Prothomalo:
2025-09-18@02:40:36 GMT

মা মা গন্ধ

Published: 28th, July 2025 GMT

সাগরের উত্তাল জলরাশির ভয় জয় করে ১৩৪ ফুট পানির নিচে আমি তখন মাছেদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছি। উজ্জ্বল প্রবালের ফাঁকফোকরে মাছেদের সঙ্গে আমিও সাঁতার কাটছি, নিজের কাছেই এসব অবিশ্বাস্য লাগছিল। মাছেদের ঘাই বেগুনি, সবুজ, লাল, নীল রঙের প্রবালের মাথার ওপর যেন রঙিন ফুল হয়ে ফুটে ওঠে। স্বচ্ছ গভীর নীল জলে পোখরাজ মণির মতো প্রবালগুলো ঝিকমিক করছে। ওদের বুকের ভেতর থেকে অগণিত মাছেরা ঝাঁকে ঝাঁকে বেরিয়ে আসছে, মৃদু হাসছে, আপনমনে নাচছে। ওদের আনন্দ আমার হৃদয়ের বারান্দা পেরিয়ে অনেক দূর ছড়িয়ে পড়ল। আমার এখন আর মাঝেমধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে না, দ্রুতলয়ে শ্বাস পড়ছে না। আমি ওদের আনন্দ উৎসবে মেতে উঠি এবং ওদের চোখে চোখ রেখে অবাক ভালোবাসায় ডুবে যাই। আমার কণ্ঠে ঢিমেতালে গান জেগে ওঠে। আমি মাছেদের সঙ্গে প্রবালের কিনারা ঘেঁষে অথই সাগরে পূর্ণ মনোযোগে বিহার করি। সাগরের জল আমাকে প্রেমিকের মতো বুকে জড়িয়ে যখন বারবার কোমল চুম্বন করছিল, তখন অসংখ্য মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা থেকে যেন সুমধুর শত শত প্রার্থনার মন্ত্র আমার কানে বাজতে থাকে। সাগরের সঙ্গে আমার মিলন, এই যেন হাজার বছর ধরে প্রতীক্ষায় থাকা আমার সব চাওয়া একসঙ্গে পূরণ হয়ে গেল। এমন এক স্বপ্নালু পরিবেশে মাছ বন্ধুদের গা থেকে আমার সর্বাঙ্গে মোতির মতো ফুল ছড়িয়ে পড়লে আমি আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠি।

নুন মরিচের ঝাঁজালো জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, মাছ সাথিদের সঙ্গে এ–প্রান্ত থেকে ও–প্রান্তে অবারিত সুখে ছুটছি তো ছুটছি। এখানে কোনো যুদ্ধ নেই, অযাচিত, অশোভন নাটক নেই, শুধু শান্তি আর শান্তি। লোকে কী বলবে, এমন চিন্তা নেই। সাতপাঁচ ভেবে কথা বলার পূর্বপ্রস্তুতির দরকার নেই। অবিশ্বাস, গন্ডগোল, বাধা, দয়াদাক্ষিণ্য, চোখ রাঙানি, মামলা-মোকদ্দমা, শত্রু, চলচাতুরী, পাপ-পুণ্য মাপার বাটখারা, মিথ্যা গল্প, গুজব, কারাগার কিছুই নেই। এখানে সফলতা-ব্যর্থতার দ্বন্দ্ব, মুখোশ, মিথ্যা প্রশংসা, দৌড় প্রতিযোগিতার হিড়িক নেই। কে উঁচু, কে নিচু, এসব মাপার ব্যস্ততা নেই। মুড স্যুইং, অস্থিরতা, ক্লান্তি, খিটখিটে মেজাজ, শূন্যতা, হাহাকার, চাহিদা, প্রত্যাশা, একাকিত্ব, দুর্বলতা নেই, সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাড়না নেই। সাগরের অতল জলে আমি, মাছ ও প্রবাল, একে অপরের নিঃশব্দ আশ্রয়, নির্ভরতা হয়ে অপার মায়ায় ছুঁয়ে থাকি। আত্মমগ্ন একটা আনন্দে দুলতে দুলতে এই জগতের প্রতি একটা তীব্র টান অনুভব করি। ওদের নিখাদ ভালোবাসা, স্পর্শে আমি আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠি। ওরা আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে, জীবন একবারই আসে, সময় দ্রুত শেষ হয়ে আসছে, যতটুকু আছে এর সর্বোচ্চ ব্যবহার করো, মনপ্রাণ সঁপে ভীষণভাবে ভালোবাসো।

ওদের কথামতো জগৎ–সংসারের সমস্ত নিয়ম, মাথাব্যথা প্যারাসুটের মতো উড়িয়ে দিয়ে, জোনাকির মতো ডানা মেলে এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় ঘুরছি, বেড়াচ্ছি। কী আনন্দ! নিজেকে কখনো মাছ মনে হয়, কখনোবা প্রবাল! এই সময় আমার ইনস্ট্রাক্টর আমাকে জলের আরও গভীরে নিয়ে আসে। এখানে জলের স্রোত ও ঢেউ প্রথম, দ্বিতীয় স্তরের চেয়ে আলাদা মনে হলো। এখানকার মাছগুলো ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো যেন ধ্যান করছে। মায়ের কথা মনে পড়ে। তিনি বলতেন, ‘অল্প পানির পুঁটি মাছ লাফায় বেশি, বোয়াল, কাতলাসহ বড় মাছেরা নিঃশব্দে ডুবে থাকে জলের গভীরে।’

মায়ের কথা ভাবতেই আমসত্ত্বের ঘ্রাণে ভরে যায় আমার চারপাশ। জলের এত গভীরে জৈষ্ঠের আম্রপালির ঘ্রাণ এল কোথা হতে, বুঝতে পারি না। অদ্ভুত একটা অনুভূতি, একটা বিভ্রম। ঠিক তখনই দেখতে পাই, প্রবালের মাথায় মায়ের ঘামে ভেজা রুমালটা পড়ে আছে। রুমালটার দিকে এগিয়ে যেতেই মায়ের গলায় গান শুনতে পাই। মা গাইছিলেন, রবি ঠাকুরের গান। চাঁদের মতো উজ্জ্বল চেহারার মায়ের গা থেকে বেলি ফুলের গন্ধ পাচ্ছি।

কত বছর পর মায়ের সঙ্গে দেখা! তাঁর কাঁধে মাথা রাখতেই তিনি মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। আমি আর মা পাশাপাশি হাঁটছি। মা আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছেন। তাঁর সঙ্গে নতুন পথে হাঁটতে, ঘুরতে হারিয়ে যাওয়ার কোনো ভয় নেই। আর যদি হারিয়েও যাই, তাতে কী! মা তো সঙ্গেই আছেন। কোথায় থেকে এসেছি, কোথায় যাব, এসবের আর কোনো ভাবনা নেই। অপার্থিব আনন্দে ক্রমশ মাছেদের ভিড় ফেলে, প্রবালের গলিপথ পেরিয়ে অনেকটাই ফাঁকা একটা পথ ধরে আমরা আমাদের টিনের চৌচালা ঘরে চলে আসি। ভীষণ খিদে পেয়েছে, খাব, ঘরে ঢুকেই মায়ের কাছে আবদার করি। বাতাবিলেবু, মসুরের ডাল সঙ্গে পাবদা মাছভাজা দিয়ে তিনি আমাকে শীতলপাটিতে বসিয়ে ধোঁয়া ওড়া গরম ভাত খেতে দেন। কাঠের পিঁড়িতে পাশে বসে মা ফুলের নকশা আঁকা হাতপাখা ঘুরিয়ে আমাকে বাতাস করছেন। আমাকে অগোছালো গাপুস-গুপুস খেতে দেখে তিনি হাসতে হাসতে বলেন, ‘বড় হয়েছিস, আজও গুছিয়ে খেতে পারিস না, এলোমেলো রয়ে গেছিস। তবে তুই আগের মতো হাসিখুশি নেই, অনেক বদলে গেছিস।’ ইঞ্চি মেপে গুছিয়ে তোলা জীবন আমাকে আকর্ষণ করে না, এলোমেলো জীবনই আমাকে টানে, বিমোহিত করে। জীবননদীর গহ্বরে ঢুকেছে কত বালু, পথ এঁকেবেঁকে গেছে, বদল তো হবই, মা। আমার উত্তর শুনে ‘পাগল একটা’ বলে মা এবার নিষ্পলক আমার দিকে চেয়ে থাকেন। তাঁর চোখের কোণে জল, যে জল বুকের ভেতর দিয়ে বয়ে যায়, বাইরে থেকে দেখা যায় না।

পেট পুরে পরিপূর্ণ তৃপ্তির স্বাদ নিয়ে ঘরের দক্ষিণ পাশের বারান্দায় গিয়ে বসি। মা কী সুন্দর ঘরদোর সাফসুতরো করে রেখেছেন। মৃদুমন্দ বাতাসে বাগানে গোলাপ দুলছে, মধ্যগগনে গনগনে সূর্য, কোকিল ডাকছে। চাপকলের নিচে মাটির কলসি রেখে হাতল চাপতে চাপতে চাচি তাঁর সন্তানকে মুখে মুখে সহজ পাঠ পড়াচ্ছেন, মানবিক মানুষ হতে এবং মানুষকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসার পাঠ দিচ্ছেন। চাচির দিকে তাকিয়ে ভাবি, জগতের প্রায় সব মায়েরা ‘মানুষ ফুল’ ফোটাতে পারেন। রেডিওর গায়ে দাদার মোলায়েম চড়থাপ্পড় মারার শব্দে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি, বারবার নব ঘুরিয়ে তিনি কাঙ্ক্ষিত স্টেশন পাওয়ার কসরত করছেন। অতঃপর, আরাম কেদারায় বসে চোখ বুজে আব্দুল আলীমের গানে মনোনিবেশ করেন। দাদি তখন আলোর দিকে দুহাত মেলে অতীত, বর্তমানের নানান গল্প বলছেন। তাঁর প্রসারিত দৃষ্টি হরিয়ালের মতো দৌড়াতে দৌড়াতে কী যেন খোঁজে। কী খুঁজছেন দাদি? দীর্ঘ পথচলায় হারিয়ে যাওয়া তারুণ্য, নাকি বাহ্যিক সৌন্দর্য, কী জানি। মায়ের পোষা আদুরে পায়রাগুলোর নীল আকাশে উড়ে যাওয়া, খোঁপে ফিরে ওদের ছলাকলা, সোহাগ, ইশারা, মাথার মধ্যে একটা উতল হাওয়া বয়ে যায়। গরমের ছুটি পেয়ে ছেলেমেয়েরা মাটি লেপা উঠোনে বাঁশের ধনুক, পাটকাঠির তির দিয়ে খেলছে। এক বন্ধুর ছোড়া তিরে আরেক বন্ধু দূর আকাশের বলাকার মতো তিরবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মিনিটখানেক পর লুটিয়ে পড়া বন্ধু হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ায়। কবুতর, বাচ্চাদের কী মিষ্টি সব যুদ্ধ! ওদের উচ্ছ্বাস দেখে ভারি আনন্দ হলো। ‘অলির কথা শুনে বকুল হাসে, কই তাহার মতো তুমি আমার কথা শুনে হাসো না তো’ সুমনের ঘরে ক্যাসেট প্লেয়ারে হেমন্ত বাজছে। আমি মান্না দের অন্ধ ভক্ত, সুমন—হেমন্তের। একদা, মান্না না হেমন্ত, এই নিয়ে আমাদের সে কী যুদ্ধ! কড়ে আঙুলে হিসাব করছি, আমাদের সেই যুদ্ধটা ঠিক কবে থেমে গেল! উত্তর পাই না। অন্তর্গত একটা অস্থিরতা একটু একটু করে বাড়তে থাকলে স্থান পরিবর্তন করি। তবু কোথাও কোনো এক দূরের দেশে জমাট বরফ ভাঙার শব্দ এসে কানে বেজেই চলে। ছোটবেলায় মায়ের মুখে শুনেছিলাম, যারা ভালোবাসে তারা খুব বোকা হয়। নির্জনতাপ্রিয় আমার মা ছিলেন বুদ্ধিমান এবং বড়ই প্রকৃতি অনুভবী। মায়ের অবসর কাটত ফুটফুটে সবুজের সঙ্গে, তাঁর সবুজ আলো মেখেই আমি বেড়ে উঠেছি। হাঁস, মোরগ, কুকুর, বিড়াল, পাখিদের সঙ্গে মায়ের মায়াবী সখ্য দেখে গ্রামবাসী বিস্মিত হতো। স্পষ্ট মনে পড়ে, গভীর জঙ্গল থেকে আসা শিয়ালের দল মায়ের পাশ এমনভাবে নির্বিঘ্নে কাটিয়ে চলে যেত, যেন তিনি ওদের বহুদিনের চেনা।

নীরবতায় মানুষ সবচেয়ে বেশি কথা বলে। মোবাইল, ইন্টারনেটবিহীন পৃথিবীতে মা, পরিবার ও প্রকৃতির সঙ্গে আপনমনে সোনালি গল্প করতে করতে বাড়ির পূর্ব দিকে চলে আসি। এ দিকটায় কেমন যেন গত জন্মের গন্ধ ভুরভুর করছে। আমার ইশকুল, কাঁচা আমের গন্ধ, ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাতের গন্ধ, চালতার আচার, কটকটি, বুনো লেবুর গন্ধ, সোমা আপা, দুলালীদি, শিলা, নীলু, জলিসহ আমার সহপাঠীরা। এই মধুর গন্ধভরা তালিকার শেষ যে নেই। একটা ধুলাঝড় ঘিরে ফেলেছে আমাকে। তারপর, চির পথিক আমি হাঁটতে থাকি, হাঁটতেই থাকি তালবন দিয়ে, কচুশাক, কলমিলতার শরীর ঘেঁষে তিলখেত, তিসিখেত পেরিয়ে, বহুদূর।

বিকেল তখন গড়িয়ে পড়ছে। ‘তুই যদি আমার হইতি রে ও বন্ধু আমি হইতাম তোর’ গান গেয়ে অচেনা একজন পাশ কাটিয়ে চলে যায়। রাস্তার ধারে চা–দোকানে দল বেঁধে বসে একজন পুরোনো পত্রিকা পড়ছেন, অন্যরা মন দিয়ে শুনছেন, চা পান করছেন। জীবন তাঁদের ছুটি দিয়েছে, আমার তো এখনো ছুটি হয়নি। তবু নির্ভার তাঁদের খোশমেজাজে দেখে আমার মনটা ফুরফুরে হলো। কারণ, পৃথিবীতে ছুটির খুব অভাব, অন্তত তাঁরা তো ছুটি পেল। মাঠের দিকে তাকিয়ে দেখি, গোধূলির মিঠে আলোয় ধান কাটা হচ্ছে। চার-পাঁচজন কোমরে গামছা বেঁধে ধান কাটছেন। তাঁদের কাস্তের ফলায় অস্তমিত সূর্যের সোনালি আলো ঝিকমিক করছে। ফিঙেসহ আরও কত পাখি ধানের লোভে মাঠে এসেছে, ইঁদুর ছুটছে। ধান কাটা শেষে খেতের আলপথ ধরে লাল ফিতায় বাঁধা চুলের দুই বেণি দুলিয়ে, হাতে বেলি ফুলের মালা জড়িয়ে, দুটি মেয়ে ঘাসফড়িংয়ের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে সামনে ছুটছে। ওরা কি সই? বুঝতে পারি না। এলোমেলো দৌড়াতে দৌড়াতে ওরা একটা পাখি ধরে ফেলে। পাখিটার পায়ে লাল আলতা পরিয়ে উড়িয়ে দেয় দিগন্তের দিকে। আমি আর ওই দুই কিশোরী তাকিয়ে আছি পাখিটার দিকে, আকাশপানে। লক্ষ করি, গোধূলির আকাশ ঢেকে যাচ্ছে এক অলৌকিক শামিয়ানায়। ঠিক তখনই ধূসর পাঞ্জাবি পরা কে যেন চলার গতি থামিয়ে আমার সামনে এসে বলল, ‘ওই যে আলতা পরা পাখিটা, ও উড়ে উড়ে তোমার শৈশবের দিকে যাচ্ছে।’ তাঁর কথা শুনে আমার চারপাশ দুলে উঠল। নিজেকে সামলে উঠে দেখি, লোকটি অনেক দূর চলে গেছেন, সঙ্গে পাখিটাও। আমার পাঁজরে কষ্টের আর্তনাদ টের পাই।

হাওয়া বইছে, ঝোড়ো হাওয়া। আমার পা, মাথা ঝিমঝিম করে। সন্ধ্যা পেরিয়েছে, পাখিদের কিচিরমিচির থেমে গেছে। বড় গাছের মাথাগুলো দেখা যাচ্ছে না তেমন। লোকজন রাস্তায় নেই বললেই চলে। বাঁশঝাড়ে ঝিঁঝি ডাকছে। একটা সুপ্রাচীন ঠান্ডা অন্ধকারের গহ্বরে ধীরে ধীরে গ্রামটা ঢুকে যাচ্ছে। এবড়োখেবড়ো মাটির রাস্তা ধরে বাড়ির দিকে হাঁটছি। অন্ধকারের নাভি ফুঁড়ে মায়ের স্বর ভেসে আসে কানে। তিনি আমাকে ডাকনাম ধরে ডাকছেন। দেখি, মা হারিকেন হাতে একাকী বটগাছের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কাছে গিয়ে তাঁর নরম সুতি কাপড়ের আঁচল গালে চেপে ধরতেই আমার সব ক্লান্তি উধাও হয়ে যায়। ‘আমাকে সময় না দেওয়াকে জীবন বানিয়ে ফেলেছিস,’ মা অভিমান নিয়ে বলেন। অভিমান ভাঙাতে তাঁকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতেই বয়সের ভারে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া কুঁজো মা আমার ‘আহ’ বলে কাতরে ওঠেন। কোথায় কষ্ট হচ্ছে জানতে চাইলে ‘কই না তো, কোনো কষ্ট নেই আমার’ বলে বেঁকে যাওয়া মেরুদণ্ড সোজা রাখার চেষ্টা করে আমাকে নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকেন।

মায়ের চরণরেখা অনুসরণ করে যেন অনন্তকালের সঘন রাত্রি পেরিয়ে আমি সূর্যের দেখা পাই। চোখ মেলতেই আমার ইন্সট্রাক্টরের স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ বড় চোখজোড়া দেখে ভড়কে যাই। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে তুমি খুব শান্ত এবং ধীরগতিতে সব নিয়ম মেনে স্কুবা ডাইভিং উপভোগ করছিলে। ১১০ ফুট জলের গভীর পর্যন্ত তুমি আমার সঙ্গে ভালোভাবে যোগাযোগ রক্ষা করেছ। এরপর, সাগরের আরও তলদেশে গেলে তুমি এলোমেলো ছুটতে থাকো, নির্দেশনামতো আমার সাংকেতিক যোগাযোগের উত্তর দাওনি, এটা ভয়ংকর ছিল। তোমাকে স্থলে তুলে আনা আমার জন্য অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া ছিল। তোমার শ্বাস নেওয়ার অক্সিজেন প্রায় ফুরিয়ে এসেছে জলের তলেই.

..।’

একনাগাড়ে কপাল কুঁচকে থমথমে স্বরে তিনি কথা বলেই যাচ্ছেন। তিনি যখন আমার ওপর রাগ ঝাড়ছিলেন, তখন নিজেকে গাছ থেকে ছেঁটে ফেলা বিচ্ছিন্ন একটা ডালের মতো নিঃসঙ্গ মনে হচ্ছিল। সাগরের মাঝখানে স্পিডবোটের ওপর নীল জলে ভাসতে ভাসতে আমি আকাশের দিকে চুপচাপ তাকিয়ে দেখি, আকাশটা আরও মায়াবী হয়ে উঠেছে। খানিক বাদে মুগ্ধ হয়ে অবলোকন করি, আকাশটা মায়ের মতো রূপান্তরিত হয়ে আমার আরও কাছে নেমে আসে। তাঁর গলায় রবি ঠাকুরের প্রার্থনাসংগীত, আমি চোখ বুজে মা মা গন্ধে বিভোর হয়ে সেই সংগীত শুনতে থাকি। আমার ভীষণ ঘুম পেলে জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে থাকা মা আমার কপালে আদর করে বলেন, ‘ভালো থাকিস সোনা, ভালো থাকিস।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব ল র আম র স আম র ক এল ম ল আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে বন্দুক হামলায় তিন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন আরো দুই পুলিশ। 

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ২টার কিছু পর এক পারিবারিক বিরোধের তদন্তে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে পুলিশ। খবর বিবিসির। 

আরো পড়ুন:

শেরপুরে পুলিশের উপর হামলা: থানায় মামলা, গ্রেপ্তার ৪

ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ ও থানায় হামলা, ভাঙচুর-আগুন

পেনসিলভানিয়া স্টেট পুলিশের কমিশনার কর্নেল ক্রিস্টোফার প্যারিস জানান,  অভিযুক্ত বন্দুকধারী পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে।

গুলির ঘটনার পর ইয়র্ক কাউন্টির নর্থ কোডোরাস টাউনশিপের স্প্রিং গ্রোভ এলাকার একটি স্কুল জেলা সাময়িকভাবে ‘শেল্টার ইন প্লেস’ ঘোষণা করে। তবে পরে জানানো হয়, স্কুল কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জনসাধারণের জন্য বর্তমানে কোনো সক্রিয় হুমকি নেই। এ ঘটনা ঘটে ফিলাডেলফিয়া থেকে প্রায় ১০০ মাইল (১৬০ কিমি) পূর্বে অবস্থিত ইয়র্ক কাউন্টির এক গ্রামীণ এলাকায়। 

তারা বলছে, আগের দিন শুরু হওয়া একটি তদন্তের অংশ হিসেবে কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে তদন্ত চলমান থাকায় বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি।

পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জোশ শাপিরো বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, “আমরা তিনজন মহামূল্যবান প্রাণ হারালাম, যারা এই দেশকে সেবা দিয়েছেন। এই ধরনের সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সমাজ হিসেবে আমাদের আরো ভালো করতে হবে।”

নিহত তিন কর্মকর্তার সম্মানে গভর্নর শাপিরো রাজ্যের সব সরকারি ভবন ও স্থাপনায় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দেন।

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ