প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ মেয়াদ এবং স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য: আলী রীয়াজ
Published: 27th, July 2025 GMT
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর চলমান আলোচনার দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৯তম দিনে প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ মেয়াদ ১০ বছর নির্ধারণ এবং একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি এবং সংসদে কতটি আসনে সরাসরি ভোটে নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তা নিয়ে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি।
আজ রোববার আলোচনা শেষে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে যেসব প্রস্তাব অনালোচিত রয়ে গেছে কিংবা আংশিক আলোচনা হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে।’
প্রথম আলোচ্য বিষয় ছিল সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি। আলী রীয়াজ জানান, এ বিষয়ে আজ চতুর্থ দিনের মতো আলোচনা হলেও এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, কেউ বলছেন বিদ্যমান চার মূলনীতির সঙ্গে নতুন প্রস্তাব যুক্ত করা হোক, কেউ বলছেন শুধু উল্লেখ থাকুক—ফলে কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য আরও সময় নিচ্ছে।
দ্বিতীয় আলোচ্য বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশ পুলিশ কমিশন’ গঠন। এ বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল ও জোটের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, কমিশনের উদ্দেশ্য হবে পুলিশ বাহিনীর পেশাদারত্ব ও প্রভাবমুক্তভাবে দায়িত্ব পালনের নিশ্চয়তা, বাহিনীর সদস্যদের উত্থাপিত অভিযোগের নিষ্পত্তি এবং নাগরিকদের পক্ষ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের নিষ্পত্তি।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘এই কমিশন হবে স্বাধীন, ৯ সদস্যবিশিষ্ট এবং এর কাঠামো, দায়িত্ব ও এখতিয়ার আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। সদস্যদের মধ্যে কমপক্ষে দুজন নারী সদস্য থাকবেন।’
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, পুলিশের বেআইনি কার্যকলাপের ক্ষেত্রে শাস্তির মাত্রা নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের নির্দেশ, বাহিনীর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক বা প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষা, নাগরিক অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, বেআইনি চাপের বিরুদ্ধে তদন্ত ও ব্যবস্থা, পুলিশি আইন ও বিধির সংস্কার এবং প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতা কমিশনের থাকবে। কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাধ্য থাকবে।’
তৃতীয় আলোচ্য বিষয় ছিল প্রধানমন্ত্রী পদে মেয়াদের সীমা। এ বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, একজন ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সর্বসম্মতভাবে একমত হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।
আজকের আলোচনার শেষ বিষয় ছিল সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব। এ বিষয়ে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত আসন বহাল রেখে সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণে রাজনৈতিক দলগুলো যেন অন্তত এক–চতুর্থাংশ কিংবা এক–পঞ্চমাংশ আসনে নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়।
আগামীকাল ধারাবাহিক আলোচনা চলবে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত পৌঁছাতে হবে, এ জন্য ধারাবাহিক আলোচনা চলবে। আজকে রাত আটটা পর্যন্ত আমরা আলোচনা করেছি। আগামীকাল হয়তো আরও দীর্ঘ সময় আলোচনা করব।’
আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছিল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক ঐকমত য সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
দুদক ও পিএসসির বিষয়ে বিএনপিকে অবস্থান পরিবর্তনের আহ্বান এনসিপির
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) নিয়োগ কমিটির বিষয়টি সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে দলীয় অবস্থান থেকে সরে আসতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২০তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আখতার হোসেন।
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে এনসিপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই একমত পোষণ করেছে বলে জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘কেবল বিএনপি পিএসসি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের নিয়োগ কমিটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে। আমরা বিএনপির কাছে আহ্বান রাখব, নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে যেভাবে দলীয় অবস্থান পরিবর্তন করে একমত হয়েছে, একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাকি যে সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, সেগুলোর ব্যাপারে আপনারা আপনাদের দলীয় অবস্থান পরিবর্তন করবেন।’
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব করেছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সে প্রস্তাব অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে নয় সদস্যের ওই কমিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের পাশাপাশি অ্যাটর্নি জেনারেল ও প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানসহ আইন দ্বারা নির্ধারিত পদের নিয়োগ দেবে।
বিএনপিসহ কয়েকটি দলের বিরোধিতা মুখে গত ২৫ জুন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে এনসিসির পরিবর্তে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি নামে নতুন প্রস্তাব করে কমিশন। এ প্রস্তাব অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন এবং আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ দেবে। তবে বিএনপি ও সমমনা পাঁচটি দল এ প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করে। তারা মনে করে, এর মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগের হাত-পা বেঁধে দেওয়া হবে।
ওই দিন এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন, এই প্রস্তাবের সঙ্গে শর্তসাপেক্ষে একমত হয় বিএনপি। সে ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগের জন্য এনসিসি বা এ ধরনের কোনো কমিটি গঠনের বিধান সংবিধানে যুক্ত করা যাবে না বলে শর্ত দেয় দলটি।
এ বিষয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘গত অর্ধশতকে বাংলাদেশে যে দলই ক্ষমতায় এসেছে, তারা নিজেদের মতো করে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দলীয় লোক নিয়োগ দিয়েছে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণে আক্রান্ত হয়েছে এবং জনবান্ধবতা হারিয়েছে।’
পিএসসি ও দুদকে নিয়োগ বিষয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা এমন একটি সিলেকশন কমিটির কথা বলেছি, যা দলনিরপেক্ষ হবে এবং যেখানে সরকারি ও বিরোধী দল উভয়ের প্রতিনিধিত্ব থাকবেন। এভাবেই নিয়োগের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব রোধ করে সুশাসনের পথ তৈরি করা সম্ভব হবে।’
বর্তমানে সংবিধানের ১৩৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এ বিষয়ে আখতার হোসেন বলেন, এ অবস্থান পরিবর্তন করে নিরপেক্ষ যাচাই কমিটির প্রস্তাব সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও তা বড় পরিবর্তন নয়, বরং কার্যকর জবাবদিহির সূচনা হবে।
এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, ‘আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে, দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নয়। দুদক এখন একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, যার প্রধান নিয়োগ দেন সরকারপ্রধান। ফলে অনেক সময় এটি ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতি আড়াল করে, আর বিরোধীদের টার্গেট করে। আমরা চাই, এটি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হোক, যার প্রধান ও সদস্যদের নিয়োগ হবে একটি নিরপেক্ষ সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে।’