কুয়েত প্রবাসীর উপার্জিত অর্থের হিসাব, এক করুণ বাস্তবতা
Published: 28th, July 2025 GMT
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশির ঘরের ছবিতে দেখা গেছে, প্রবাসে কঠোর পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থের হিসাব কিছু কাগজপত্র আকারে একটি দেয়ালের হ্যাঙ্গারে ঝোলানো রয়েছে। স্পষ্ট বুঝা যায় যে, সেগুলো ব্যাংকের মাধ্যমে প্রেরিত অর্থের রসিদ ছিল। পাশেই ঝোলানো রয়েছে পরিধানের জন্য কয়েকটি সাধারণ পোশাক। এই দৃশ্যটি একজন প্রবাসীর জীবনের এক কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে। যেখানে দীর্ঘদিনের ত্যাগ ও কষ্টের পর উপার্জিত অর্থ শেষে প্রায় শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়ায়।
কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। দিনের পর দিন পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে, উন্নত জীবনের আশায় তারা নিজেদের প্রিয়জন ও মাতৃভূমি ছেড়ে পাড়ি জমান প্রবাসে। এখানে এসে তারা দিনরাত পরিশ্রম করেন, অনেক সময় অমানবিক পরিবেশেও কাজ করতে বাধ্য হন। তাদের উপার্জিত প্রতিটি পয়সা আসে কঠোর সংগ্রাম এবং ঘাম ঝরিয়ে।
কিন্তু এই বিপুল আত্মত্যাগের শেষ ফল কী? প্রবাসে উপার্জিত অর্থের একটি বড় অংশ চলে যায় নানান খরচপাতিতে। এর মধ্যে রয়েছে নিজের থাকা-খাওয়া, বাসস্থান ভাড়া, বিভিন্ন বিল পরিশোধ, যাতায়াত খরচ এবং আরো অনেক আনুষঙ্গিক ব্যয়। এছাড়া, দেশে থাকা পরিবারের খরচ, যেমন– সন্তানদের লেখাপড়া, চিকিৎসা, বিয়ে-শাদি, জমি কেনা বা বাড়ি তৈরির মতো বিষয়গুলো তো আছেই। অনেকের ক্ষেত্রে আত্মীয়-স্বজনের আবদার মেটাতেও অর্থের একটি অংশ চলে যায়।
আরো পড়ুন:
কুয়েতে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে প্রবাসী বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত
কুষ্টিয়ায় প্রবাসীর বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ
দীর্ঘদিন এভাবে অর্থ পাঠানোর পর, যখন প্রবাসীরা নিজেদের উপার্জিত অর্থের চূড়ান্ত হিসাব করেন, তখন প্রায়শই দেখা যায় যে, তাদের নিজেদের সঞ্চয় বলে কিছুই নেই। বছরের পর বছর হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর, দিনশেষে তাদের নিজেদের হাতে থাকে প্রায় শূন্য। যে স্বপ্নের বীজ বুনে তাঁরা দেশ ছেড়েছিলেন, সেই স্বপ্নের ফসল ঘরে তোলার আগেই তা খরচের খাতায় মিলিয়ে যায়।
এই চিত্র অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এটি শুধু আর্থিক শূন্যতা নয়, এটি মানসিক হতাশারও জন্ম দেয়। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো বিদেশে কাটিয়েও যখন একজন প্রবাসী দেখেন যে তার নিজের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত নয়, তখন তা গভীর বেদনার কারণ হয়।
প্রবাসীরা মনে করেন, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত প্রবাসীদের এই দুর্দশার দিকে নজর দেওয়া। তাদের উপার্জিত অর্থের সঠিক ব্যবস্থাপনা, দেশে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি এবং তাদের সঞ্চয়কে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি। প্রবাসীরা যেন শুধু দেশের অর্থনীতির চাকাই ঘোরানোর উপাদান না হয়ে, নিজেদের জীবনও সমৃদ্ধ করতে পারেন, সেদিকে খেয়াল রাখা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। ছবির এই একটি দৃশ্য যেন সেই নীরব আর্তনাদই প্রকাশ করছে, যা লাখ লাখ প্রবাসীর অন্তরে লুকিয়ে আছে।
ঢাকা/হাসান/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রব স প রব স র ন প রব স
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে ১২৩ ‘চাঁদাবাজের’ তালিকা নিয়ে তোলপাড়
রাজশাহী মহানগর বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের পরিচয়ধারী ১২৩ জন ‘চাঁদাবাজের’ নাম সংবলিত একটি তালিকা রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গনে গত কয়েক দিন থেকে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এতে বিএনপি, ছাত্রদল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, ক্যাডার, সমর্থক থেকে শুরু করে ৪৪ জনের নাম পরিচয় আছে। একইভাবে পতিত আওয়ামী লীগের ২৫ জন ও জামায়াতের ৬ জনের নাম আছে। বাকিগুলোর নাম ঠিকানা দেওয়া আছে কিন্তু কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তাদের সুবিধাবাদী বলা হয়েছে।
এই তালিকার ১৮ জনের নাম সম্প্রতি একজন আবাসন ব্যবসায়ীর দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলায় আছে। সেই মামলায় ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাদের প্রধান আসামি করা হয়েছে। এই মামলার প্রতিবাদে তাঁরা সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
এই তালিকা পুলিশের নাকি সরকারের অন্য কোনো সংস্থার তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে এক নেতা দাবি করেছেন, এই তালিকা পুলিশ করেছে। তিনি তালিকায় পুলিশের স্বাক্ষর দেখেছেন। তবে মানুষের হাতে হাতে যে তালিকা ঘুরছে তাতে পুলিশের কোনো স্বাক্ষর নেই।
তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. গাজিউর রহমান আজ সোমবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ ছাড়াও সরকারের অন্যান্য সংস্থা তালিকা করে থাকে। তালিকাটি তিনি দেখেননি। না দেখে বলতে পারবেন না। সরকারি কোনো সংস্থার তালিকা এভাবে ছড়িয়ে পড়ার কথা নয়। তবে তিনি মনে করেন, তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা যদি সত্যিই চাঁদাবাজ হয়ে থাকে তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আপনাদেরও উচিত পুলিশকে এদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্যই তো জনগণ রাস্তায় নেমেছিল। সেটা হওয়া দরকার। বিএনপির ওপর মহলও তো চাঁদাবাজদের সমর্থন করছে না।’
তালিকায় ছাত্রদলের এক নেতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের অনুসারীদের মামলার ভয়ভীতি ও বিভিন্ন কোচিং সেন্টার থেকে চাঁদাবাজি করেছেন তিনি। মহানগর বিএনপির একজন যুগ্ম আহ্বায়ক সম্পর্কে বলা হয়েছে, ৫ আগস্টের পর থেকে মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছেন। মহানগর বিএনপির এক সদস্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, নগরের বোয়ালিয়া থানাধীন ফুটপাত থেকে চাঁদাবাজি করেন তিনি। নগরের ভুবনমোহন পার্কে সাইকেলের গ্যারেজ আছে। জামায়াতের একজনকে ‘ক্যাডার’ উল্লেখ করে তাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছে, ভূমি দখল ও কেনাবেচা, বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যক্তিদের হুমকি-ধমকি ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বাধা দিয়ে চাঁদা আদায় করেন তিনি। জামায়াতের আরও যাদের নাম দেওয়া হয়েছে, তাঁদের সবার নামে প্রায় একই ধরনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। তাঁদের একজনের বিরুদ্ধে মাদক কারবারির অভিযোগ আনা হয়েছে।
আগে আওয়ামী লীগ বর্তমানে বিএনপি করেন এমন একজনকে দেশীয় অস্ত্রধারী ক্যাডার, গভীর রাতে রাস্তায় চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন নির্মাণাধীন ভবন থেকে চাঁদাবাজি করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এই তালিকা দেখে হতবাক হয়েছেন। কোন সংস্থা বা কে করেছেন, জানা নেই, তবে সারা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হচ্ছে, এই তালিকা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। হতে পারে দু-একজন জড়িত, কিন্তু ঢালাওভাবে নাম দেওয়া-এটা হতে পারে না। কিছু কিছু লোককে তাঁরা চাঁদাবাজ হিসেবে চেনেন, তালিকায় তাঁদের নাম নেই। তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজদের শনাক্ত করা তো খুবই সোজা। দেখতে হবে কারা ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নামে ঢালাও মামলা করেছে। হয়তো পাঁচজন বা দশজন লোক ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তারা নাম দিয়েছে ৪০০ জনের। যারা এই সব মামলার বাদী তারাই তো চাঁদাবাজ। তবে যারা অপরাধ করেছে তাদের নামে মামলা করা অপরাধ নয়।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এখন সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় প্রশাসনের লোকজন কাকে ফিডব্যাক দিচ্ছে এটা বোধগম্য হচ্ছে না। তারা চাচ্ছে দেশে আবার স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হোক। এটা তাদের চক্রান্তের একটা অংশ হতে পারে। এরা তিন-চারটা করে পদোন্নতি নিয়েছে। আগে আওয়ামী লীগ সাজতে গিয়েছিল, এখন ভালো মানুষ সাজতে যাচ্ছে। মুখোশধারী এরা।’ তিনি বলেন, রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে এই তালিকার বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন। পুলিশ কমিশনার তাকে কোথাকার কী কল রেকর্ড-এই সব দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি পুলিশ কমিশনারকে বলেছেন, ‘আপনি তদন্ত করেন আবার।’
জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি এমাজ উদ্দিন মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, যাদের নাম তালিকায় আছে, তাঁদের সংগঠন থেকে সম্পূর্ণ বয়কট করা হয়েছে। নেতাদেরও বলে দেওয়া হয়েছে কারও কাছে যেন তারা ঘেঁষতে না পারেন। এরপরেও সুযোগ পেলেই কারও পাশে দাঁড়িয়ে হয়তো ছবি তুলে প্রচার করে তাঁরা।