শাওলিন মন্দিরের প্রধান সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু
Published: 28th, July 2025 GMT
চীনের বিশ্ববিখ্যাত শাওলিন মন্দিরের প্রধান সন্ন্যাসী শি ইয়োংজিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, একাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক এবং অবৈধ সন্তানের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে। দেশটির একাধিক তদন্ত সংস্থা যৌথভাবে এই তদন্ত পরিচালনা করছে।
সোমবার (২৮) জুলাই শাওলিন মন্দির কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের হেনান প্রদেশের একটি পর্বতমালায় অবস্থিত শাওলিন মন্দিরটি দেড় হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি মন্দির। প্রতি বছর দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার শিষ্য এখানে আসেন শাওলিন কুংফু ও বৌদ্ধ ধর্মচর্চার জন্য।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশকে জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম দিল চীন
চীনে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কায় রেড অ্যালার্ট জারি
১৯৯৯ সাল থেকে শাওলিন মন্দিরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ইয়োংজিন মন্দিরটিকে একটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ডে পরিণত করেছেন। যার ফলে তিনি ‘সিইও সন্ন্যাসী’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন। তার আমলে মন্দির চীনের বাইরেও স্কুল খুলেছে এবং শাওলিন কুংফু প্রদর্শনের জন্য ঘুরে বেড়ানো সন্ন্যাসীদের একটি দল গঠন করেছে।
চীনের বৌদ্ধ সমিতি সোমবার জানিয়েছে, তদন্তের সময় তার অর্ডিনেশন সার্টিফিকেট বাতিল করা হয়েছে। অর্ডিনেশন সার্টিফিকেট হলো সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ে কারো গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ।
বৌদ্ধ সমিতি তাদের বিবৃতিতে বলেছে, “ইয়োংজিনের কর্মকাণ্ড খুবই খারাপ, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সুনাম ও ভিক্ষুদের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।”
সোমবার সকালে চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে ইয়োংজিনের বিরুদ্ধে তদন্ত সংক্রান্ত খবরটি ছিল সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। উইবোতে নিয়মিত বৌদ্ধ শিক্ষার বার্তা পোস্ট করতেন ইয়োংজিন। তার অ্যাকাউন্টের অনুসারীর সংখ্যা ৮ লাখ ৮০ হাজারেও বেশি।
ইয়োংজিন এর আগে ২০১৫ সালেও নারীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন এবং মন্দিরের তহবিল আত্মসাতের অভিযোগে তদন্তের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি একটি ভক্সওয়াগেন এসইউভি ও সোনার সুতো দিয়ে তৈরি একটি পোশাকসহ কোম্পানি এবং স্থানীয় সরকারের কাছ দামি বিভিন্ন উপহারও গ্রহণ করেছিলেন বলে অভিযোগ ছিল।
সেই সময়ে তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও বেশ কয়েকটি অবৈধ সন্তানের পিতা হওয়ার অভিযোগে তদন্ত করা হয়েছিল, কিন্তু পরে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
২০১৫ সালে প্রায় ৩০ কোটি ডলার ব্যয়ে একটি মন্দির কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনার জন্য শাওলিন মন্দির কর্তৃপক্ষও সমালোচনার মুখে পড়েছিল, প্রকল্পটিতে একটি হোটেল, একটি কুংফু স্কুল ও একটি গলফ কোর্স ছিল।
‘শাওলিন’ নামটি বিগত কয়েক দশকে বিশ্বজুড়ে সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অর্জন করেছে। ১৯৮২ সালে জেট লি অভিনীত একটি চলচ্চিত্রের নাম ছিল ‘শাওলিন’। মার্কিন হিপ-হপ ব্যান্ড উ-ট্যাং-ক্ল্যাং-এর গানে এবং জনপ্রিয় ভিডিও গেম ‘মর্টাল কমব্যাট’-এর স্পিনঅফে শাওলিন মন্দিরের প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এক দশকে ১ লাখ হেক্টর বনভূমি কমেছে
দেশে এক দশকে বনভূমি হ্রাস পেয়েছে ১ লাখ ১ হাজার হেক্টর, যা ঢাকা শহরের আয়তনের প্রায় সাড়ে তিন গুণ। গত এক দশকে দেশ থেকে হারিয়ে গেছে ৬৪ প্রজাতির গাছ।
সারা দেশে বনাঞ্চলে যে পরিমাণ গাছ আছে, গ্রামাঞ্চলে গাছের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি। তবে গ্রামে গাছের ঘনত্ব কম। আর বন উজাড় বেশি হয়েছে পার্বত্যাঞ্চলে। সেখানে একমুখী প্রজাতির ফসল চাষের প্রসার ও সড়ক সম্প্রসারণের কারণে বন উজাড় হচ্ছে।
বনের সার্বিক চিত্র জানতে ২০২৪ সালে বন অধিদপ্তরের করা জাতীয় বন জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। জরিপটি প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
পার্বত্য অঞ্চলে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সেটাকে মাথায় রেখে আমরা একটা পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছি। বান্দরবানের লামা অঞ্চল দিয়ে ফরেস্ট রিস্টোরেশনের (বন পুনরুদ্ধার) কাজ শুরু করব আমরা।সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, উপদেষ্টা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়২০১৫ সালে জাতীয় বন জরিপে বন আচ্ছাদনের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ৭৬ শতাংশ, সেটি এখন কিছুটা হ্রাস পেয়ে ১২ দশমিক ১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বন জরিপে দেশে বনভূমি আছে ১৭ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর। আগের বন জরিপে যেটির পরিমাণ ১৮ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর।
জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সেটাকে মাথায় রেখে আমরা একটা পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছি। বান্দরবানের লামা অঞ্চল দিয়ে ফরেস্ট রিস্টোরেশনের (বন পুনরুদ্ধার) কাজ শুরু করব আমরা।’
‘জীববৈচিত্র্য রক্ষা, অবক্ষয়িত বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা’র আহ্বান জানিয়ে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৭২ সালে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক দিবসের মর্যাদা দেয়।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ফাওয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিকভাবে বন উজাড়ীকরণের হার ১ দশমিক ১ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে সেটি ২ দশমিক ৬ শতাংশ।
বন অধিদপ্তরের ২০টি দল মাঠপর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করে ২০২৪ সালের মার্চে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তাদের তথ্য সংগ্রহ শেষ হয়। উপকূলীয় বন, শালবন, সুন্দরবন, পার্বত্যাঞ্চল ও গ্রামীণ এলাকায় মোট ১ হাজার ৮৫৮টি নমুনা প্লটের ভিত্তিতে এ জরিপের ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছে।
জরিপে দেশে প্রতি হেক্টরে গাছের ঘনত্ব পাওয়া গেছে ১১৭টি। সবচেয়ে বেশি গাছের ঘনত্ব আছে সুন্দরবনে। এখানে গাছের ঘনত্ব প্রতি হেক্টরে ৭০২টি। বনাঞ্চলের চেয়ে গ্রামীণ এলাকায় গাছের ঘনত্ব কম হলেও মোট গাছের পরিমাণ বেশি। গ্রামীণ এলাকায় মোট গাছের সংখ্যা প্রায় ৯০ কোটি।
২০১৫ সালের বন জরিপে গাছের সংখ্যা ছিল ১৬৯ কোটি। সাম্প্রতিক জরিপে সেটা কিছুটা কমে হয়েছে ১৫৭ কোটি। গত এক দশকে হ্রাস পাওয়া গাছের সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি। জরিপে সারা দেশে ৩২৬টি গাছের প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৪২টি প্রজাতি পাওয়া গেছে পার্বত্যাঞ্চলে। সুন্দরবনে পাওয়া গেছে ২২ প্রজাতির গাছ। এর আগে বন জরিপে (২০১৫) ৩৯০ প্রজাতির গাছ শনাক্ত করেছিল বন অধিদপ্তর। গত এক দশকে হারিয়ে গেছে ৬৪ প্রজাতির বৃক্ষ।
কেন কমছে পার্বত্যাঞ্চলের বন
২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ডারউইন ইউনিভার্সিটি পরিচালিত এক গবেষণায় পার্বত্যাঞ্চল বাংলাদেশের মোট বন আচ্ছাদনের ৪০ শতাংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে দ্রুত প্রসার ঘটছে অর্থকরি ফলের চাষ (হর্টিকালচার) ও একমুখী প্রজাতির বনায়ন (মনোকালচার), যেমন রাবারবাগান।
জানতে চাইলে জাতীয় বন জরিপের সঙ্গে যুক্ত থাকা বন অধিদপ্তরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (সদ্য অবসরপ্রাপ্ত) জহির ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে বৈধ ও অবৈধভাবে বন উজাড় হয়ে আসছে। এখানে একদিকে বন উজাড় হচ্ছে, অন্যদিকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কারণে বনায়ন করা যায় না। যার কারণে এখানে বনভূমি হ্রাস পাওয়ার পরিমাণ বেশি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক কামাল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে বন বিভাগ কিছু করতে পারে না। পাহাড়িরা কিছু গামার আর সেগুনগাছের বাগান করেন। পুরো পার্বত্য অঞ্চলে সড়ক সম্প্রসারণ হয়েছে গত কয়েক দশকে। যেমন সীমান্ত রোড হয়েছে।
কামাল হোসাইন বলেন, এ ছাড়া এখানে বিনোদনকেন্দ্র ও রিসোর্টের সংখ্যা বাড়ছে। এটা একটা দিক। অন্যদিকে অনেক প্রভাবশালী এখন ড্রাগন, কাজু ও আমের চাষ করছেন প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে। এ অঞ্চলের বনের ওপর বহুমুখী চাপের কারণে এখানে বনাঞ্চল হ্রাস পাওয়ার হার অন্যান্য অঞ্চল থেকে বেশি।
কামাল হোসাইন আক্ষেপ করে বলেন, ‘কেউ বনকে ভালোবাসে না। মানুষের লোভের শিকার হয়েছে এখানকার প্রাকৃতিক বন। এটাই আমাদের সর্বনাশ করেছে।’