ইউক্রেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জাপোরিঝিয়ায় রাশিয়ার রাতভর বিমান হামলায় একটি কারাগারে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত এবং ৩০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। খবর বিবিসির।

টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে দেওয়া এক বার্তায় জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের গভর্নর ইভান ফেডোরভ জানান, রাশিয়ার হামলায় ওই কারাগারের ভবনগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আশপাশের বসতবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি আরো জানান, রাশিয়ান বিমান বাহিনী উচ্চ-বিস্ফোরক গ্লাইড বোমা ব্যবহার করে আটটি হামলা চালিয়েছে।

আরো পড়ুন:

মধ্যরাত থেকে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার যুদ্ধবিরতি, মধ্যস্থতায় মালয়েশিয়া

থাইল্যান্ডে ব্যস্ত বাজারে বন্দুক হামলায় নিহত ৫, হামলাকারীর আত্মহত্যা

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়েরমাক এই হামলাগুলোকে রাশিয়ার ‘আরেকটি যুদ্ধাপরাধ’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন।

জাপোরিঝিয়া হলো ইউক্রেনের চারটি পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটি, যা রাশিয়া ২০২২ সাল থেকে নিজেদের দখলে নিয়েছে বলে দাবি করেছে, যদিও এই অঞ্চলটি মূলত ইউক্রেনীয় নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ইউক্রেনের মানবাধিকার কমিশনার বলেছেন, কারাগারে হামলা মানবিক আইনের চরম লঙ্ঘন কারণ আটক ব্যক্তিরা তাদের জীবন ও সুরক্ষার অধিকার হারিয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল সোমবার মস্কোকে কঠোর আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছেন, “যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে অথবা ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে রাশিয়ার কাছে মাত্র ১০ থেকে ১২ দিন সময় আছে।” স্কটল্যান্ড সফরকালে ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, তিনি সম্ভবত আজ রাতে বা আগামীকাল আনুষ্ঠানিকভাবে এটি ঘোষণা করবেন। 

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প বলেন, “তাকে একটা চুক্তি করতেই হবে। খুব বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। পুতিন শান্তির কথা বললেও ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছেন। আমি বলেছি, এভাবে হয় না। আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনের ওপর হতাশ। পুতিনের সঙ্গে এখন আর কথা বলার তেমন আগ্রহ নেই।”

ট্রাম্প আরো বলেন, “আমি ১০ অথবা ১২ দিনের একটি নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করতে যাচ্ছি। এখানে অপেক্ষা করে কোনো লাভ নেই। কারণ আমরা কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না।”

এর আগে জুলাইয়ের শুরুতে, ট্রাম্প ক্রেমলিনকে কিয়েভের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর জন্য অথবা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়ার জন্য ৫০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু এই সতর্কতা রাশিয়ার হামলা থামাতে পারেনি।

সোমবার গভীর রাতে পূর্ব ইউক্রেনের দনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলেও রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। 

ওই অঞ্চলের গভর্নর সের্হি লিসাক জানিয়েছেন, শিল্প নগরী কামিয়ানস্কেতে রুশ বাহিনীর হামলায় দুজন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন। এছাড়া সিনেলনিকিভস্কি জেলায় আরো দুজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

এদিকে, রাশিয়ায় রাতভর পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনও। রাশিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটির রোস্তভ অঞ্চলে রাতভর ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এতে সালস্ক শহরে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া একটি পণ্যবাহী ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। 

ইউক্রেনের হামলায় বেলগোরোডের সীমান্তবর্তী অঞ্চলেও একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে রুশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউক র ন র ত হয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিকোলাস মাদুরোর দিন ফুরিয়ে এসেছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। খবর বিবিসির। 

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ করতে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিবিএস নিউজের ৬০ মিনিটসকে বলেন, “আমার সন্দেহ রয়েছে। আমার মনে হয় না। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করছে।”

আরো পড়ুন:

ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩

নাইজেরিয়ায় হামলার হুমকি ট্রাম্পের

ক্যারিবীয় অঞ্চলে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে নৌযানগুলোতে মার্কিন হামলা অব্যাহত থাকার মধ্যে ট্রাম্পের এই মন্তব্য এলো। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে মাদকের প্রবাহ বন্ধ করার জন্য এই হামলা প্রয়োজনীয়।

ট্রাম্প এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান মাদক বন্ধ করার লক্ষ্যে নয়, বরং ট্রাম্প বিরোধী মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি ‘অনেক কিছু’ সম্পর্কে।

বিবিসির মার্কিন নিউজ পার্টনার সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ক্যারিবীয় ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন হামলায় কমপক্ষে ৬৪ জন নিহত হয়েছে।

সম্প্রতি ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “মার্কিন হামলায় আপনি যেসব নৌযানে বিস্ফোরণ হতে দেখেন, তার প্রতিটিতে অন্তত ২৫ হাজার মাদকদ্রব্য ধ্বংস হয়। এগুলো যুক্তরাষ্ট্রে মাদক সরবরাহের জন্য দায়ী।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্থলপথে ভেনেজুয়েলায় হামলার পরিকল্পনা করছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প তা উড়িয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, “আমি এটা বলতে চাই না যে আমি এটা করব...আমি ভেনেজুয়েলার সাথে কী করব, আমি তা করব কিনা, তা আমি বলব না।”

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করার অভিযোগ তুলেছেন। অন্যদিকে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রোর অভিযোগ, নৌযানগুলোতে হামলা চালানোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকায় ‘আধিপত্য বিস্তার’ করার চেষ্টা করছে।

ট্রাম্প জানান, তার সরকার ‘সারা বিশ্ব থেকে’ সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে ‘আসতে’ দেবে না।

তিনি বলেন, “তারা কঙ্গো থেকে আসে, তারা সারা বিশ্ব থেকে আসে, তারা আসছে, কেবল দক্ষিণ আমেরিকা থেকে নয়। তবে বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা- খারাপ। তাদের গ্যাং আছে।”

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্দিষ্ট করে ভেনেজুয়েলার ‘ট্রেন দে আরাগুয়ার’ নাম উল্লেখ করেন। তিনি এটিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ গ্যাং’ হিসেবে অভিহিত করেন।

জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার পর থেকে, ট্রাম্প প্রশাসন মেক্সিকো এবং ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি মাদক পাচারকারী সংগঠন ও অপরাধী গোষ্ঠীকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভেনেজুয়েলার ট্রেন দে আরাগুয়া এবং কার্টেল অব দ্য সানস, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট মাদুরো ও তার ঘনিষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা পরিচালনা করে। তবে কারাকাস সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ