আল মাহমুদের সাহিত্যপ্রতিভার উন্মেষ ঘটেছিল বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে। মৃত্যুবরণ করেন ২০১৯ সালে। সেই হিসাবে তাঁর কবিজীবনের শুরু ও শেষের মধ্যে প্রায় পৌনে এক শতাব্দী অতিবাহিত হতে চলেছে। সময়ের হিসাবে এটি নিতান্ত কম নয়। এখন বোধ করি আল মাহমুদকে বাংলা কবিতার বড় পটে রেখে বিচার করা দরকার। এতে তিনি তাঁর স্ব-ভাবে আমাদের সামনে মূর্ত হয়ে উঠবেন।
এক.
ঔপনিবেশিক শক্তির ছায়াতলে দীর্ঘকাল থাকলে একটা জাতির সাহিত্যের যে দশা হয়, বাংলা সাহিত্যেরও তা–ই হয়েছে। ৬০০ বছরের ধারাবাহিক অভিযাত্রায় ছেদ ঘটে। নতুনভাবে সংসার শুরু করে ‘বনিয়াদি’, ‘রুচিমান ও রূপবান’ ইউরোপীয় সাহিত্যের সঙ্গে। বড়লোকের ঘর করতে গিয়ে বাংলা সাহিত্যের চলন–বলন ও রূপ-লাবণ্যে একটা বড় পরিবর্তন আসে। ওই পরিবর্তিত সাহিত্যকেই আমরা বলি ‘আধুনিক বাংলা সাহিত্য’। এর শুরু উনিশ শতকে।
অন্যের মতো করে আধুনিক হওয়ার শুরু আছে, শেষ নেই। এমনকি উপনিবেশ স্থাপনকারীরা চলে গেলেও তার সাহিত্যরুচি ও মননের চাষাবাদ চলতে থাকে। বাংলা সাহিত্যেও তা অব্যাহত আছে। হয়তো আরও বহুকাল থাকবে।
পাশাপাশি এ–ও সত্য, উপনিবেশিত অঞ্চলের সাহিত্যে আধুনিকায়ন বা উপনিবেশায়নের প্রক্রিয়া চলমান থাকার পাশাপাশি বিউপনিবেশায়নের প্রক্রিয়াও জায়মান থাকে। সাহিত্য নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসেও সেই ব্যাপারটা ঘটেছে কোনো কোনো সাহিত্যিকের হাত ধরে।
বাংলা সাহিত্য যে অন্যের ধার করা আধুনিকতার দার পরিগ্রহ করেছে, তা কীভাবে বুঝব! এই সাহিত্যের সঙ্গে বাংলার জনজীবনের সম্পর্ক কতটা নিবিড়, তা দেখে বোঝা যাবে। এদিক থেকে খেয়াল করলে দেখা যাবে, ব্যতিক্রম বাদে বাংলা সাহিত্য মোটাদাগে জনবিচ্ছিন্ন। বঙ্কিমের উপন্যাস এ কারণেই বর্তমানের চেয়ে অতীতে বেশি নির্ভরশীল।
বাংলা কবিতার ইতিহাসও এর চেয়ে খুব বেশি ভিন্ন নয়। উপন্যাসের মতোই আধুনিক বাংলা কবিতা চারপাশের যাপিত জীবনের সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে কখনো যুক্ত হয়নি। ইউরোপাগত ‘উন্নত রুচি’ ও ‘উন্নত যাপন-আদর্শের’ প্রলেপ ছাড়া উনিশ শতকে, এমনকি বিশ শতকের অধিকাংশ সময়জুড়ে, বাংলা কাব্য-কবিতার চর্চা খুব কম হয়েছে।
দুই.
বাংলাদেশের সাহিত্য উপনিবেশায়নের ওই ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। চল্লিশের দশকে বাংলাদেশের সাহিত্য নিজস্ব ভূখণ্ডের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করলেও পঞ্চাশের দশকে এসে সেই ধারা মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে পঞ্চাশের বাংলাদেশের কবিরা প্রধানত ইউরোপের কবিতার উপনিবেশ কলকাতাকে অনুসরণ করে এবং ঢাকা হয়ে ওঠে উপনিবেশের উপনিবেশ। বাংলাদেশের কবিতায় পঞ্চাশের দশকে আল মাহমুদের আগমন ঘটে এই ঐতিহাসিক বাস্তবতার ভেতরে।
বাংলাদেশের কবিতায় যখন আল মাহমুদের অভিষেক ঘটে, তখন তাঁর ও তাঁর সতীর্থদের ‘কামরূপ কামাখ্যা’ ছিল ত্রিশের দশকের কলকাতা। বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত কবিতা পত্রিকায় একটি কবিতা প্রকাশিত হওয়া মানে প্রকৃত কবির স্বীকৃতি পাওয়া। বুদ্ধদেব বসুর আধুনিকতাবাদী কাব্যরুচির সঙ্গে মিল আছে—এমন কবিতা লিখতে পারলেই বাংলাদেশের পঞ্চাশের দশকের অধিকাংশ কবি উতরে যেতেন। আল মাহমুদের কবিতা যেদিন প্রথম বুদ্ধদেব বসুর পত্রিকায় ছাপা হলো, সেদিন তিনি কেমন উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন, তা তুলে ধরেছেন সৈয়দ শামসুল হক তাঁর মহান সতীর্থ শামসুর রাহমান বইয়ে।
আল মাহমুদ ঢাকায় আসেন ১৯৫৩-৫৪ সালের দিকে। অনেকে মনে করেন, তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বড় হয়েছিলেন গভীর-গহিন গ্রামীণ সংস্কৃতির মধ্যে। পরবর্তীকালে এটিই তাঁর বড় কাব্য-সম্পদে পরিণত হয়। কথাটা আংশিক সত্য। কারণ, আল মাহমুদ তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই কবির মুখ-এ ঢাকায় আসার আগের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে দেখা যায়, চিন্তা–চেতনায় পঠন-পাঠনে আসলে তিনি ঢাকার অনেক কবির চেয়ে প্রাগ্রসর ছিলেন।
আল মাহমুদ জীবনানন্দ দাশের মহাপৃথিবী পাঠ শেষ করেন ‘বয়ঃসন্ধি’তেই এবং ওই কাব্যগ্রন্থ পড়েই তিনি তাঁর জীবনের প্রথম কবিতাটি রচনা করে ওঠেন—‘আমি বইটিকে হাতে নিয়ে রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে উল্টে-পাল্টে দেখতে এবং পড়তে লাগলাম। প্রথম কবিতাটিই আমাকে কামড়ে ধরল। অদ্ভুত এক রচনাভঙ্গি। বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছার আগেই বইয়ের সবগুলো কবিতা পড়া শেষ। এক নতুন উত্তেজনায় কাঁপছি যেন এক অনাস্বাদিত লবণ চেখে জিভ আমার লোভে সিক্ত হয়ে উঠেছে। ...হঠাৎ মনে হলো এ ধরনের বক্তব্য আমারও আছে, আমিও লিখতে পারি। আনন্দে সারা শরীর কেঁপে উঠল। কাগজ-কলম বের করে টেবিলে উবু হয়ে লিখতে শুরু করলাম। শুরু হলো অন্য এক জীবন।’
উপনিবেশিত কাব্যরুচির বাইরে বেড়ে ওঠার সুযোগ ছিল না। কালের রুচির বাইরে গিয়ে একজন নতুন কবি হঠাৎ আবির্ভূত হয় না; হতে পারে না। এ কারণে আল মাহমুদ শুধু নন, পঞ্চাশের প্রায় সব কবির কবিতাই শুরুতে কোনো না কোনোভাবে ত্রিশের কবিতার প্রতিধ্বনি হিসেবে রচিত হয়েছে।
কিন্তু আল মাহমুদ খুব বেশি দিন ওই ত্রিশের দশকের আধুনিকতাবাদী কাব্যরুচির ভেতরে আবদ্ধ থাকেননি। তিনি যখন ঢাকায় এসে পুরোদমে কাব্যচর্চা শুরু করেন, তখন এখানে একটা জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটতে শুরু করেছে। জাতীয়তাবাদী চেতনা বাংলাদেশে যত ঘনীভূত হয়েছে, গ্রাম নিয়ে কবিতা লেখার হার বাংলাদেশের কবিদের মধ্যে ততই বেড়েছে। বাংলাদেশের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের কবিতার একটি নিবিড় পাঠ দিলে ব্যাপারটা সহজেই বোঝা যায়।
জাতীয়তাবাদী চেতনার চাপে গ্রামকে নতুনভাবে আবিষ্কার ও আলিঙ্গনের একটা ব্যাপার অবিভক্ত বাংলায় ১৯০৫ সালে এবং অসহযোগ আন্দোলন ও খেলাফত আন্দোলনের সময়ও দেখা গিয়েছিল। প্রথমবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে রচিত হয়েছিল গ্রামবাংলার রূপ–মাধুরী নিয়ে অসাধারণ সব গান। দ্বিতীয়বার বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও জসীমউদ্দীনের মতো অসাধারণ সাহিত্যিকের আবির্ভাব ঘটেছিল। রচিত হয়েছিল জীবনানন্দ দাশের হাতে রূপসী বাংলার মতো কাব্যগ্রন্থ।
ষাটের জাতীয়তাবাদী জাগরণের প্রাক্কালে আল মাহমুদ ক্রমাগত বদলে যেতে থাকেন, যার শুরুটা কালের কলস-এ আর চূড়ান্ত অভিপ্রকাশ সোনালী কাবিন কাব্যগ্রন্থে। এই কাব্যের ‘সোনালী কাবিন’ সনেটগুচ্ছ গ্রামীণ জীবন আর যাপন-সংস্কৃতির গভীরতলের পটে রচিত হয়েছে। এর প্রকৃতি, চিত্রকল্প, উপমা, শব্দক্ষেপ, যৌনতা, নারী, পুরুষ, ভাবনা-কল্পনা—সবই গভীরভাবে গ্রামশ্লিষ্ট। এ যেন পাকিস্তানি আর্যসুলভ জাতিগর্বের বিপরীতে বাংলাদেশের বাঙালি কৌমের অনার্য কল্লোল। এর পক্ষে ‘প্রকৃতি’, ‘কবিতা এমন’, ‘প্রত্যাবর্তনের লজ্জা’, ‘তোমার হাতে’, ‘পালক ভাঙার প্রতিবাদে’, ‘খড়ের গম্বুজ’, ‘এক নদী’, ‘আমার প্রাতরাশে’—এ রকম কত কবিতার নাম করা যাবে! প্রতিটি কবিতা বাংলা কবিতার ওই পূর্বে কথিত জনবিচ্ছিন্নতার দায় থেকে অনেক দূর পর্যন্ত মুক্ত।
কিন্তু তার মানে এই বলতে চাইছি না যে আল মাহমুদের কবিতা বাংলাদেশের গ্রাম–জনপদের মানুষের কবিতা। কারণ, বোধে ও বোধিতে আল মাহমুদ শিক্ষিত শ্রেণিরই প্রতিনিধিত্ব করেন। এ কথা খুবই মনে রাখা দরকার যে আল মাহমুদ বাংলার লোকায়ত কাব্যধারার লোক নন; তিনি স্বভাব কবি নন। এই সূত্রে এ–ও বলে রাখা দরকার, সাধারণ মানুষের যাপন ও সংস্কৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটিয়ে কাব্য-কবিতা কেবল আল মাহমুদ একা রচনা করেননি। ষাটের দশকের জাতীয়তাবাদী চেতনার ঢেউ সংগত কারণে আরও অনেক কবিকে উদ্বেলিত করেছিল। তাঁদের মধ্যে মোহাম্মদ রফিক ও আসাদ চৌধুরীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে। কিন্তু এই ধারায় সবচেয়ে উত্তুঙ্গ কাব্যসিদ্ধি লাভ করেছেন আল মাহমুদ।
তিন.
১৯৭১ সালের রক্তাক্ত ইতিহাসের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের জন্ম হয়। এ কারণে এখানকার ইতিহাসে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের বাঙালি জাতীয়তাবাদী জাগরণ একটি অভাবনীয় ইতিহাস হিসেবে চিহ্নিত ও কীর্তিত হয়ে থাকে। কিন্তু আশির দশকে গিয়ে এই জাতীয়তাবাদী চেতনা আবার নতুন এক পর্বে প্রবেশ করে। এই পর্বে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা হুমকির মধ্যে পড়েছিল বলে বাংলাদেশের ওই সময়ের শিল্পী-সাহিত্যিক-চিন্তকদের বড় একটা অংশ মনে করেছিলেন। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের কবিতা, সাহিত্যচিন্তা, ইতিহাস ও বয়ান-বর্ণনার মধ্যে একটা পরিবর্তনের হাওয়া লাগে। এ হাওয়ায় বাংলাদেশের কবিতা আশির দশকে ‘বিশুদ্ধ কবিতা’র নাম করে নিজের জনগোষ্ঠীর যাপিত জীবন ও সমকালীনতাকে বাঙ্ময় না করে বেশ কিছুটা সরে গেল বিমূর্ততার দিকে। কলকাতার কবিতার কাছে হাত পেতে আবার একধরনের জনবিচ্ছিন্নতার জন্ম দিল। এ ধরনের বিচ্ছিন্নতার সঙ্গে পঞ্চাশের শুরুতে আল মাহমুদ বেশ কিছুকাল একাত্ম ছিলেন। কিন্তু এবার আর তিনি একাত্ম হলেন না। আবার ষাটের জায়গাতেও থাকলেন না; বরং তিনি এবার ‘বাঙালি মুসলমান’ পরিচয়কেই কবিতায় প্রধান করে তুললেন।
মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো মাহমুদের কবিতার পর্বান্তরে যাওয়ার রাজনৈতিক গৌরচন্দ্রিকা। ১৯৮০ সালে প্রকাশিত অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না পড়ে বোঝা যায়, তিনি বাংলাদেশের মানুষের যাপিত জীবনের পাশাপাশি ইসলামি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মিথে আরও বেশি করে ডুব দেবেন। আত্মজীবনী গ্রন্থ কবির মুখ-এ বলেছেনও, ‘আমি জেলখানায় থাকাকালে ধর্মগ্রন্থগুলোর একটা তুলনামূলক পাঠ দেওয়ার সুযোগ পাই এবং চরম নাস্তিকতার দিক থেকে আস্তিকতার দিকে ফিরে আসার অবকাশ সৃষ্টি হয়। আমার ধর্ম করার প্রবণতা কারও কোনো প্রবঞ্চনার ফল নয়। ...আমার নিজেরই গবেষণার অধ্যয়নের সুফল হলো আমার বিশ্বাস, আমার ইমান। এ নিয়েই আমি ১৯৭৫-এ জেল থেকে বেরিয়ে আসি।’ ৭৫-পরবর্তী কাব্যগ্রন্থগুলোর কোনো কোনো কবিতায় ‘সত্যকে’, ‘বিশ্বাসকে’, ‘আদর্শকে’ স্বপ্ন ও যাপিত জীবনের ওপরে ওঠাতে চাইলেন। অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না কাব্যগ্রন্থের ‘ভারসাম্যহীন মানুষ’ কবিতায় স্পষ্ট করে বললেন, ‘যেসব ভারসাম্যহীন মানুষ সত্যের চেয়ে/ স্বপ্নকে বড়ো বলে ভাবতো, একদা/ আমি ছিলাম তাদের দলে।’ বখতিয়ারের ঘোড়া, আরব্য রজনীর রাজহাঁস, প্রহরান্তের পাশফেরা, মিথ্যাবাদী রাখাল কাব্যগ্রন্থের নানা কবিতায় যাপিত জীবনের পাশাপাশি মুসলিম ইতিহাস-ঐতিহ্য, প্রসঙ্গ-অনুষঙ্গ ঢুকতে থাকে প্রায় দেদার। কিছু কবিতায় লক্ষ করা যায় ‘গেলাফ’, ‘ওমর’, ‘নাজ্জাসীর দরবার’, ‘পয়গম্বরের কাটা মাথা’, ‘ফারান পর্বত’, ‘কবি লবিদ’, ‘হেরা পর্বত’, ‘মদিনার কাসার কারুময় পাত্র’, ‘হযরত আলীর খঞ্জর’, ‘আল্লার কালাম’, ‘জেহাদ’, ‘আল্লার সেপাই’, ‘সিদোনের পথ’, ‘কাওসার হ্রদ’, ‘কেনানী বালক’, ‘আমালিক আজীজ’, ‘কদর রাত্রি’ ইত্যাদি শব্দ ও অনুষঙ্গ। কোনো কোনো কবিতায় কবিকে সাদা-কালোর ভেদরেখা টানার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতে দেখা যায়। কোথাও বিশ্বাসী, আবার কোথাও বিশ্বাসী হয়ে ওঠার বাসনা-কাতরতা লক্ষ করা যায়।
এই আল মাহমুদ বাংলাদেশের ‘প্রগতিশীল’ সাহিত্যিক-চিন্তকদের একটা বড় অংশ দ্বারা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। কিন্তু মনে রাখা দরকার, এই পর্বের কিছু কবিতা ছাড়া অধিকাংশ কবিতায় আল মাহমুদ তাঁর কবিসত্তার সঙ্গে আপস করেননি। এই পর্বের কবিতাগুলো বরং জীবন ও জগৎ–সম্পর্কিত দার্শনিক নানা প্রত্যয় ও আপ্তবাক্যে ভরা; প্রজ্ঞায় ঠাসা। একটা আত্মপরিচয়–সন্ধানী ভাবনাব্যাকুল অস্থির কবিমনের আততি যে এই পর্বের বিচিত্র কবিতার মধ্যে আগের তুলনায় ভিন্ন সৌরভে-মেজাজে প্রকাশিত হয়েছে, সে আলোচনা খুব দেখা যায় না। কিছু কবিতার নমুনা বিশেষভাবে সামনে আসায় অন্তত ১০টি কাব্যগ্রন্থের অসংখ্য ভালো কবিতা আড়াল হয়েছে—এ কথা নিঃসংশয়ে বলা যায়।
স্বাধীনতা–উত্তর আল মাহমুদের কবিতার পাঠ-পর্যালোচনার চেয়ে প্রতিক্রিয়া বেশি হয়েছে। মাহমুদের কবিতার একটি বড় অংশ একটি বিশেষ বর্গের মধ্যে আটকে গেছে বলে মনে হয়। এর ফলে স্বাধীনতা–উত্তরকালের আল মাহমুদের কবিত্বের অনেক গুণ আড়ালেই রয়ে গিয়েছে। আমাদের ধারণা স্বাধীনতা–উত্তরকালের আল মাহমুদ-বিবেচনা যতটা না সাহিত্যতাত্ত্বিক, তার চেয়ে বেশি সাংস্কৃতিক-রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এর সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিধারারও গভীর সম্পর্ক আছে বলে মনে হয়। এসব মাথায় রেখে স্বাধীনতা–উত্তরকালের আল মাহমুদের বিস্তৃত পাঠ-পর্যালোচনা হওয়া দরকার। এর ভেতর দিয়ে আমরা আল মাহমুদকে যেমন আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারব, তেমনি স্বাধীনতা–উত্তর বাংলাদেশের সংকট-সম্ভাবনাও আমাদের কাছে আরও বেশি পষ্ট হয়ে উঠবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য প ত জ বন র স ব ধ নত র দশক র এই পর ব উপন ব শ র ভ তর গ রন থ ন নত র প রক শ হয় ছ ল দরক র শ শতক র একট
এছাড়াও পড়ুন:
বাপ্পার একক কনসার্ট ও ১২ গান নিয়ে সিডি
কয়েক মাস বিরতির পর আবার একক কনসার্টে গাইবেন বাপ্পা মজুমদার। কাল শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার তেজগাঁওয়ের ইয়ামাহা মিউজিক লাউঞ্জে দুই ঘণ্টার আয়োজনে গাইবেন এই শিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য সুখবর, এদিন তাঁরা দীর্ঘ বিরতির পর প্রকাশিত হতে যাওয়া বাপ্পার নতুন অ্যালবাম প্রকাশের সাক্ষী হয়েও থাকবেন। ভার্টিক্যাল হরাইজন; সেই সময় এই সময়’ শিরোনামে সিডি আকারে নতুন অ্যালবামটি প্রকাশিত হবে।
বাপ্পা মজুমদার