ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের রায়গড় জেলার মুম্বাই–পুনে এক্সপ্রেসওয়েতে গতকাল বুধবার এক সড়ক দুর্ঘটনায় কথিত ১২ জন বাংলাদেশি নাগরিক ও ১৯ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে এক পুলিশ সদস্যের আঘাত গুরুতর। আহত সবাইকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

‘বাংলাদেশি নাগরিক’ দাবি করে ভারতের পুলিশ ১৬০ ব্যক্তিকে আটক করেছে। তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর (পুশ ইন) জন্য সড়কপথে পুনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ১৯টি গাড়ির এক বিশাল বহরে আটক ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। মুম্বাই–পুনে এক্সপ্রেসওয়ের একটি সুড়ঙ্গ পথের কাছে বহরের একটি গাড়ি হঠাৎ ব্রেক কষায় একের পর এক গাড়িতে ধাক্কা লাগে।

এই ধাক্কায় বহরের চারটি গাড়ির ১৯ পুলিশ সদস্য এবং আটক ১২ ব্যক্তি আহত হন বলে পুলিশ জানায়। সংবাদ সংস্থা পিটিআই এ খবর দিয়ে বলেছে, রাজ্যের বিভিন্ন কারাগারে ওই ১৬০ ব্যক্তি বন্দী ছিলেন। বিশেষ ফ্লাইটে বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য সড়কপথে তাঁদের পুনে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

সরকারি বিবৃতিতে দাবি করা হয়, অনুপ্রবেশের পর বাংলাদেশি ওই নাগরিকেরা মুম্বাই মেট্রোপলিটন এলাকার বিভিন্ন স্থানে ‘অবৈধভাবে’ বসবাস করছিলেন। রাজ্য সরকারের বিশেষ অভিযানে তাঁদের আটক করা হয়।

পুলিশ সূত্র অনুযায়ী, তাঁদের বিভিন্ন জেলখানায় রাখা হয়েছিল। সরকারি নিয়ম মেনে তাঁদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। সে কারণে তাঁদের পুলিশি পাহারায় ১৯টি গাড়ির বহরে করে পুনে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। হঠাৎই দুর্ঘটনা ঘটে।

সরকারি সূত্র দাবি করেছে, আহত বাংলাদেশিদের চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাখা হবে। অন্যদের নিয়ম মেনে ফেরত পাঠানো হবে।

গত বছর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদল, এ বছরের এপ্রিল মাসে পেহেলগামকাণ্ড এবং মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের সময় থেকে ভারত সরকার ‘অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের’ চিহ্নিত ও শনাক্ত করার কাজে গতি আনে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন রাজ্য সরকারকে এ কাজ জরুরি ভিত্তিতে করার নির্দেশ দেন।

ভারত সরকারের হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এ পর্যন্ত অন্তত আড়াই হাজার ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ, তাঁরা সবাই অনুপ্রবেশকারী।

গত ২২ মে কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এমন ২ হাজার ৩৬৯ ‘অবৈধ অভিবাসীর’ নাগরিকত্ব যাচাই করে দেখতে বাংলাদেশকে অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে তাঁদের ফেরত পাঠানো যায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, এসব মানুষের মধ্যে পাঁচ বছরেও কারও কারও নাগরিকত্ব যাচাই করা হয়নি।

অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত, শনাক্ত ও জবরদস্তি ফেরত পাঠানোর কাজ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোয়। যেমন আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, দিল্লি, হরিয়ানা, গুজরাট ও মহারাষ্ট্র। পশ্চিমবঙ্গেও এই তৎপরতা চলছে, যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোয় বাংলাভাষী হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বহু ভারতীয় বাঙালিকে হয়রানি করা হচ্ছে।

এমনও হয়েছে, অনেক ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশি দাবি করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে। ভারতের মুম্বাইয়ের নাগরিক সমাজের সংস্থা সিটিজেনস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিসের (সিজেপি) প্রকাশিত এক দীর্ঘ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যে হাজার হাজার দরিদ্র এবং প্রধানত শ্রমিক শ্রেণির মানুষ ‘নিদ্রাহীন’ রাত কাটাচ্ছেন। কারণ, শত শত ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশি বলে আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়ে (বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’) দেওয়া হয়েছে।

সাংবাদিক, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী তিস্তা শেতেলবাদের এই সংস্থা জানিয়েছে, আসামের ৩৩ জেলার সর্বত্রই নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে ‘নারী, শিশু ও পুরুষদের’ বেআইনিভাবে আটক করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে।

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। যদিও পরে বাংলাদেশ তাঁদের ফিরিয়ে দেয়।

এসব ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশি দাবি করে ভারত যাঁদের বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা করছে, তাঁদের বেশির ভাগই মুসলমান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা বন্ধের আহ্বান ৯ ইইউ দেশের

অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নয়টি দেশ। বৃহস্পতিবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক চিঠির ভিত্তিতে ইউরোপীয় কমিশনের কাছে এই আহ্বান জানিয়েছে নয়টি দেশ। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইইউর পররাষ্ট্র নীতি প্রধান কাজা ক্যালাসকে পাঠানো চিঠিতে বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, স্পেন এবং সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা স্বাক্ষর করেছেন।

ইইউ ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার, যা তাদের মোট পণ্য বাণিজ্যের প্রায় এক তৃতীয়াংশ। গত বছর ব্লক এবং ইসরায়েলের মধ্যে দ্বিমুখী পণ্য বাণিজ্য ছিল ৪২.৬ বিলিয়ন ইউরো (৪৮.৯১ বিলিয়ন ডলার)। যদিও এই বাণিজ্যের কতটা অংশ বসতি স্থাপনের সঙ্গে জড়িত তা স্পষ্ট করা নেই চিঠিতে।

চিঠিতে মন্ত্রীরা ২০২৪ সালের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের উপদেষ্টা মতামতের দিকে ইঙ্গিত করেন। সেখানে বলা হয়, ফিলিস্তিনি অঞ্চলে বসতি স্থাপন এবং ইসরায়েলের দখল অবৈধ। 

এতে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য সম্পর্ক বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ