শরীরে প্রবেশ করা মাইক্রোপ্লাস্টিক কীভাবে প্রভাব ফেলে
Published: 27th, July 2025 GMT
ভয়ানকভাবে প্লাস্টিক দূষণের মুখে পড়ছে পৃথিবী। মানুষের মস্তিষ্ক, রক্ত, বুকের দুধের পাশাপাশি নাড়ি ও ধমনিতেও প্রবেশ করছে ক্ষুদ্র প্লাস্টিককণা বা মাইক্রোপ্লাস্টিক। মাইক্রোপ্লাস্টিকের কারণে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে মানুষের শরীরে। বিজ্ঞানীরা একসময় অনুমান করতেন, আমাদের শরীরে প্রতিবছর ৫২ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করতে পারে। পরবর্তীকালে দেখা যায়, এর চেয়ে বেশি কণা মানবদেহে প্রবেশ করছে। খাবার বা পানির পাশাপাশি আমরা যে বাতাসে শ্বাস নিই, তার মাধ্যমেও মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করছে। এরই মধ্যে কিডনি, প্লীহা, মস্তিষ্কসহ বিভিন্ন অঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিশ্বজুড়ে অন্য সময়ের চেয়ে এখন বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণ করছে মানুষ।
২০২৪ সালের শেষের দিকে চীনা গবেষকেরা কনুই ও কাঁধে সার্জারি করা রোগীদের হাড় ও পেশির নমুনায় মাইক্রোপ্লাস্টিক আবিষ্কার করেন। বিজ্ঞানীরা সেই সময় বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, হাড় বা পেশির মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি একজন ব্যক্তির ব্যায়াম করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। অন্য গবেষণায় দেখা যায়, নির্দিষ্ট ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিক হাড় বা পেশির কোষের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
২০২৪ সালে ইতালীয় গবেষকদের একটি দল কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্যারোটিড ধমনিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্ত করেন। মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ করে এমন ধমনিতে কণার উপস্থিতি দেখা যায়। মাইক্রোপ্লাস্টিক যেসব রোগী বহন করেছিলেন, তাঁদের স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক বা আকস্মিক মৃত্যুর ঝুঁকি ৪ দশমিক ৫ গুণ বেশি ছিল বলে জানান বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুনইনজেকশনে যাচ্ছে মাইক্রোপ্লাস্টিক১৯ মার্চ ২০২৫গত ফেব্রুয়ারিতে মৃত মানুষের মস্তিষ্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্ত করা হয়। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের টক্সিকোলজির অধ্যাপক ম্যাথিউ ক্যাম্পেন বলেন, ‘এমন কণা দেখে আমরা হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে ক্ষুদ্র প্লাস্টিককণা মস্তিষ্কের কাজে যুক্ত হচ্ছে। লিপিড নামে পরিচিত চর্বির মাধ্যমে আমাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে প্রবেশ করছে। মস্তিষ্কের উচ্চ লিপিড উপাদানের মধ্যে হোয়াইট ম্যাটারে প্লাস্টিককণা অবস্থানের আদর্শ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। প্লাস্টিককণা বিভিন্ন অসুখের জন্য বড় কারণ হিসেবে কাজ করছে। বহু বছর ধরে এসব কণা মানবশরীরের সিস্টেমের ওপর অতিরিক্ত প্রভাব ফেলতে থাকে।’
সূত্র: বিবিসি
আরও পড়ুনটি–ব্যাগ থেকে ছড়াচ্ছে মাইক্রোপ্লাস্টিক০১ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ