একটি দুর্ঘটনা বদলে দিয়েছে সবকিছু। নিভে গেল এক জীবন প্রদীপ, থেমে গেল এক সংগ্রামী পথচলা। রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর একটি প্রশিক্ষণ বিমানের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন কলেজের ইংরেজি বিভাগের সবার প্রিয় শিক্ষিকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাসুকা বেগম নিপু (৩৪)।

মাসুকা বেগম ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের চিলোকূট চৌধুরী বাড়ির সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরীর মেয়ে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে নিপু সবার ছোট ছিলেন। 

দীর্ঘ ৭ বছর ধরে মাইলস্টোন কলেজে শিক্ষকতা করছিলেন তিনি। শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি ছিলেন একজন বন্ধু, অভিভাবক ও নির্ভরতার প্রতীক। 

আরো পড়ুন:

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: দগ্ধ সায়ান ইউসুফের মৃত্যু, লক্ষ্মীপুরে দাফন

নাইক্ষ্যংছড়িতে অপহরণের পর হত্যা, গ্রেপ্তার ৩

সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে যখন একটি প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর বিধ্বস্ত হয়, তখন মাসুকা বেগম ক্লাস শেষে শিক্ষক কক্ষে ফিরছিলেন। দুর্ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া আগুনে তিনি মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন। রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা চেষ্টা চালালেও শেষ রক্ষা হয়নি। রাতেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন তিনি।

জীবনের শেষ অধ্যায়েও ছিলেন মাটির কাছাকাছি। মৃত্যুর আগে সহকর্মীদের বলেছিলেন, “আমার মৃত্যু হলে যেন আমাকে আমাদের সোহাগপুর গ্রামের মাটিতে কবর দেওয়া হয় এবং প্রথমেই আমার বড় বোন পাপড়ি রহমানের কাছে যেন লাশটি হস্তান্তর করা হয়।”

এমনটি জানিয়েছেন মাসুকা বেগমের ভাগনী নিধি। খালার খুব কাছের ছিলেন তিনি। তিনি বলেন, “ঘটনাটি শোনার পর খালার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। সন্ধ্যার পর জানতে পারি ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটের আইসিউতে ভর্তি রয়েছেন এবং শ্বাসনালী, ফুসফুসসহ ৪৫% পর্যন্ত জ্বলে গিয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে খবরটি আসে। সেই সময় আমার এক মামা ও বোন হাসপাতালে গিয়ে খালাকে খুঁজে পান এবং তারা ফোনে জানান অবস্থার অবনতি হচ্ছে। রাত যখন ১২টা ২০ মিনিট, তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, আমার খালা মারা গেছে।”

স্মৃতি কাতর হয়ে নিধি আরো বলেন, “মাসুকা খালার ব্যবহারে মনে হত, তিনিও আমাদের আরেকজন মা। খালা কখনই বিবাদে লিপ্ত হতেন না। খালার ইচ্ছে ছিল, আমার মা যেখানেই বলবে, সেখানেই দাফন করা হবে। সেই সুবাদে আমার খালাকে সোহাগপুরে আনা হয়েছে এবং এখানে কবর দেওয়া হবে।”

মাসুকার ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরেই  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর এলাকা হাজী আব্দুল জলিল বিদ্যালয়ের এলাকায় বসবাস করা বোন জামাতার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখান থেকে গ্রামের খান বাড়ি এলাকায় নিয়ে গিয়ে সোহাগপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে বাদ আসর নামাযে জানাযা শেষে শেষ দাফন করা হয়। 

মাসুকা বেগমের বড় বোন জামাতা খলিলুর রহমান বলেন, “আমি যখন মাসুকার বড় বোনকে বিয়ে করি, তখন মাশুকার বয়স ৫-৬ বছর হবে। আমরা তাকে নিজের একজন মেয়ের মতই আদর করেছি। নিজের মেয়ের মত আদর করা শালীকে এভাবে সমাহিত করতে হবে, কখনো কল্পনাও করিনি।”

ঢাকা/মনিরুজ্জামান/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হত ম ইলস ট ন দ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

ফোনে খালেদা জিয়া বললেন, ‘ভাই, জিয়াকে ড্রয়িংরুমে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।’

৭৫-এর উত্তপ্ত নভেম্বর

শেখ মুজিব হত্যার পর বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী ছিল দ্বিধাগ্রস্ত এবং দেশ প্রতিদিন অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। এদিকে খন্দকার মোশতাক ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা সর্বজনাব নজরুল ইসলাম তাজউদ্দীন আহমেদ, মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান ও আবদুস সামাদ আজাদকে আটক করেন এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী করে রাখেন। বাতাসে প্রতিনিয়ত নানা গুজব উড়ছিল ও সাধারণ নাগরিকগণ ভয়ভীতির মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন। সেনানিবাসেও অস্থিরতা বিরাজ করছিল এবং ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছিল যে, নিজেদের মধ্যে যে-কোনো সময়ে সংঘর্ষ বেঁধে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে আর্মিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি ছিল।

পদাতিক বাহিনীর মধ্যে, বিশেষ করে ঢাকা ব্রিগেডের ১ম, ২য় ও ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসারগণ মেজর ফারুক, রশিদ ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠছিল এবং আর্মির চেইন অফ কমান্ড পুনঃস্থাপনের জন্য তৎকালীন ব্রিগেড অধিনায়ক কর্নেল শাফায়াত জামিলও অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন। কারণ তাঁর অধীনস্থ অফিসার ও সৈন্যগণই তাঁর সার্বিক কর্তৃত্ব উপেক্ষা করে শেখ মুজিব হত্যায় জড়িত ছিল। এ পরিস্থিতিতে সেনাসদরে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফও সেনাবাহিনীর জুনিয়র অফিসারদের অনিয়ম ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা বলে উত্তেজিত করার চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন।

মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী (অব.) বীরবিক্রম

সম্পর্কিত নিবন্ধ