ভোলার লালমোহনে আমাদের বাড়ি। সমুদ্রপাড়ের মানুষই বলা যায়। তারপরও ২০১৩ সালের আগে কোনো দিন গভীর সমুদ্রে যাইনি। সমুদ্রে যাওয়ার প্রথম দিনটা তাই আজও ভুলতে পারি না। ভীষণ উত্তেজনা নিয়ে চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দর থেকে জাহাজে উঠেছিলাম। পুরো পথ ঘুমাইনি। অবাক হয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। প্রথম যখন জাল ফেলা হলো, তাতে কী কী মাছ ওঠে দেখার জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। ৪ ঘণ্টা পর তোলা হলো। দৌড়ে গিয়ে দেখলাম পোয়া, লইট্টা, রূপচাঁদাসহ নানা জাতের মাছ। তারপর প্রায় এক যুগ পার হয়ে গেছে, এখনো সেই একই আগ্রহ নিয়ে সমুদ্রে যাই। জাল টেনে তোলার পর কাছে গিয়ে দেখি, কী মাছ উঠল।

এই দেখতে দেখতেই ২০২১ সালের দিকে মনে হলো আমার ভালো লাগাটা অন্যদেরও জানাই। কয়েকজন নাবিকের ভিডিও দেখে এই আগ্রহটা জন্মেছিল। তাঁরা সমুদ্রজীবনের গল্প বলতেন। আমিও শুরু করলাম। সমুদ্রে সূর্যাস্ত, আমাদের জাহাজের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া ফিশিং জাহাজ বা ট্রলার, সমুদ্রে আকাশে মেঘ জমলে, জালে বড় কোনো মাছ ধরা পড়লে ভিডিও করতাম। ভিডিও করতে করতে নিজের ভালো লাগা–মন্দ লাগাও বলতাম। মোবাইল নেটওয়ার্ক পেলে এসব আবার আপলোড করতাম। শুরুতে অত কিছু বুঝতাম না। ভিডিওর সঙ্গে নানা গান যোগ করে ‘ফিশিং ভেসেল বিডি’ নামে পেজে দিতাম। এসব কপিরাইটেড গান ব্যবহারের কারণে একসময় আমার পেজ রেস্ট্রিকটেড করে দেয় ফেসবুক। মনিটাইজেশন শুরু হয়েছিল, সেটিও বন্ধ হয়ে যায়।

এরপরই ‘বিডি ফিশারম্যান’ পেজটা খুলি। এই পেজেই এখন ভিডিও আপলোড করি। এখান থেকে মাসে ৪০–৫০ হাজার টাকা আয় হয়। আস্তে আস্তে ফেসবুকের অনেক কিছুই বুঝতে শিখেছি।

মাছ নিয়েই কাটে জাহাজজীবন.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন

প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।

জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।

কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।

সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ