ব্যাংক খাত পুনর্গঠনে সোয়া ৪ লাখ কোটি টাকা দরকার
Published: 26th, July 2025 GMT
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতে দেশের ব্যাংক খাত পুনর্গঠনের জন্য ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। যদিও আইএমএফ প্রাথমিক হিসাবে এ জন্য ১৮ বিলিয়ন ডলারের কথা বলেছিল।
প্রতি ডলার ১২২ টাকা দরে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার সমান ৪ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। আর ১৮ বিলিয়ন ডলার সমান ২ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
গতকাল শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান রচিত অর্থনীতি, শাসন ও ক্ষমতা: যাপিত জীবনের আলেখ্য শীর্ষক বই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আলোঘর প্রকাশনার প্রকাশক মো.
শুরুতেই বইয়ের লেখক হোসেন জিল্লুর রহমান জানান, এক যুগ (২০১৩-২০২৫) ধরে লেখা এ বই চলমান বাস্তবতার সাক্ষী হিসেবে যাপিত জীবনের লেন্স দিয়ে দেখা থেকে লেখা। তিনি বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসন কীভাবে স্বৈরতন্ত্রে রূপ নিল, তার কিছুটা উঠে এসেছে বইটিতে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমরা কিছু সংস্কার করার চেষ্টা করছি। তবে বাংলাদেশের উন্নয়নের বড় দুর্বলতা হচ্ছে, এটা শহরকেন্দ্রিক। শহরের বাইরে তেমন কিছুই করা যায় না।’
গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, সে সময়কার অবস্থা বিশ্বে কোথাও ছিল না উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অর্থনৈতিক বিপর্যয় হয়েছে। কিছু ব্যাংক থেকে ৮০ শতাংশ অর্থ বের হয়ে গেছে। ব্যাংকের স্থিতি যেখানে ২০ হাজার কোটি টাকা, সেখান থেকে নিয়ে গেছে ১৬ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী, সংসদ সদস্য—তাঁদের ক্ষমতার ভারসাম্য নেই। এখানে সংস্কার না হলে যত সংস্কারই করা হোক না কেন, কোনো লাভ হবে না। দরকার হচ্ছে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সুশাসন। তা না হলে প্রশাসনে পরিবর্তন আনা কঠিন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নতুন সমাজ সৃষ্টির যে আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি। এসেছে একদলীয় শাসন এবং গণতন্ত্রকে চলতে দেওয়া হয়নি।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে শেখ হাসিনার ১৫ বছরে দেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা শুরু হয়, তখন শাসনব্যবস্থায় গণতান্ত্রিকতার ছাপ দেখা দেয়। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে তা নষ্ট করা হয়েছে। এখন এসেছে সংস্কারের আলোচনা। সংস্কার তো আনতে হবে মানুষের মধ্যে।
১৫ বছরে ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এ সময়ে রাজনৈতিক কাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে। তবে এখন বাংলাদেশকে নতুন করে নির্মাণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। অভূতপূর্ব গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে নির্বাচনের সুযোগ।
বর্তমান রাষ্ট্রকাঠামো ও অর্থনৈতিক কাঠামোর গুণগত পরিবর্তন দরকার বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক চর্চা বাদ তা দিয়ে হবে না। বিলম্ব না করে অতি দ্রুত ওই প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। গণতান্ত্রিক উপায়ে ও নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিদের জাতীয় সংসদে পাঠিয়ে সংস্কার করতে হবে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘শুল্ক আরোপ করে (বাংলাদেশকে) বড় বিপদে ফেলতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বিষয় কীভাবে মোকাবিলা করা হচ্ছে, জানি না। তবে মনে রাখা দরকার যে রাজনৈতিক দল দেশের উন্নয়নে জনস্বার্থে সব সময় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।’
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচক বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ুন কবির বলেন, অনেক সরকারপ্রধানের সঙ্গে তাঁর কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। বাংলাদেশের নেতিবাচক দিক হচ্ছে, যে ব্যবস্থার কথাই বলা হোক না কেন, সব সময়ই এখানে এক ব্যক্তির শাসন ছিল। তিনি বলেন, ‘নতুন প্রজন্ম এখন আমাদের দেওয়া বাংলাদেশকে গ্রহণ করছে না। তারা দেশটাকে ভিন্নভাবে সাজাতে চায়।’
লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, এক বছর ধরে দেশ স্বৈরতন্ত্র থেকে যে উত্তরণপর্বের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেই আলোকেই এ বই রচিত হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু ১৫ নয়, ৫৫ বছর বছর ধরেই চলছে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রব্যবস্থা অর্থাৎ চৌকিদারি ব্যবস্থাকে নিষ্ক্রিয় করে এত বছরেও সংস্কার করা যায়নি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ১৫ বছরে প্রশাসনিক ক্ষমতা দুর্নীতিকে উসকে দিয়েছে। দুর্বল শাসনব্যবস্থা ও কুক্ষিগত ক্ষমতার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোও দুর্বল হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে বিশেষ গোষ্ঠী সুবিধা পেয়েছে।
অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ বলেন, যে রাষ্ট্র আমাদের হাতে আসার কথা ছিল, নানা কৌশল ও কূটচালের মাধ্যমে তা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এ কারণেই এটাকে তাঁবেদার রাষ্ট্র বলা হয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সমাজতাত্ত্বিক গবেষক খন্দকার সাখাওয়াত আলী ও ঢাকা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিকসের নির্বাহী পরিচালক ভূঁইয়া আসাদুজ্জামান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন র জন ত ক ব যবস থ ক ষমত দরক র সরক র ফখর ল
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তের আহ্বান সিপিজের
খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার সিপিজের এক টুইটে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি মিলন ত্রিপুরা ১৭ জুলাই একটি বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন ও ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।