ইউক্রেনের কারাগারে রাশিয়ার হামলা, নিহত ১৬
Published: 29th, July 2025 GMT
ইউক্রেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জাপোরিঝিয়ায় রাশিয়ার রাতভর বিমান হামলায় একটি কারাগারে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত এবং ৩০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। খবর বিবিসির।
টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে দেওয়া এক বার্তায় জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের গভর্নর ইভান ফেডোরভ জানান, রাশিয়ার হামলায় ওই কারাগারের ভবনগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আশপাশের বসতবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরো জানান, রাশিয়ান বিমান বাহিনী উচ্চ-বিস্ফোরক গ্লাইড বোমা ব্যবহার করে আটটি হামলা চালিয়েছে।
আরো পড়ুন:
মধ্যরাত থেকে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার যুদ্ধবিরতি, মধ্যস্থতায় মালয়েশিয়া
থাইল্যান্ডে ব্যস্ত বাজারে বন্দুক হামলায় নিহত ৫, হামলাকারীর আত্মহত্যা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়েরমাক এই হামলাগুলোকে রাশিয়ার ‘আরেকটি যুদ্ধাপরাধ’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন।
জাপোরিঝিয়া হলো ইউক্রেনের চারটি পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটি, যা রাশিয়া ২০২২ সাল থেকে নিজেদের দখলে নিয়েছে বলে দাবি করেছে, যদিও এই অঞ্চলটি মূলত ইউক্রেনীয় নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ইউক্রেনের মানবাধিকার কমিশনার বলেছেন, কারাগারে হামলা মানবিক আইনের চরম লঙ্ঘন কারণ আটক ব্যক্তিরা তাদের জীবন ও সুরক্ষার অধিকার হারিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল সোমবার মস্কোকে কঠোর আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছেন, “যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে অথবা ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে রাশিয়ার কাছে মাত্র ১০ থেকে ১২ দিন সময় আছে।” স্কটল্যান্ড সফরকালে ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, তিনি সম্ভবত আজ রাতে বা আগামীকাল আনুষ্ঠানিকভাবে এটি ঘোষণা করবেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প বলেন, “তাকে একটা চুক্তি করতেই হবে। খুব বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। পুতিন শান্তির কথা বললেও ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছেন। আমি বলেছি, এভাবে হয় না। আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনের ওপর হতাশ। পুতিনের সঙ্গে এখন আর কথা বলার তেমন আগ্রহ নেই।”
ট্রাম্প আরো বলেন, “আমি ১০ অথবা ১২ দিনের একটি নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করতে যাচ্ছি। এখানে অপেক্ষা করে কোনো লাভ নেই। কারণ আমরা কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না।”
এর আগে জুলাইয়ের শুরুতে, ট্রাম্প ক্রেমলিনকে কিয়েভের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর জন্য অথবা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়ার জন্য ৫০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু এই সতর্কতা রাশিয়ার হামলা থামাতে পারেনি।
সোমবার গভীর রাতে পূর্ব ইউক্রেনের দনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলেও রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
ওই অঞ্চলের গভর্নর সের্হি লিসাক জানিয়েছেন, শিল্প নগরী কামিয়ানস্কেতে রুশ বাহিনীর হামলায় দুজন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন। এছাড়া সিনেলনিকিভস্কি জেলায় আরো দুজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এদিকে, রাশিয়ায় রাতভর পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনও। রাশিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটির রোস্তভ অঞ্চলে রাতভর ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এতে সালস্ক শহরে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া একটি পণ্যবাহী ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
ইউক্রেনের হামলায় বেলগোরোডের সীমান্তবর্তী অঞ্চলেও একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে রুশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউক র ন র ত হয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।
উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে।
বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।
উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।
ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।
ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।
এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।
ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।
যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ