ভোলা সদর উপজেলার মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে গুলিতে পাঁচ ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়ন–সংলগ্ন একটি চরে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার দাবি, গ্রামবাসীর সহায়তায় প্রশাসনের জব্দ করা ড্রেজার ও বাল্কহেড ছিনিয়ে নিতে গিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী জামালউদ্দিন ওরফে সকেট জামাল বাহিনীর লোকজন এলোপাতাড়ি গুলি চালান।

আহত ব্যক্তিরা হলেন শাজাহান মীর (৬০), মোহাম্মদ আলী (৬০), অপূর্ব শুভ (১৮), মঞ্জুর আলম (২৫) ও রফিকুল ইসলাম (৬৫)।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত ব্যক্তিদের কয়েকজনের ভাষ্য, কয়েক বছর আগে মেঘনা নদীতে বিলীন হওয়া কাচিয়ার কয়েকটি মৌজায় নতুন করে চর জেগে ওঠে। স্থানটি আবার বসবাসযোগ্য হয়ে উঠছিল। কিন্তু প্রায় সাত মাস ধরে বালু উত্তোলন করায় চরটি আবার ভাঙনের কবলে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ সকালে কয়েক শ মানুষ ট্রলার নিয়ে ওই চরে যান।

এ সময় গ্রামবাসীর সঙ্গে ছিলেন কাচিয়া ইউনিয়নের বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলাউদ্দিন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) ইউনিয়ন শাখার সভাপতি টিটব বেপারী, কাচিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সহসভাপতি আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, মো.

এমরান ও মহিউদ্দিন বেপারী। তাঁরা সেখানে গিয়ে বালু তোলার সরঞ্জাম ড্রেজার ও বাল্কহেড জব্দ করে প্রশাসনকে খবর দেন। পরে জামালউদ্দিনের ভাগনে শাহিনের নেতৃত্বে সাত থেকে আটজন স্পিডবোট নিয়ে চরটিতে গুলি চালাতে চালাতে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে তাঁরা জব্দ করা ড্রেজার ও বাল্কহেড ছিনতাই করে নিয়ে যান।

এলাকাবাসীর দাবি, সকেট জামাল বাহিনীর অবৈধ বালুর ব্যবসা বন্ধ না হলে পুরো ইউনিয়ন মেঘনায় তলিয়ে যেতে পারে। তাঁরা অবিলম্বে জামালউদ্দিনকে গ্রেপ্তার ও বালু উত্তোলন স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানান।

চরাঞ্চলে সকেট জামাল বাহিনীর অত্যাচারে বাসিন্দারা আতঙ্কিত বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, এই সকেট জামাল বাহিনী মেঘনার বালু উত্তোলন, ভূমিখেকো ও চর দখল করে আসছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জামালউদ্দিন। তিনি বলেন, ঘটনার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তাঁর কোনো লোক বালু উত্তোলনের সঙ্গে যুক্ত নন। বিষয়টি বিএনপি–জাপা নেতাদের ‘ষড়যন্ত্র’ বলেও দাবি করেন তিনি।

এদিকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম মশিউর রহমান জানান, গ্রামবাসী বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম জব্দ করার পর প্রশাসন ঘটনাস্থলে যায়। ওই সময় বালু উত্তোলনকারীরা গুলি চালিয়ে ড্রেজার ও বাল্কহেড ছিনিয়ে নেন।

ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাহাদাৎ মো. হাচনাইন পারভেজ জানান, আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ম লউদ দ ন গ র মব স উদ দ ন

এছাড়াও পড়ুন:

দিল্লি ও ইসলামাবাদে বিস্ফোরণ: ভারত-পাকিস্তান কি আবার সংঘাতে জড়াচ্ছে

দিল্লির লালকেল্লার কাছে গত সোমবার এক গাড়ি বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরদিন মঙ্গলবার ইসলামাবাদে একটি ‘আত্মঘাতী বোমা’র বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে ১২ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছেন।

চলতি মাসের শুরুতে দিল্লি ও ইসলামাবাদে এমন বিস্ফোরণ দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছে। ভারত–পাকিস্তান—উভয় দেশ হামলার ঘটনাগুলোতে দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা চালায়, নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার ও তদন্ত শুরু করে। বিস্ফোরণের ধরন ও সময়কাল দেখে মনে হচ্ছে, এগুলো পরিকল্পিত হামলা; দুর্ঘটনা নয়।

বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক এবং সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মঞ্চ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে আফগানিস্তান। আফগান–পাকিস্তান সীমান্ত সংঘর্ষের মধ্যেই গত সপ্তাহে দিল্লি ও ইসলামাবাদে বিস্ফোরণের ওই ঘটনা ঘটল। এতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বৈরিতা আরেক দফা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থার মতে, তেহরিক–ই–তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) আফগান ভূখণ্ডে পুনরায় সক্রিয় হয়েছে। তারা অভিযোগ করছে, সেখান থেকে এ গোষ্ঠী পাকিস্তানে হামলার পরিকল্পনা ও তৎপরতা চালাচ্ছে। আর পাকিস্তানের মাটিতে টিটিপিসহ বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় আরেক প্রতিবেশী ভারত মদদ দিচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের।

বিস্ফোরণের প্রেক্ষাপট ও ভারতের প্রতিক্রিয়া

ভারত ও পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। সীমান্তবর্তী সংঘর্ষ, সন্ত্রাসী হামলা ও সাম্প্রতিক বিস্ফোরণগুলো উভয় দেশের রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলছে।

ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি সোমবারের বিস্ফোরণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সন্ত্রাস দমন কার্যক্রম শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন, রাজনৈতিক নেতাদের উসকানিমূলক বক্তব্য ও সংবেদনশীল গণমাধ্যম প্রতিবেদন উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে পারে। তাই কূটনৈতিক সংলাপ ও জনমত উভয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ভারত এ ঘটনার তদন্ত করছে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে। তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ); যা ‘সন্ত্রাসবাদ’ সম্পর্কিত মামলার তদন্ত করার দায়িত্বপ্রাপ্ত। বিস্ফোরণের নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে কর্তৃপক্ষ কঠোর ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ ধারাগুলো কাজে লাগাচ্ছে।

বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এক প্রস্তাবে দিল্লির ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির হাতে সংঘটিত একটি নৃশংস সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম থেকেই এ ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, চক্রান্তকারীদের কেউ রেহাই পাবেন না, সবাইকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

দিল্লির লালকেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণ স্থলে কাজ করছেন ফরেনসিক দলের সদস্য

সম্পর্কিত নিবন্ধ