কুমিল্লার মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার পর ‘মূল হোতা’ ও মামলার প্রধান আসামি আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ গ্রেপ্তার না হওয়ায় আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন বাদী। তিনি বলেছেন, চারদিক থেকে খুনের হুমকি আসায় আতঙ্কে বাড়িতে যেতে পারছেন না তিনি।

মামলাটির বাদী নিহত রোকসানা বেগমের মেয়ে রিক্তা আক্তার। আজ সোমবার দুপুরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুনিরা চেয়েছিল আমাদের নির্বংশ করার জন্য। আমি খুনিদের প্রত্যেকের ফাঁসি চাই। শিমুল চেয়ারম্যান এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমরা বেশি আতঙ্কে আছি। শিমুল চেয়ারম্যানই মূল হোতা। ঘটনার সময় সে খুনিদের বলেছে, “রুবির বংশ নির্বংশ কইরা দিতে হইবো। ২০টা মামলায়ও যদি তোরারে আসামি করে, আমি তোরারে ছাড়াইয়া আনমু।” শিমুল চেয়ারম্যান ঘটনার সময় নেতৃত্ব দিয়েছে। সে আসামিদের বলেছে, “সবডিরে পিটাইয়া আর কোপাইয়া মাইরালা।” আমরা এখন বাড়িতে যেতেও ভয় পাচ্ছি। চারদিক থেকে খুনের হুমকি আসছে।’

গত বৃহস্পতিবার উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে ‘মব’ সৃষ্টি করে একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা করা হয়। তাঁরা হলেন কড়ইবাড়ি গ্রামের রোকসানা বেগম ওরফে রুবি (৫৩), তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও মেয়ে তাসপিয়া আক্তার ওরফে জোনাকি (২৯)। এ ছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন রোকসানার আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৭)।

এ ঘটনায় ৮ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ওই আটজন বর্তমানে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। আজ দুপুরে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ১১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মমিনুল হকের আদালতে আসামিদের ৫ দিন করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হয়। তবে আদালত থেকে এখনো রিমান্ড শুনানির সময় জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো.

সাদেকুর রহমান।

আজ দুপুরে নিহত তাসপিয়া আক্তার ওরফে জোনাকির স্বামী মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুনিরা এখন চায় আমাকে আর রিক্তা আপাকে খুন করতে। তাঁরা জানে, আমাদের খুন করলে মামলা নিয়ে লড়ার মতো কেউ থাকবে না। আমরা নিজেদের জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি। এই তিন খুনের মাস্টারমাইন্ড চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। এ ছাড়া সব আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে আমাদের তারা যেকোনো সময় খুন করতে পারে।’

আরও পড়ুনআড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর আর স্বীকারোক্তি দেননি ‘অন্যতম পরিকল্পনাকারী’২০ ঘণ্টা আগে

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাঙ্গরা বাজার থানার উপপরিদর্শক মো. আবু তাহের ভূঁইয়া আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিমুল চেয়ারম্যানসহ সব আসামি বর্তমানে পলাতক। আসামিদের ধরতে আমরা বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। আর বাদী ও তাঁর স্বজনেরা বর্তমানে বাড়িতে থাকছেন না। পুলিশ ঘটনার শুরু থেকেই নিহত ব্যক্তিদের বাড়িসহ এলাকায় নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে।’

আরও পড়ুনস্থানীয় ইউপি সদস্যের পরিকল্পনায় মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে তিনজনকে হত্যা০৫ জুলাই ২০২৫

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মুরাদনগরের সেই নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ছড়ানোর ‘নেপথ্যের’ ব্যক্তি কারাগারে

কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের পর সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানোর ‘নেপথ্যের’ ব্যক্তি শাহ পরানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। শাহ পরান ওই নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার ফজর আলীর আপন ছোট ভাই।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলার বুড়িচং এলাকা থেকে শাহ পরানকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। পরদিন শুক্রবার ঢাকায় র‍্যাব-১১-এর মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনার বিস্তারিত জানানো হয়। পরে সন্ধ্যায় শাহ পরানকে মুরাদনগর থানায় হস্তান্তর করে র‍্যাব।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুরাদনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমীন আজ প্রথম আলোকে বলেন, শাহ পরানকে নারী নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তাঁকে রিমান্ডে নিতে আগামীকাল রোববার আদালতে আবেদন করা হবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মমিনুল হক শুনানি শেষে ২৮ জুন গ্রেপ্তার হওয়া চার আসামি—মোহাম্মদ আলী ওরফে সুমন, রমজান আলী, মো. আরিফ ও মো. অনিকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আজ শনিবার দুপুরে তাঁদের কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুরাদনগর থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে।

আজ বেলা আড়াইটার দিকে এসআই রুহুল আমীন বলেন, ‘আদালত তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করায় চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কারাগার থেকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, তাঁদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।’

এদিকে পাশবিক নির্যাতনের মামলার একমাত্র আসামি ফজর আলী এখনো কুমিল্লা পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার সময় স্থানীয় লোকজন পিটিয়ে তাঁর হাত-পা ভেঙে দেন। পুলিশ ২৯ জুন ভোরে তাঁকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। তাঁকে আদালতে হাজির করার বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, চিকিৎসক ছাড়পত্র দিলেই তাঁকে আদালতে হাজির করা হবে। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

২৯ জুন নারী নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছিল। নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার করা না গেলেও পুলিশ বলছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাঁরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

এসআই রুহুল আমীন বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে যাঁদের শনাক্ত করেছি, তাঁরা এলাকা থেকে পালিয়ে গেছেন। তাঁদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমাদের অভিযান চলছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িত সবাই আইনের আওতায় আসবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘চেয়ারম্যানের ডিকলারের পরই সবাই হামলা চালায়’, ভিডিওতে বললেন বেঁচে যাওয়া তরুণী
  • ‘চেয়ারম্যানের ডিকলারের পরই সবায় হামলা চালায়’, ভিডিওতে বললেন বেঁচে যাওয়া তরুণী
  • সমকামীতার জেরে রূপগঞ্জে পারভেজকে হত্যা , গ্রেপ্তার ২
  • নরসিংদীতে চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবককে গণধোলাই 
  • মুরাদনগরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থেকে সামাজিক অস্থিরতা
  • নিষ্ক্রিয়তার বিপজ্জনক মাশুল
  • মুরাদনগরে গ্রেপ্তার শাহ পরান কারাগারে
  • মুরাদনগরের সেই নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ছড়ানোর ‘নেপথ্যের’ ব্যক্তি কারাগারে
  • মুরাদনগরে ছেলেমেয়েসহ মাকে হত্যা: ৬৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তা