বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল (অব.) শেখ আব্দুল হান্নান এবং তাঁর স্ত্রী তাহমিদা বেগমের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জন ও সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে দুটি পৃথক মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক বলছে, তাঁদের সন্তানদের নামে কানাডা, দুবাই, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বিপুল সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে।

আজ রোববার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থার মহাপরিচালক আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, শেখ আব্দুল হান্নান জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৫১ হাজার টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। পাশাপাশি তাঁর ছয়টি ব্যাংক হিসাবে ২৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকার বেশি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব অবৈধ সম্পদ করেছেন।

শুধু শেখ আব্দুল হান্নানই নন, তাঁর স্ত্রী তাহমিদা বেগমের বিরুদ্ধেও অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। দুদক বলছে, স্বামীর সহায়তায় তিনি ১ কোটি ৯১ লাখ টাকার বেশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ নিজের দখলে রেখেছেন। পাশাপাশি তাঁর ৩২টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ টাকার লেনদেন করেছেন।

এর আগে চলমান অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে আদালতের আদেশে তাঁদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পাশাপাশি ৩৮টি ব্যাংক হিসাব জব্দ এবং ঢাকার অভিজাত এলাকায় তাঁদের মালিকানাধীন একাধিক ফ্ল্যাট ও জমি জব্দ করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আসাদুজ্জামান নূরের চারটি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি জব্দের আদেশ

সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের ৪টি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁর নামে থাকা ১৬টি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

দুদকের আবেদনে বলা হয়, আসাদুজ্জামান নূরের অর্জিত সম্পদ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে তদন্তকালে তাঁর নামে পাওয়া স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ যেন তিনি হস্তান্তর ও স্থানান্তর করতে না পারেন, সে জন্য তা জব্দ ও অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।

দুদকের পক্ষ থেকে আদালতকে লিখিতভাবে বলা হয়েছে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও ১৫০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে গত ৩০ জুলাই মামলা করেছে দুদক। তাঁর নামে ৪টি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি রয়েছে। আরও রয়েছে তাঁর ১৬টি ব্যাংক হিসাব।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ১ হাজার ১৯০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তা নিজের দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া তাঁর নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৯টি হিসাবে ১৫৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূরের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৮৫ কোটি ৭২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৩ টাকা জমা এবং ৭৩ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৩০৫ টাকা উত্তোলন হয়েছে। এসব লেনদেনের উৎস অস্পষ্ট।

দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৩-০৪ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আসাদুজ্জামান নূরের বৈধ আয় ছিল ৩২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৮ টাকা। এ সময়ে তাঁর পারিবারিক ব্যয় ছিল ৯ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৭৬১ টাকা। সে অনুযায়ী নিট সঞ্চয় দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৬৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৭ টাকায়। অথচ তাঁর অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৯ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৭ টাকা। এতে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার উৎস পাওয়া যায়নি বলে দুদক জানিয়েছে।

২০০১ সালে নীলফামারী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান নূর। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের পর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার শুরু করে দুদক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বেইলী রোডে নিজ বাসা থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আরও পড়ুনআট মাসে ১৯২ একর জমি, ২৮ ভবন ও ৩৮ ফ্ল্যাট জব্দ ১৭ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে কারচুপির অভিযোগকারী ছাত্রীকেই সন্দেহ কমিশনের
  • আসাদুজ্জামান নূরের চারটি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি জব্দের আদেশ
  • জেমকন গ্রুপের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর বিরু‌দ্ধে মামলা কর‌বে দুদক
  • জেমকন গ্রুপের দুই পরিচালকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করবে দুদক