কুমিল্লায় ইয়াবাসহ আটকের কয়েক ঘণ্টা পর ‘পুলিশ হেফাজতে’ মারা যাওয়া ইন্টারনেট ব্যবসায়ী শেখ জুয়েলকে (৪৫) নিজেদের কর্মী বলে দাবি করছে স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। এদিকে জুয়েলের পরিবার বলছে, ‘পুলিশের নির্যাতনে’ তার মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে জুয়েলসহ ৫ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে রাতে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার মৃত্যু হয়। তিনি মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা গ্রামের মৃত শেখ গোলাম সারোয়ারের ছেলে। 

রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন ভূইয়া সমকালকে বলেছেন, জুয়েল আমাদের দলের (বিএনপি) সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তার ভাই শাহ পরান বাঙ্গরা পূর্ব ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। জুয়েলকে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবি করেছেন। 

সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের ছোট ভাই কাজী শাহ আরফিন ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘মুরাদনগরের বাঙ্গরা থানায় পুলিশের হেফাজতে বিএনপির একজন কর্মী নিহত হয়েছেন, যার বিরুদ্ধে কোনো মামলাই ছিল না। এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

অন্যদিকে মুরাদনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক শাহেদুল আলম শাহেদ নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে জুয়েলকে বাঙ্গরা ইউনিয়ন যুবলীগের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দাবি করেন।  

জুয়েলের চাচাতো ভাই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘সে (জুয়েল) আমার সঙ্গে রাজনীতি করতো। তবে ৫ আগস্টের পর তো এখন সবাই বিএনপি।’ 

শেখ জুয়েলের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতেও জাতীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে বেশ কিছু পোস্ট দেখা গেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাঙ্গরা বাজার ব্রিক ফিন্ডের পূর্ব পাশে মাদক কারবারি হেলালের বাড়ি থেকে ৭০টি ইয়াবাসহ জুয়েল ও তার ৪ সহযোগীকে আটক করা হয়। আটক ৫ জনের বিরুদ্ধে সন্ধ্যায় মাদক আইনে মামলা হয়। জুয়েল ছাড়া বাকি চারজন হলেন- মালিক বাঙ্গরা গ্রামের মাদক কারবারি মো.

হেলাল (৪২), তার স্ত্রী শারমিন প্রকাশে সখিনা (৩৫), একই গ্রামের খোকন (৪৫) ও পাশের দৌলবাড়ি গ্রামের মো. হান্নান (২১)।

বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘রাতে হাজতে জুয়েল বুকের ব্যথার কথা ডিউটি অফিসারকে জানালে তাকে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

ওসির ভাষ্য, মাদক কারবারি হেলালের বাড়ি থেকে জুয়েলসহ যাদের আটক করা হয়েছে, তারা সকলেই মাদক সেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। হেলালের বিরুদ্ধে মাদকের ৪টি মামলা আছে।

পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ স্ত্রীর

জুয়েলের স্ত্রী শিল্পী বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মাদক সেবন কিংবা বিক্রিতে জড়িত ছিলেন না। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জুয়েল ইন্টারনেটের বিল কালেকশন করতে যায়। দুপুরের পরপরই খবর পাই যে আমার স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। পরে থানায় গিয়ে স্বামীর সঙ্গে দেখা করি। তখন তিনি আমাকে বলেন- আমি কিছু করিনি আমাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করো। রাতে খবর পাই তাকে মুরাদনগর হাসপাতালে নিয়ে গেছে। আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার স্বামী আর বেঁচে নেই। পুলিশ আমার স্বামীকে মেরে ফেলছে।’

তিনি আরও বলেন, জুয়েল অনেক আগে স্ট্রোক করেছিল, অনেকদিন ধরে সুস্থ ছিলেন। এখন তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে পুলিশ প্রচার করছে।’

মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল ইসলাম মানিক বলেন, রাত আটটা ৫০ মিনিটে ভিকটিমকে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত দেখতে পাই। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। এদিকে মৃত্যুর খবর এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজন রাতে বাঙ্গরা বাজার থানার সামনে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

‘পুলিশ কোনো ধরনের মানসিক কিংবা শারীরিক নির্যাতন করেনি’

এ বিষয়ে কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. নাজির আহমেদ খান সমকালকে বলেন, ‘পুলিশ হেফাজতে ওই ব্যক্তিকে নির্যাতন করা হয়নি, তিনি হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন, বুকের ব্যথা শুরু হলে হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি (জুয়েল) মারা যান।’

তিনি বলেন, ‘৭০টি ইয়াবাসহ পাঁচ জনকে ধরে বৃহস্পতিবার বিকালে থানায় আনার পর জুয়েল রাত সোয়া আটটার দিকে তার বুকে ব্যথা অনুভব করার কথা ডিউটি অফিসারকে জানান। এ সময় পুলিশ দ্রুত তাকে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।’ 

এসপি নাজির বলেন, ‘পুলিশ তাকে কোনো ধরনের মানসিক কিংবা শারীরিক নির্যাতন করেনি। পরিবারের পক্ষ থেকে নির্যাতনে জুয়েলের মৃত্যুর অভিযোগটি সঠিক নয়। মৃত্যুর ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।  ময়নাতদন্তে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বের হয়ে আসবে, সেই অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হত ম র দনগর উপজ ল আম র স ব ম জ য় লক ব এনপ খবর প

এছাড়াও পড়ুন:

ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার বিএনপি কর্মীর পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু, নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ পরিবারের

কুমিল্লার মুরাদনগরে গতকাল বৃহস্পতিবার ৭০টি ইয়াবাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে শেখ জুয়েল (৪৫) নামে একজন পুলিশ হেফাজতে মারা গেছেন।

নিহত জুয়েল উপজেলার বাঙ্গরা গ্রামের শেখ বাড়ির প্রয়াত শেখ গোলাম সারোয়ারের ছেলে। তাঁর ওই এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার ব্যবসা ছিল। তিনি বিএনপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন বলে জানিয়েছেন মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন। তাঁর ভাই বাঙ্গরা পূর্ব ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনে জুয়েলের মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশ জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার বাঙ্গরা এলাকা থেকে পাঁচজনকে মাদক সেবনের সময় গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে ৭০টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁদের থানায় নেওয়া হয়। থানায় আনার পর শেখ জুয়েল অসুস্থবোধ করলে তাঁকে রাত ৮টা ৫০ মিনিটে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ জুয়েলকে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।’

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, শেখ জুয়েল একজন চিহ্নিত মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। তাঁর মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ জানতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রয়োজন। তবে তাঁর শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।

শেখ জুয়েলের চাচাতো ভাই ও স্থানীয় বিএনপি নেতা শেখ সফিকুল ইসলাম বলেন, বাঙ্গরা বাজার থানার এসআই আল-আমিনের নেতৃত্বে জুয়েলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি (এসআই আল-আমিন) জানান, জুয়েলকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

আটক করার পর শেখ জুয়েলকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন তাঁর স্ত্রী শিল্পী বেগম। তিনি বলেন, ‘(গতকাল) দুপুরের পর জানতে পারি, পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে গেছে। থানায় গিয়ে দেখা করি। তিনি সুস্থ ছিলেন। আমাকে বলেন, “আমি কিছু করিনি, আমাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা কর।” এরপর খবর পাই তিনি মারা গেছেন। একজন সুস্থ মানুষ এভাবে মারা যেতে পারে না। তাঁকে নির্যাতন করে মারা হয়েছে।’

এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন বিএনপির নেতারা। গতকাল রাতে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেনের (কায়কোবাদ) ছোট ভাই কাজী শাহ আরফিন ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘মুরাদনগরের বাঙ্গরা থানায় পুলিশের হেফাজতে বিএনপির একজন কর্মী নিহত হয়েছেন, যার বিরুদ্ধে কোনো মামলাই ছিল না। একটি স্বাধীন দেশের থানায় বিনা অপরাধে এভাবে একজন নাগরিকের মৃত্যু শুধু অমানবিকই নয়, এটি রাষ্ট্রীয় অপব্যবহার ও দমননীতির নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। ন্যায়বিচারের নামে যদি মানুষ হত্যা হয়, তাহলে সেটাকে বিচার নয়, বর্বরতা বলা হয়। এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুরতহাল প্রতিবেদনে আঘাতের চিহ্ন, নির্যাতনের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলছে পুলিশ
  • ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার বিএনপি কর্মীর পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু, নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ পরিবারের
  • কুমিল্লায় পুলিশ হেফাজতে বিএনপি কর্মীর মৃত্যুর অভিযোগ
  • ইয়াবাসহ আটকের পর বিএনপি কর্মীর মৃত্যু, থানার সামনে স্থানীয়দের বিক্ষোভ