বিমান দুর্ঘটনায় নিহত মাসুকার দাফন সম্পন্ন
Published: 22nd, July 2025 GMT
একটি দুর্ঘটনা বদলে দিয়েছে সবকিছু। নিভে গেল এক জীবন প্রদীপ, থেমে গেল এক সংগ্রামী পথচলা। রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর একটি প্রশিক্ষণ বিমানের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন কলেজের ইংরেজি বিভাগের সবার প্রিয় শিক্ষিকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাসুকা বেগম নিপু (৩৪)।
মাসুকা বেগম ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের চিলোকূট চৌধুরী বাড়ির সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরীর মেয়ে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে নিপু সবার ছোট ছিলেন।
দীর্ঘ ৭ বছর ধরে মাইলস্টোন কলেজে শিক্ষকতা করছিলেন তিনি। শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি ছিলেন একজন বন্ধু, অভিভাবক ও নির্ভরতার প্রতীক।
আরো পড়ুন:
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: দগ্ধ সায়ান ইউসুফের মৃত্যু, লক্ষ্মীপুরে দাফন
নাইক্ষ্যংছড়িতে অপহরণের পর হত্যা, গ্রেপ্তার ৩
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে যখন একটি প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর বিধ্বস্ত হয়, তখন মাসুকা বেগম ক্লাস শেষে শিক্ষক কক্ষে ফিরছিলেন। দুর্ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া আগুনে তিনি মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন। রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা চেষ্টা চালালেও শেষ রক্ষা হয়নি। রাতেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন তিনি।
জীবনের শেষ অধ্যায়েও ছিলেন মাটির কাছাকাছি। মৃত্যুর আগে সহকর্মীদের বলেছিলেন, “আমার মৃত্যু হলে যেন আমাকে আমাদের সোহাগপুর গ্রামের মাটিতে কবর দেওয়া হয় এবং প্রথমেই আমার বড় বোন পাপড়ি রহমানের কাছে যেন লাশটি হস্তান্তর করা হয়।”
এমনটি জানিয়েছেন মাসুকা বেগমের ভাগনী নিধি। খালার খুব কাছের ছিলেন তিনি। তিনি বলেন, “ঘটনাটি শোনার পর খালার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। সন্ধ্যার পর জানতে পারি ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটের আইসিউতে ভর্তি রয়েছেন এবং শ্বাসনালী, ফুসফুসসহ ৪৫% পর্যন্ত জ্বলে গিয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে খবরটি আসে। সেই সময় আমার এক মামা ও বোন হাসপাতালে গিয়ে খালাকে খুঁজে পান এবং তারা ফোনে জানান অবস্থার অবনতি হচ্ছে। রাত যখন ১২টা ২০ মিনিট, তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, আমার খালা মারা গেছে।”
স্মৃতি কাতর হয়ে নিধি আরো বলেন, “মাসুকা খালার ব্যবহারে মনে হত, তিনিও আমাদের আরেকজন মা। খালা কখনই বিবাদে লিপ্ত হতেন না। খালার ইচ্ছে ছিল, আমার মা যেখানেই বলবে, সেখানেই দাফন করা হবে। সেই সুবাদে আমার খালাকে সোহাগপুরে আনা হয়েছে এবং এখানে কবর দেওয়া হবে।”
মাসুকার ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর এলাকা হাজী আব্দুল জলিল বিদ্যালয়ের এলাকায় বসবাস করা বোন জামাতার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখান থেকে গ্রামের খান বাড়ি এলাকায় নিয়ে গিয়ে সোহাগপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে বাদ আসর নামাযে জানাযা শেষে শেষ দাফন করা হয়।
মাসুকা বেগমের বড় বোন জামাতা খলিলুর রহমান বলেন, “আমি যখন মাসুকার বড় বোনকে বিয়ে করি, তখন মাশুকার বয়স ৫-৬ বছর হবে। আমরা তাকে নিজের একজন মেয়ের মতই আদর করেছি। নিজের মেয়ের মত আদর করা শালীকে এভাবে সমাহিত করতে হবে, কখনো কল্পনাও করিনি।”
ঢাকা/মনিরুজ্জামান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হত ম ইলস ট ন দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হচ্ছে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে
জালিয়াতির মাধ্যমে এলসির বিপরীতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে পাঁচটি মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন, তাতে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানও আসামি হতে যাচ্ছেন।
আজ সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় মামলাগুলোর অনুমোদন দেয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি, শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান রহমানের পাশাপাশি তাঁর ছেলে, ভাই, ভাতিজা, জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে এই মামলাগুলো হবে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অনুমোদিত পাঁচ মামলায় ৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে মোট ২১ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৮০১ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৯৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় সালমান এফ রহমান ছাড়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর ছেলে শায়ান এফ রহমান, ভাই বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান, সোহেল রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমান, বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক ইকবাল আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী, পরিচালক এ বি সিদ্দিকুর রহমান, মাসুদ ইকরামুল্লাহ খান, শাহ মঞ্জুরুল হক ও রীম এইচ শামসুদ্দোহা।
এ ছাড়া স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল বাশার ও পরিচালক নাসরিন আহমেদ, ক্রিসেন্ট অ্যাকসেসরিজের এমডি আবু নাঈম মাহমুদ সালেহিন ও পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তানভীর, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ আলিফ ইবনে জুলফিকার ও পরিচালক নুসরাত হায়দার, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি ওয়াসীউর রহমান ও পরিচালক রিজিয়া আক্তার, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি সালাউদ্দিন খান মজলিস ও পরিচালক আবদুর রউফ, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের এমডি মাহফুজুর রহমান খান ও পরিচালক সৈয়দ তানবির এলাহী আফেন্দী সম্ভাব্য আসামির তালিকায় রয়েছেন।
জনতা ব্যাংকের মধ্য থেকে আসামি করা হচ্ছে ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ ও আবদুল জব্বার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক আবদুর রহিম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক শহিদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম (রপ্তানি বিভাগ) মমতাজুল ইসলাম, সিনিয়র অফিসার রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক সালেহ আহম্মেদ, অবসরপ্রাপ্ত এজিএম মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) মোহাম্মদ শাজাহান, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) হুমায়ুন কবির ঢালী ও প্রিন্সিপাল অফিসার শ ম মাহাতাব হোসাইন বাদশাকে।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের যোগসাজশে জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করা হয়। এর মধ্যে পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ দশমিক ২৫ ডলার, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৩ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৯১ ডলার, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ৮ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৭ দশমিক ৪৫ ডলার, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ ডলার এবং ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৮২ দশমিক ৪৬ ডলার আত্মসাৎ হয়।
সব মিলিয়ে আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।
সাবেক সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা হয়।