লক্ষ্ণৌর এক কুয়াশাময় সকাল। নিস্তব্ধতা ভেঙে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে একটি কালো রঙের এসইউভি। গাড়ি থেকে নামেন একজন। চোখে কালো চশমা, হাতে একটি পুরোনো রিভলবার। চারপাশের গলি যেন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে তার চলার অপেক্ষায়। তার নাম ‘মালিক’। এ শুধু একটি নাম নয়– এক সময়ের চিহ্ন, এক নির্ধারিত বাস্তবতার প্রতীক। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাজকুমার রাও। যিনি তাঁর ক্যারিয়ারে এতদিন প্রেমিক, নিঃস্ব, মধ্যবিত্ত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। এবার সেই চেনা রূপ ভেঙে নিজেকে গড়ে তুলেছেন এক ভয়ংকর, অথচ মানবিক গ্যাংস্টারের চেহারায়।

‘মালিক’ সিনেমা তাই কেবল একটি অ্যাকশনধর্মী থ্রিলার নয়, বরং এটি এক অভিনেতার রূপান্তরের গল্প। এক সামাজিক-রাজনৈতিক পটভূমিতে গড়ে ওঠা একটি চরিত্রের গভীর অভ্যুত্থান। ‘কপালে যদি না লেখা থাকে, আমি নিজেই লিখে নেব’– রাজকুমারের কণ্ঠে উচ্চারিত এই সংলাপ যেন হয়ে ওঠে সিনেমাটির সারকথা। সিনেমায় তাঁকে শুধুই অস্ত্রধারী গ্যাংস্টার হিসেবে দেখানো হয়নি। তাঁর চোখের দৃষ্টিতে, শরীরী ভাষায়, সংলাপে ফুটে ওঠে এক চাপা ক্ষোভ, অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা এক মানুষের আত্মপক্ষ সমর্থনের কাহিনি। চরিত্রটি নিয়ে রাজকুমার রাও জানিয়েছেন, এটি তাঁকে মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে আবার গড়ে তুলেছে। প্রতিটি অ্যাকশন দৃশ্য তিনি নিজে করেছেন, প্রস্তুতি নিয়েছেন মাসের পর মাস।

‘মালিক’ ছবিতে প্রথমবার জুটি বেঁধেছেন রাজকুমার রাও ও মানুষি চিল্লার। পুলকিত পরিচালিত এ অ্যাকশনধর্মী ছবিতে তারা হাজির হয়েছেন একেবারে নতুন রূপে। সাবেক বিশ্বসুন্দরী মানুষি এতদিন গ্ল্যামারাস চরিত্রেই বেশি পরিচিত ছিলেন। তবে এ ছবিতে তিনি হাজির হয়েছেন সম্পূর্ণ গ্ল্যামারহীন, এক বাস্তব ও মানবিক স্ত্রীর ভূমিকায়।

রাজকুমারের স্ত্রী ‘শালিনী’ চরিত্র প্রসঙ্গে মানুষি বলেন, ‘এ চরিত্রের কথা যখন পরিচালক ও লেখক প্রথম কল্পনা করেন, তখন আমি তাদের ভাবনায়ও ছিলাম না। এর আগে কেউ আমাকে এমন চরিত্রে দেখেননি। তবে সৌভাগ্যবশত আমি এ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি। নিজের ওপর বিশ্বাস আছে, হয়তো পেরেছি।’ মানুষি প্রসঙ্গে রাজকুমার রাও বলেন, ‘মানুষির মুখে রয়েছে এক অপার ভারতীয় সৌন্দর্য। এমন চরিত্রে ওর আরও কাজ করা উচিত। মানুষি শুধু চরিত্রকে ধারণ করেননি, বরং তাঁর সরলতা, ভাষা ও চাহনির মাধ্যমে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।’

এ সিনেমায় আরেকটি চমক হচ্ছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। টলিউডে বহুবার পুলিশ চরিত্রে অভিনয়ের পর এবার তাঁকে দেখা যাবে বলিউডের ‘মালিক’ ছবিতে এক দুঁদে পুলিশ অফিসারের ভূমিকায়। ছবিতে রাজকুমার ও প্রসেনজিৎ মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়াবেন, যা সিনেমার গতি ও উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে। শুটিং সেটের অভিজ্ঞতা নিয়ে রাজকুমার বলেন, “আমাদের ‘বং কানেকশন’ তো সবারই জানা। পত্র লেখা আমাদের সেই যোগসূত্র। তবে এ ছবিতে আমাদের চরিত্রগুলো এমন, যেখানে একসঙ্গে বসে খাওয়ার সুযোগই ছিল না (হেসে)। বুম্বাদার সঙ্গে কাজ করা সব সময়ই দারুণ অভিজ্ঞতা। তাঁর অভিনয় দক্ষতা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ, তিনি খুব ভালো মানুষ। কোনো শিল্পীর সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছবিতে তাঁকে একদম আলাদা রূপে দেখা যাবে। তাঁর অভিনয়ে একটি বিশেষ দিক আছে, যা দর্শকদের চমকে দেবে।”

সিনেমার প্রচারে এসে অনুজ রাজকুমারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন প্রসেনজিৎ। প্রশংসা করেন পরিচালক পুলকিতেরও। তিনি বলেন, ‘আমি তখন মুম্বাইতে একটি অন্য ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তখন এ ছবির জন্য ফোন আসে। এরপর পুলকিতের সঙ্গে দেখা করি। তাঁর গল্প বলার ধরন, কাজের প্রতি ভালোবাসা দেখে বুঝেছিলাম। এ ছেলেটি একদিন নিজেকে প্রমাণ করবেই। ৩০ মিনিট আলাপচারিতার পর বলি, আমি কাজটা করছি।’
রাজকুমার রাও প্রসঙ্গে প্রসেনজিৎ বলেন, ‘ও ভীষণ ভালো একজন অভিনেতা। ও বরাবর আমাদের ওর অভিনয়ের মাধ্যমে গর্বিত করেছে। এবারও নিজের চরিত্রে ও মন দিয়ে অভিনয় করেছে।’ নিজের চরিত্র নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাইশে শ্রাবণ আর দশম অবতার-এর মতো পুলিশের চরিত্র আমি অনেক করেছি। তবে এ চরিত্রটায় একদম আলাদা একটা চমক আছে।’

সিনেমাটির পটভূমি আশির দশকের আলাহাবাদ। যেখানে ধর্ম, রাজনীতি এবং অপরাধ এক নতুন সমাজের ভিত্তি তৈরি করছিল। সে সময়েই মালিকের মতো এক চরিত্রের জন্ম। যিনি প্রথমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান; পরে সময়ের চাপে নিজেই হয়ে ওঠেন নিয়ন্ত্রক, বিচারক এবং শাসক।

‘মালিক’ একটি প্রশ্ন তোলে– নায়ক কে? আর খলনায়কই বা কে? সবশেষে দর্শক বুঝতে পারেন, এটি কেবল একজন অপরাধীর গল্প নয়। বরং এটি সময়, অবিচার, ব্যর্থতা ও প্রতিশোধের গল্প।

রাজকুমার রাওয়ের অনবদ্য অভিনয়, মানুষি ও প্রসেনজিতের সপ্রাণ উপস্থিতি এবং পুলকিতের দক্ষ পরিচালনায় ‘মালিক’ হয়ে উঠেছে এক পূর্ণাঙ্গ, আবেগঘন এবং থ্রিলিং চলচ্চিত্র অভিজ্ঞতা।আগামীকাল সিনেমাটি মুক্তি পেলে পর্দায় ধরা পড়বে শুধু রক্ত, বন্দুক আর সংঘর্ষ নয়, ধরা পড়বে এক মানুষের অন্তরাত্মা, এক অভিনেতার নতুন জন্ম।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র চর ত র আম দ র র গল প পর চ ল প লক ত

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে