ঢাকার রানওয়ে প্রশিক্ষণ বিমান ওড়ানোর জন্য কতটা নিরাপদ
Published: 28th, July 2025 GMT
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম আকাশপথ। প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রীবাহী বিমান, কার্গো, ভিআইপি ও সামরিক-বেসামরিক বিমান, হেলিকপ্টার ওঠানামা করছে এই একমাত্র আন্তর্জাতিক হাব থেকে।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সলো ফ্লাইট প্রশিক্ষণের জন্য উপযুক্ত বা নিরাপদ নয়, কারণ এখানে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিমানবন্দরটি একটি নিয়ন্ত্রিত ক্লাস সি–ডি এয়ারস্পেসের মধ্যে পড়ে, যেখানে প্রতিটি ফ্লাইটকে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে প্রতি পদক্ষেপে যোগাযোগ রাখতে হয়।
একজন নতুন প্রশিক্ষণার্থী পাইলট, বিশেষ করে একা থাকার সময়, এ ধরনের জটিল রেডিও যোগাযোগ ও সেই নির্দেশ পালন করতে গিয়ে মানসিকভাবে চাপে পড়ে, ককপিট ওয়ার্কলোড বা ককপিটে কাজের চাপ বেড়ে যায়, যা বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করে।
এ ছাড়া এই বিমানবন্দরে বোয়িং ৭৭৭ বা এয়ারবাস এ-৩৩০-এর মতো বড় বিমানগুলো ওঠানামা করে, যেগুলোর পেছনে তৈরি হওয়া ওয়েক টারবুলেন্স বা আকাশ ঝাঁকুনি ছোট প্রশিক্ষণ বিমানের জন্য মারাত্মক বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
আবার কোনো কারণে এই যোগাযোগব্যবস্থা ব্যাহত হলে মাঝ আকাশে সংঘর্ষও হতে পারে। এর ওপর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ, ফলে কোনো ইমার্জেন্সি বা বিশেষ পরিস্থিতিতে জরুরি অবতরণের উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
সবশেষে এই বিমানবন্দরে প্রশিক্ষণের জন্য নির্ধারিত কোনো আলাদা সময়সূচি বা নির্দিষ্ট ট্রেনিং এলাকা নেই, যা অনেক দেশের প্রশিক্ষণবান্ধব বিমানবন্দরগুলোতে থাকে। এসব কারণেই এই বিমানবন্দর ছাত্র পাইলটদের একক ফ্লাইট অনুশীলনের জন্য উপযুক্ত নয়। বিকল্প হিসেবে লালমনিরহাট, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, যশোরের মতো তুলনামূলকভাবে কম ব্যস্ত ও নিরাপদ বিমানবন্দরগুলো প্রশিক্ষণের জন্য বেশি কার্যকর ও নিরাপদ বলে বিবেচিত।
যেদিন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম এফ-৭ যুদ্ধবিমান নিয়ে সলো ফ্লাইটে (একা বিমান নিয়ে) উড়েছিলেন, সেদিনের আবহাওয়া ছিল একেবারে অনুকূলে—উড়ানের জন্য যথাযথ। তৌকির নিঃসন্দেহে একজন মেধাবী, দক্ষ ও চৌকস বৈমানিক।
আশির দশকে যখন ঢাকা রানওয়ে তৈরি হয়, তা শহর থেকে দূরে নিয়ম মেনেই তৈরি হয়েছিল। রানওয়ে শহরে ঢোকেনি। আমরা আমাদের শহর বানিয়ে রানওয়ে গিলে খেয়েছি। এখন যদি আরও নতুন রানওয়ে বানাই, লাভ হবে কী?তাঁকে সলো ফ্লাইটের অনুমতি প্রদানকারী প্রশিক্ষকও নিঃসন্দেহে একজন অভিজ্ঞ ও বিচক্ষণ পাইলট। একজন শিক্ষার্থী পাইলটকে ১০০-তে ১০০ বিবেচনা করেই প্রশিক্ষক তাঁর ছাত্র পাইলটকে একা বিমান চালাতে পাঠান। প্রতিটা পদক্ষেপে কোথায় কেমন জরুরি পরিস্থিতি হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে সেই জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার বিষয়গুলো বাস্তবিকভাবেই হাতে–কলমে আকাশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এসব শেষ হওয়ার পরই একজন প্রশিক্ষণার্থী পাইলটকে একক ফ্লাইট বা একা বিমান উড়াতে দেওয়া হয়।
একজন বিমানচালক হিসেবে আমার প্রথম প্রশ্ন, ঢাকা রানওয়ের আশপাশে কোথাও কি এই অনুশীলনগুলো করা হয়েছে? ফাঁকা জায়গাটা কোথায়?
ঢাকা টাওয়ার যখন প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমানের একক ফ্লাইটের অনুমতি দিল, তখন কি টাওয়ার জানত না, সেই সময় রেগুলার শিডিউল ফ্লাইটের অবতরণ আছে এবং নিয়মিত ট্রাফিক চলাচল বিঘ্নিত হতে পারে এ ধরনের ফ্লাইটের অনুমতি দিলে?
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিআইডি। অন্যদিকে বিধস্ত বিমানের বিভন্ন অংশ সংগ্রহ করেন বিমান বাহিনীর সদস্যরা। ২২ জুলাই.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র জন য ফ ল ইট র ন র পদ র নওয়
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ