শিশুটির বয়স সাত বছর। গায়ে নীল পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি আর কাঁধে ঝোলানো সাদা পাগড়ি। দুই হাতে লাল ও আকাশি রঙের দুটি শপিং ব্যাগ। হাঁটছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এক পর্যায়ে হাতের ব্যাগসহ সড়কে পড়ে যায় সে। নীল শপিং ব্যাগের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে প্যাঁচিয়ে রাখা লোহার শিকলের একাংশ; যার অপর প্রান্ত শিশুটির বাম পায়ের গোড়ালির সঙ্গে তালা দিয়ে আটকানো।
পায়ে বাঁধা শিকল আর ব্যাগে রাখা তার বাকি অংশের ভারেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে আরাফাত নামের ওই শিশু।  তড়িঘড়ি করে শিশুটি শিকলের অপরপ্রান্ত ব্যাগে রেখে দিয়ে আবারও বাড়ির দিকে রওনা দেয়। শিকলের ভারে ঠিকমতো হাঁটতে না পারা শিশুটির নাম আরাফাত। জানা যায়, ধর্মপাশা উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের জামিয়া ইসলামিয়া দেওয়ানগঞ্জ মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ও নওধার গ্রামের হবিকুল মিয়ার ছেলে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে ওই ইউনিয়নের গাছতলা বাজারের উত্তরপাশে শিশু আরাফাতের এই অবস্থা নজরে আসে সমকাল প্রতিনিধির। এরপরই এর বিস্তারিত অনুসন্ধানে ওই মাদ্রাসা ও সংলগ্ন এলাকায় খোঁজ নেওয়া হয়। এদিকে চোখেমুখে আতঙ্ক আর অসহায়ত্ব নিয়ে পথে বাবার দেখা পেলেও নীরব ছিল শিশুটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই মাদ্রাসার শিক্ষক সাঈদ হাসান ওরফে রিপন শিশু আরাফাতের পায়ে শিকল পরিয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে মাদ্রাসায় যান আরাফাতের বাবা। এদিকে বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার খবর শুনে প্রতিষ্ঠান থেকে সরে পড়েন অভিযুক্ত শিক্ষক। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষসহ অন্য কয়েকজন শিক্ষককে মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ মুফতি আশরাফ আলীসহ উপস্থিত শিক্ষকদের কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ হলে বিষয়টি তাদের জানানো হয়। জানা যায়, শিশুটির বাবাও তাদের অবগত করেছেন। প্রতিষ্ঠানপ্রধান এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের দায়ী করেন। তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা বেশি দুষ্টুমি করলে বা পালিয়ে গেলে অভিভাবকরা এ ধরনের শিকল লাগিয়ে দিয়ে যান। তারা সেটি করেন না। অভিভাবকরা শিকলে আবদ্ধ রেখে গেলে তারা দুই-চার দিন অভিভাবকদের মন রক্ষার্থে এভাবে রাখার পর সেটি খুলে দেন।
আরাফাতের বাবা হবিকুল প্রতিষ্ঠানপ্রধানের বক্ত্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, শিকল পরানোর জন্য কাউকে কোনো অনুমতি দেননি তিনি। ওই সময় সেখানে উপস্থিত সুফিয়ান নামে আরেকজন শিক্ষার্থী জানায়, তাকেও বছরখানেক আগে দুই মাস তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। 
খবর শুনে মাদ্রাসায় আসেন আরাফাতের মামা জসিম উদ্দিন। সে সময় প্রতিষ্ঠানে ছিলেন অধ্যক্ষ। তাঁর সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন মামা জসিম। আরাফাতের পরিবারের পক্ষ থেকে দ্রুত শিকলের তালা খুলে দিতে বলেন। পরে গাছতলা বাজারে নিয়ে তালা ভেঙে শিকল খোলা হয়।
মোবাইল ফোনে অভিযুক্ত শিক্ষক সাঈদ হাসান বলেন, আরাফাত খুব দুষ্টুমি করে আর পালিয়ে যায়। সে সম্পর্কে ভাতিজা হওয়ায় শাসন করতে গিয়ে শিকল লাগিয়েছিলেন। এমনটি করা উচিত হয়নি।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি আশরাফ আলী এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। 
প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আল্লাদ মিয়া বলেন, ওই শিক্ষককে বহিষ্কার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অধ্যক্ষকে বলা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আর ফ ত র শ কল র

এছাড়াও পড়ুন:

চার শতাধিক প্রোগ্রামার নিয়ে রাজধানীতে ‘হিরোইউনিয়ন’

সারাদেশের চার শতাধিক প্রোগ্রামারকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্যতিক্রমী মিললমেলা। শুক্রবার রাজধানীর আইডিইবি অডিটোরিয়ামে দিনব্যাপী এ মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। ‘হিরোইউনিয়ন’ শীর্ষক এ আয়োজনে সারাদেশের উদীয়মান প্রোগ্রামিং প্রফেশনালসরা অংশ নেয়। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এডটেক প্রতিষ্ঠান ‘প্রোগ্রামিং হিরো’।

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন প্রোগ্রামার ও প্রোগ্রামিং হিরো–এর প্রধান নির্বাহী (সিইও) ঝংকার মাহবুব। আরও উপস্থিত ছিলেন সফটওয়্যার কোম্পানি ব্রেইন স্টেশন ২৩–এর সিইও রাইসুল কবির, ব্র্যাক আইটিস-এর সিনিয়র টেকনোলজি অ্যাডভাইজার শাহ আলি নেওয়াজ তপুসহ অন্যান্য প্রযুক্তিবিদ ও ইন্ডাস্ট্রি লিডাররা।

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ঝংকার মাহবুব বলেন, সামনে যতই এআই টুল আসুক না কেন, আমাদের সেটিকে কাজে লাগিয়ে নিজের কোডিং স্কিল ও প্রোডাক্টিভিটি বাড়িয়ে নিতে হবে। লিংকডইনের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে— গিটহাব কো-পাইলটের মতো এআই টুল ব্যবহার করলে একজন প্রোগ্রামারের কোড লেখার গতি গড়ে ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে। তবে কোড লেখা যত সহজই হোক না কেন, ফিচার টেস্টিং, বাগ ফিক্সিংয়ের জন্য দক্ষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের প্রয়োজন থেকেই যাবে। তাই প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে, এআইকে সহযোগী করে, নিজেদের দক্ষতা অব্যাহতভাবে বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানের শেষে গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের মাঝে সার্টিফিকেট ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে ইন্টার‌অ্যাক্টিভ লার্নিং অ্যাপের মাধ্যমে ‘প্রোগ্রামিং হিরো’র যাত্রা শুরু হয়। এতে মজার ছলে প্রোগ্রামিং শেখার সুযোগ পেত শিক্ষার্থীরা। পরে এডটেক ইন্ডাস্ট্রির প্রচলিত কাঠামো থেকে বের হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ গাইডেড লার্নিং এনভায়রনমেন্ট গড়ে তোলে প্রতিষ্ঠানটি; যেখানে একজন শিক্ষার্থী শূন্য থেকে শুরু করে জব–রেডি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ওঠার জন্য ধারাবাহিকভাবে উন্নত ট্রেনিং পেয়ে থাকে। গত পাঁচ বছরে প্রোগ্রামিং হিরো ইতিমধ্যে ৬০টিরও বেশি দেশে ২ হাজার ২৬০ কোম্পানিতে ৪ হাজার ৭০০ জনের শিক্ষার্থীকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ