কার কথায় ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাঙা হচ্ছে, প্রশ্ন শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতাদের
Published: 19th, June 2025 GMT
ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় ‘অঞ্জলি লহ মোর’ নামের ভাস্কর্যটি কাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভাঙা হচ্ছিল, এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ছাত্রসংগঠন ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ভাস্কর্যটি ভাঙা হচ্ছিল বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি করলেও সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, তাঁরা কখনো এমন দাবির কথা প্রশাসনকে জানাননি।
সাবেক উপাচার্য সৌমিত্র শেখর দায়িত্বে থাকার সময় প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের কাজ হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ ভবনের সামনের পুকুরের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য নির্মাণ করা হয় অঞ্জলি লহ মোর ভাস্কর্য। ভাস্কর মনিন্দ্র পাল এটি নির্মাণ করেছিলেন।
মনিন্দ্র পাল প্রথম আলোকে বলেন, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু করে অক্টোবরে শেষ করা হয়। ভাস্কর্য নির্মাণে ১৫ লাখ টাকায় চুক্তি হলেও তিনি আট লাখ টাকা পেয়েছেন। বাকি টাকা দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে মঙ্গলবার ভাস্কর্যটি ভাঙার খবর পেয়ে খুবই মর্মাহত হয়েছেন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি চলাকালীন গত মঙ্গলবার ভাস্কর্যটি ভাঙা শুরু হয়। ভাস্কর্যটির বেশ কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়। পরে এ নিয়ে প্রতিবাদ শুরু হলে ভাঙার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধনও করেছেন কিছু শিক্ষার্থী। ভাস্কর্যটি ভাঙার ঘটনায় সামজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরাও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম ছুটিতে থাকায় উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন ট্রেজারার অধ্যাপক জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় বিগত সময়ে একক সিদ্ধান্তে ভাস্কর্যটি করা হয়েছিল, কিন্তু প্রকল্পের পুরো কাজ সম্পন্ন করেনি। পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের (অংশীজন) কাছ থেকে এটি ভেঙে ফেলার প্রস্তাব আসে এবং এটি ভাঙার চেষ্টাও করে তারা। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও বৈষম্যবিরোধীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙা হয়েছে, নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। সেটির অংশ হিসেবেই গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে বিভিন্ন অনুষদের ডিনসহ সবাইকে নিয়ে ভাস্কর্যটি ভাঙার ব্যাপারে একটা অনানুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ইতিমধ্যে জুম মিটিং করে ভাস্কর্যটি ভাঙা বন্ধ করা হয়েছে। এটি যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় রেখে কীভাবে সৌন্দর্যবর্ধন করা যায়, সে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তবে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ইমরান প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দলীয় পক্ষ থেকে ভাস্কর্যটি ভাঙার বিষয়ে কখনো দাবি তোলা হয়নি। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যবর্ধনের যেকোনো কাজ ভাঙা ঠিক না। পলিটিক্যাল কিছু বিষয় থাকে, সেগুলো আলাদা। সাংস্কৃতিক বা সৌন্দর্যবর্ধনের কিছু ভাঙার বিষয়ে আমরা কখনো একমত নই। ভাঙাগড়ার খেলার মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় আমরা সমর্থন করি না।’
এটি ভাঙায় টাকা খরচ হয়েছে, নির্মাণে টাকা খরচ হয়েছে। এটি যদি আবার এখন সংস্কার করা হয়, তাহলে আবার টাকা খরচ হবে। এভাবে কেন রাষ্ট্রের টাকা খরচ করা হবে?হৃদয় চন্দ্র সূত্রধর, শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়বাংলাদেশ ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদ কবীরও জানিয়েছেন ভাস্কর্যটি ভাঙার বিষয়ে তাঁদের পক্ষ থেকে কোনো দাবি জানানো হয়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাময়িক কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন রাজু শেখ। ভাস্কর্য ভাঙার বিষয়ে তাঁদের পক্ষ থেকে কোনো দাবি জানানো হয়েছিল কি না—এমন প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও ময়মনসিংহ নগরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শুরু থেকে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জেনাস ভৌমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে ভাস্কর্যটি ভাঙার দাবি কখনো ছিল না। এটি ভাঙার জন্য কাদের দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্পষ্ট নাম বলতে হবে এবং প্রমাণ দিতে হবে। কারও ওপর শুধু দায় চাপিয়ে দিলে হবে না।’
ভাঙা ভাস্কর্য দেখে অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক র ভ স কর য প রকল প র স ন দর য অবস থ নজর ল
এছাড়াও পড়ুন:
নেত্রকোনায় স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে স্বামীর বাড়িতে অনশন
ভালোবেসে বিয়ে, পরিবারের সম্মতি না থাকায় কিছুটা গোপনে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে সম্পন্ন হয়। এরপর ময়মনসিংহ শহরে ভাড়া বাসায় সংসার পাতেন তারা। বছর যেতে না যেতে বেজে ওঠে ভাঙনের সুর। কনের দাবি, তার স্বামী আরেজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে বিয়ে করতে চান এবং তাদের বিয়ে অস্বীকার করেন। তাই পারিবারিক স্বীকৃতির দাবিতে গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভুক্তভোগী তার স্বামীর বাড়িতে এসে ওঠেন।
নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলা সদর ইউনিয়নের ছোছাউড়া গ্রামের আলাল মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি সমাধান করতে শনিবার (২ আগস্ট) সকালে উভয় পরিবার আলোচনায় বসার কথা ছিল। বিকেল পর্যন্ত আলোচনায় বসেনি।
আলাল মিয়ার ছেলে হানিফ মিয়ার সঙ্গে ওই নারীর বিয়ে হয়েছে। ভুক্তভোগী নারীর উপস্থিতি টের পেয়ে হানিফ মিয়া বসত ঘরে তালা দিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। উপায় না পেয়ে ওই মেয়ে ঘরের বারান্দায় অনশনে বসেন স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে। ভুক্তভোগী নারী একই উপজেলার বাসিন্দা। তিনি ময়মনসিংহ একটি বেসরকারি হাসপাতালে সেবিকার চাকরি করেন।
আরো পড়ুন:
বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশনে নারী
সেশনজট নিরসনের দাবিতে চবির শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন
ওই নারী জানান, কলেজ জীবনের লেখাপড়া করার সময় হানিফ মিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তারা গোপনে বিয়ে করেন। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের দিঘারকান্দা এলাকার কাজী মো. নাদিরুজ্জামান আলম ২০২৩ সালের ২১ জুন তাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি করান। তারপর হানিফ মিয়ার ফুপাত বোন ময়মনসিংহে বসবাসকারী রিনা আক্তারের বাসায় তারা ভাড়ায় ওঠেন। সেখানে তাদের প্রায় এক বছর সংসার চলে। এরই মধ্যে হানিফ মিয়া তার এক নিকটাত্মীয়ের মেয়ের সঙ্গে প্রেমে জড়ান। এতে তাদের সংসারে ভাঙন সৃষ্টি হয়। বিষয়টি পরিবারের লোকজনের মাঝে জানাজানি হলে তাদের আলাপ আলোচনায় সমাধান হয়নি। উল্টো ওই মেয়ের ওই সঙ্গে হানিফের পরিবারে লোকজন তাদের বিয়ের কথা পাকাপাকি করতে থাকে।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘‘এই অবস্থায় আমার আর কোনো উপায় না থাকায় স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকালে শ্বশুর বাড়িতে এসেছি। এখানে তারা আমাকে গ্রহণ না করে উল্টো মারধর করেছেন। এখানে অবস্থান নেয়ার পর তারা ঘরে তালা লাগিয়ে চলে গেছেন। তারপরও আমি আমার দাবি আদায় ছাড়া যাবো না।’’
ময়মনসিংহে ভাড়া বাসার মালিক হানিফের ফুফাত বোন রিনা আক্তার জানান, প্রায় দুই বছর আগে হানিফের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হয়। এখন হানিফ তার সঙ্গে সংসার করতে চাচ্ছে না। এতে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হানিফের মোবাইল নম্বরে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।
হানিফ মিয়ার বাবা আলাল মিয়া বলেন, ‘‘বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে হানিফের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করতে পারছি না। তার সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হবে।’’
পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ নূরে আলম জানান, এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে দুই পক্ষের পরিবারের লোকজন সমাধান করতে আলোচনায় বসার কথা তিনি শুনেছেন।
ঢাকা/কামাল/বকুল