Samakal:
2025-11-03@22:32:42 GMT

ঢাকার বুকে স্বপ্নের গ্রাম

Published: 3rd, July 2025 GMT

ঢাকার বুকে স্বপ্নের গ্রাম

চারপাশে দালান, কংক্রিট, কাচ আর ধুলোর স্তূপ। ঢাকা শহরের এমন চেনা দৃশ্যের মাঝে হঠাৎ যদি কোথাও চোখে পড়ে ঘাসে মোড়া প্রান্তর, বাঁশ-কাঠের দোতলা ঘর, স্বচ্ছ লেকে মাছের লুকোচুরি, পাতায় পাতায় খেলা করা আলো! রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় বৃক্ষমেলায় দেখা মিলবে এমনই স্বপ্নঘেরা এক টুকরো গ্রাম। যেন শহুরে কোলাহল থেকে খানিকটা মুক্তির আশ্বাস; প্রকৃতির কোলে ফিরে যাওয়ার নীরব আমন্ত্রণ।

বৃক্ষমেলায় প্রবেশ করে ডান পাশে গিয়ে ঘাসের ওপর পা রাখতেই নরম পরশ লাগে। পাশেই পানির শব্দ, গাছের ফাঁকে দোল খাচ্ছে কাঠের দোলনা। কেউ বসে আছে, কেউ ছবি তুলছে। অনেকে নিঃশব্দে তাকিয়ে আছেন শুধু প্রকৃতির দিকে। 

এই সবুজ স্বপ্নের পেছনের কারিগর মো.

রকিবুল আমিন। একজন প্রকৃতিপ্রেমী, যিনি শখ থেকেই গড়ে তুলেছেন একটি পূর্ণাঙ্গ ল্যান্ডস্কেপ প্রতিষ্ঠান ‘গার্ডেনিং বাংলাদেশ’। তাঁর স্বপ্ন শহরের প্রতি প্রান্তে এক চিলতে প্রকৃতি ফিরিয়ে আনা। ‘গার্ডেনিং বাংলাদেশ’ গড়ে তোলে অনুভূতির পরিসর। ঘরের কোণা, ছাদ, বারান্দা, দেয়াল কিংবা সিঁড়ি, যেখানে খানিকটা জায়গা মেলে, সেখানে গাছ আর প্রকৃতির ছোঁয়া পৌঁছে দিতে চায় তারা।

গার্ডেনিং বাংলাদেশের কর্ণধার রকিবুল আমিনের শিকড় কুষ্টিয়ায়। ছোটবেলা থেকেই গাছের সঙ্গে তাঁর সখ্য। বাড়ির উঠোনে গড়া ফুলের বাগান, নানা রকম গাছের পরিচর্যা, পুকুরপাড়ে কাটানো দিন– সব মিলিয়ে প্রকৃতিই হয়ে ওঠে তাঁর প্রথম পাঠশালা। তাঁর ভাষায়, ‘বড় হয়ে দেখি শহরে মানুষ চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ। সবুজ বলে কিছু নেই। এই অভাবটাই আমাকে নাড়া দেয়।’

ঢাকায় এসে বুঝলেন, এখানে গাছের চেয়ে ইটের দেয়াল বেশি। শিশুরা পাতার গন্ধ চেনে না; মাটিতে পা না দিয়েই বড় হয়। তখন তিনি ভেবেছিলেন, ‘মানুষের ঘরে যদি ফিরিয়ে দিতে পারি প্রকৃতির স্পর্শ, তাহলে তো শহরও একটু গ্রাম হয়ে উঠবে।’

ছাত্র অবস্থায় বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে রাজধানীর শাহবাগে ১৪শ টাকার গোলাপ কিনে বিক্রি শুরু করেছিলেন রকিবুল। এক ঘণ্টা ভালো বিক্রির পরই নামল বৃষ্টি। এতে সব ফুল নষ্ট হয়ে যায়। লোকসান গুনলেন, কিন্তু পথ হারালেন না। ২০০৮ সালে বসুন্ধরা সিটিতে ভাড়া নিলেন ছোট দোকান; নাম দিলেন ‘একেশিয়া’। প্রথমে তেমন লাভ না হলেও একদিন ইনডোর প্লান্ট বিক্রি করে পেলেন চমক– ৭৫ হাজার টাকা! সেখান থেকে শুরু। পরে প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে রাখলেন ‘গার্ডেনিং বাংলাদেশ’।

আজ তাঁর প্রতিষ্ঠান বছরে আয় করে প্রায় কোটি টাকা। ইতোমধ্যে শতাধিক ছোট-বড় ল্যান্ডস্কেপ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে তারা। ‘গার্ডেনিং বাংলাদেশ’ গড়ে তোলে একেকটা জীবন্ত পরিমণ্ডল। টেরারিয়াম– কাচের পাত্রে তৈরি ক্ষুদ্র ইকোসিস্টেম। পেলুডারিয়াম– যেখানে জল আর স্থলের মিশেলে তৈরি হয় এক টুকরো বৃষ্টিবন। এসব তৈরি হয় পরম যত্নে; শিল্পের মতো। ঘরের ভেতরে এমন প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ হন অনেকেই। ছোট পাত্রে যেন সেঁধিয়ে আছে গোটা জঙ্গল কিংবা ঝরনার পাশে বসে থাকা এক পাখির সকাল।

রকিবুল বলেন, ‘সবুজটা হারিয়ে যাচ্ছে। গাছের পাতা ছুঁয়ে দেখার অভ্যাস হারিয়ে ফেলছে মানুষ। আমি চাই, প্রত্যেক মানুষ প্রতিদিন অন্তত একবার গাছের সঙ্গে কথা বলুক। তাদের ঘরে, ছাদে গাছ থাকুক। সবুজ দেখলে চোখের ক্লান্তি কেটে যায়; মন শান্ত হয়। আমি চাই মানুষ তাদের জীবনে সেই প্রশান্তিটুকু ফিরে পাক। এটাই আমার যুদ্ধ।’

রকিবুলের প্রতিষ্ঠান জিরো সয়েল ধারণা নিয়ে কাজ করছে। তিনি চান খোলা কোনো মাটিকে অনাবৃত রাখা যাবে না। ঘাস, লতা বা উদ্ভিদ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে সব ফাঁকা জায়গা। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রক ত র রক ব ল

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ