অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে পড়ে ট্রাকের নিচে মোটরসাইকেল, তিন আরোহী নিহত
Published: 25th, July 2025 GMT
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে চলন্ত মোটরসাইকেলকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ধাক্কা দিলে সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে। এতে মোটরসাইকেলের তিন আরোহী নিহত হয়েছেন।
আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের সিকদার দিঘির পাড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রথম আলোকে ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুব আলম ও লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এস এম সাদিকুর আলম।
নিহত তিনজন হলেন সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের মৌলভীর পাড়া এলাকার ছিদ্দিক আহমদের ছেলে মো.
নিহত তিনজন হলেন সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের মৌলভীর পাড়া এলাকার ছিদ্দিক আহমদের ছেলে মো. হুমায়ুন (৩৬), তাঁর ভাই মো. মামুন (৩১) এবং তাঁদের মামা করাইয়ানগর আকবরপাড়া গ্রামের আবদুস সাত্তারের ছেলে মনির হোসেন (৪০)।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে। ২১ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, মহাসড়কে চট্টগ্রামমুখী একটি মোটরসাইকেলকে গ্রামীণ সড়ক থেকে হঠাৎ উঠে আসা একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ধাক্কা দেয়। ধাক্কায় মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কক্সবাজারমুখী একটি গরুবোঝাই ট্রাকের নিচে ঢুকে পড়ে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থলেই দুজন মারা যান। হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরেকজন মারা যান।
লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক এস এম সাদিকুর আলম বলেন, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দুর্ঘটনায় আহত এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়। তবে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি মাহাবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, নিহত তিনজনের লাশ পুলিশ হেফাজতে আছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।
মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?
তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।
সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?
সরকারের পক্ষ থেকে রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন, সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।
এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!
এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]