্লিষ্ট অন্য শিল্পের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এনবিআরের এসআরওতে ই-বাইক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব কারখানায় মোটর উৎপাদন করতে বলা হয়েছে। বর্তমানে দেশে মোটর উৎপাদনে উৎসাহ দিতে আলাদা প্রণোদনা রয়েছে। ই-বাইক প্রস্তুতকারীদের যদি মোটর তৈরি করতে বাধ্য করা হয়, তাহলে মোটর শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রজ্ঞাপনের আরেকটি ধারায় ই-বাইক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব কারখানায় প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড (পিসিবি) তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপনের শর্ত দেওয়া হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেছেন, পিসিবি সাধারণত মোবাইল ফোন বা এ ধরনের পণ্য উৎপাদন শিল্পে ব্যবহৃত হয়। ই-বাইক প্রস্তুতকারীদের জন্য পিসিবি উৎপাদন বাধ্যতামূলক করা যৌক্তিক নয়।
এনবিআরকে লেখা চিঠিতে বামা বলেছে, ওপরে উল্লেখিত শর্তগুলো শিথিল করা না হলে বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল উৎপাদনে নতুন উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবেন এবং শিল্প খাতের বিকাশ ব্যাহত হবে। ফলে সড়ক পরিবহন বিধিমালা ২০২২ অনুযায়ী শর্তগুলো পর্যালোচনা করে বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। অন্যথায় সরকার পরিবেশবান্ধব যানবাহনের দিকে যে গুরুত্ব দিচ্ছে, সেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে তারা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
৩৬ জুলাইকে জাতীয় মুক্তি দিবস ঘোষণাসহ ১৩ দাবি ইনকিলাব মঞ্চের
ছাত্র আন্দোলনের ৩৬ জুলাইকে জাতীয় মুক্তি দিবস ঘোষণাসহ ১৩ দফা দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।
সোমবার (১৬ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবির কথা জানায় সংগঠনটি।
সংগঠনটির মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদী বলেন, “আমাদের স্বাধীনতা দিবস আছে, বিজয় দিবস আছে, কিন্তু আমাদের মুক্তি ঘটেনি। তাই ঐতিকহাসিক ৩৬ জুলাইকে জাতীয় মুক্তি দিবস ঘোষণা করতে হবে। এ ছাড়াও জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার আগে জনগণের মতামতের জন্য তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।”
আরো পড়ুন:
বেগম রোকেয়া পদকের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান
নিরাপদ খাদ্য দিবস শনিবার: ‘নিরাপদ খাদ্য উচ্চ রক্তচাপ ঝুঁকি কমায়’
তিনি বলেন, “গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মৌলিক সংস্কার এবং ২০২৪ সালের গণহত্যার বিচার নিশ্চিত না করে দেশে যদি নির্বাচন আয়োজন করা হয়, তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘গাদ্দার’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে। এই সনদে ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের নিরিখে বৈষম্যবিরোধী ইনসাফভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র বিনির্মাণের সুস্পষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “সংবিধান থেকে জনবিরোধী ও জুলাই সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব ধারা উপধারা বাতিল করে জুলাই সনদকে সাংবিধানের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সব দল, মত এবং লিঙ্গের ন্যায্য শরিকানা নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে বলা হবে- আমরা বাংলাদেশের জনগণ এই ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান সম্পল্প করেছি।”
সংবাদ সম্মেলনে ইনকিলাব মঞ্চ ১৩টি প্রস্তাবনা তুলে ধরে, যা জুলাই সনদের কার্যকর প্রয়োগ ও জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে।
প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করা সব শহীদকে রাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ সন্তান ঘোষণা করতে হবে; যেসব জুলাই যোদ্ধার স্থায়ী অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে; ফ্যাসিবাদী আমলে সংঘটিত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোটারবিহীন অবৈধ নির্বাচন বাতিল করে সংশ্লিষ্ট দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এছাড়া ফ্যাসিবাদী আমলের সকল মন্ত্রী, এমপি ও দোষী আমলাসহ রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের বিচারের আওতায় এনে অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ জব্দ করে তা শহীদ ও আহতদের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে; দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা রক্ষায় ভারতীয় আধিপত্যবিরোধী ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে; জুলাই, পিলখানা ও শাপলা গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করে দেশি-বিদেশি অপশক্তি চিহ্নিত করতে হবে; রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক সংস্কার করতে হবে যাতে ফ্যাসিবাদ আর স্বৈরতান্ত্রিকতা কখনও ফিরে না আসে; ৩৬ জুলাইকে জাতীয় মুক্তি দিবস ঘোষণা করতে হবে।
বাকি দাবিগুলো হলো- জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী কল্যাণ রাষ্ট্রের রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে; সংবিধান থেকে জনবিরোধী ও জুলাই সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব ধারা বাতিল করে জুলাই সনদকে সংবিধানের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সব দল, মত ও লিঙ্গের ন্যায্য অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে; জুলাই সনদের ভাষাগত দুর্ব্যবহার পরিহার করে জনসাধারণের জন্য সহজ ভাষায় উপস্থাপন করতে হবে এবং সনদ চূড়ান্ত করার পূর্বে জনগণের মতামতের জন্য তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
আগামী ২৫ জুনের মধ্যে জুলাই সনদ ঘোষণা করা না হলে রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অভিমুখে ‘লাল মার্চ’ করার ঘোষণাও দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী