পূর্ব লাদাখের গলওয়ানে ভারতের ২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা চীনের দখলে থাকার খবর কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী কোথায় পেলেন, তা জানতে চাইলেন সুপ্রিম কোর্ট। আজ সোমবার এক মামলার শুনানির সময় লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুলকে ভর্ৎসনা করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বলেন, প্রকৃত ভারতীয় এমন মন্তব্য করবে না।

সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি দীপংকর দত্ত ও এ জি মসিহ্ এই মন্তব্য করে জানতে চান রাহুল ওই তথ্য কোথা থেকে পেয়েছেন? অভিযোগের সমর্থনে তাঁর কাছে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আছে? রাহুল কি সেখানে গিয়েছিলেন? রাহুলের উদ্দেশে বিচারপতিরা বলেন, বাক্‌স্বাধীনতা থাকলেই সব বলা যায় না। যে প্রশ্ন সংসদে করা দরকার, তা সামাজিক মাধ্যমে করা যায় না।

মামলাটি পুরোনো। গলওয়ানে ভারত–চীন সংঘর্ষ বেধেছিল ২০২০ সালে। সেই সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিলেন। ২০২৩ সালে ভারত জোড়ো যাত্রা চলাকালীন রাহুল নাকি ২ হাজার বর্গকিলোমিটার জমি চীন দখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি নাকি এ কথাও বলেছিলেন, অরুণাচল প্রদেশে চীনা ফৌজ ভারতীয় জওয়ানদের বেধড়ক পিটুনি দিয়েছে।

ওই মন্তব্যের জন্য রাহুলের বিরুদ্ধে লক্ষ্ণৌয়ের এমপি এমএলএ কোর্টে মানহানির এক মামলা দায়ের করেন বর্ডার রোড অর্গানাইজেশনের (বিআরও) পরিচালক উদয় শঙ্কর শ্রীবাস্তব। মামলাকারীর অভিযোগ, রাহুলের ওই মন্তব্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষে অসম্মানজনক। সেনানীদের মানহানি হয়েছে।

নিম্ন আদালত রাহুলের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করে তাঁকে সমন পাঠান। তাঁর বিরুদ্ধে রাহুল আবেদন জানান এলাহাবাদ হাইকোর্টে। হাইকোর্ট গত ২৯ মে সেই আবেদন খারিজ করে নিম্ন আদালতের নির্দেশ বহাল রাখেন। অতঃপর রাহুল সুপ্রিম কোর্টে আসেন। বিচারপতি দীপংকর দত্ত ও বিচারপতি এ জি মসিহ্ হাইকোর্টের নির্দেশ তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। সুপ্রিম কোর্ট মামলাকারী ও উত্তর প্রদেশ সরকারকে নোটিশ পাঠিয়েছেন।

রাহুলের পক্ষ সমর্থন করে এবং বিচারপতিদের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আইনজীবী অভিষেক সিংভি বলেন, সংবাদমাধ্যমে যা প্রকাশিত হচ্ছে তার উল্লেখ বিরোধী নেতার করারই কথা। না হলে বিরোধী নেতা হওয়ার যোগ্যতাই থাকে না। একজন প্রকৃত ভারতবাসীর এটাও বলা দরকার যে আমাদের ২০ জন সেনাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে এবং সেই ঘটনা উদ্বেগের।

গলওয়ান সংঘর্ষের পর পূর্ব লাদাখে চীন ভারতীয় জমি দখল করে নিয়েছে বলে অনেক কথা উঠেছিল। দুই দেশের মধ্যে যে আলোচনা এখনো চলছে, তা সংঘর্ষ–পূর্ববর্তী স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্যই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমঝোতা হলেও অনেক ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা এখনো ফেরেনি। সংঘর্ষের আগে ভারতীয় জওয়ানেরা যে যে এলাকায় টহল দিতেন, এখন তা পারেন না। যদিও ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ভারতের জমি চীন দখল করে রাখেনি।

রাহুলসহ বিরোধীরা তা মানতে রাজি নন। ভারত জোড়ো যাত্রার সময় রাহুল বলেছিলেন, চীন যে ভারতের জমিতে বসে রয়েছে, তা স্পষ্ট। এটা সহ্য করা উচিত নয়। কয়েকজন সাবেক সেনানীর সঙ্গে কথা বলে তিনি জানিয়েছিলেন, এ সংঘর্ষের সময় ভারতের ২ হাজার বর্গকিলোমিটার জমি চীন দখল করে রেখেছে। লাদাখের এক প্রতিনিধিদলও সেই অভিযোগ করেছিলেন।

সরকার ওই অভিযোগ মানেনি। রাহুলের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগও সরকার করেছে। যদিও সংসদীয় প্রতিনিধিদলকে সরকার গলওয়ানে যাওয়ার অনুমতি আজও দেয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব চ রপত স ঘর ষ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

‘শরিয়াহ ও সরকারি নীতিবিরোধী’: নারী ও ইরানি লেখকদের ১৪০টিসহ ৬৭৯ বই নিষিদ্ধ করল তালেবান

আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যসূচি থেকে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করেছে তালেবান সরকার। মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি–সম্পর্কিত বিষয়ে পাঠদানের ওপর একটি নতুন নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

শরিয়াহবিরোধী ও সরকারি নীতির পরিপন্থী বলে মনে হওয়ায় ৬৭৯টি বইকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে চিহ্নিত করেছে তালেবান। নিষিদ্ধ এসব বইয়ের মধ্যে ১৪০টি নারীদের লেখা ও ৩১০টি ইরানি লেখকদের লেখা বা ইরানে প্রকাশিত।

নিষিদ্ধ বইয়ের ৫০ পৃষ্ঠার একটি তালিকা আফগানিস্তানের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

আফগান সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব বিষয় মূলত ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

চার বছর আগে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ ধরনের নানা নিয়মকানুন জারি করেছে তালেবান সরকার। চলতি সপ্তাহেই তালেবানের সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশে অন্তত ১০ প্রদেশে ‘ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট’ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আফগান সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এসব বিষয় মূলত ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

অনেকের মতে, এসব নিয়মকানুন আফগানিস্তানের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা এসব নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকে তাদের শিক্ষা গ্রহণ নিষিদ্ধ। ২০২৪ সালের শেষ দিকে ধাত্রীবিদ্যা বা মিডওয়াইফারি কোর্সও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ১৮ বিষয়ে পাঠদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তার ৬টিই নারীদের নিয়ে, যেমন ‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’, ‘দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন’ ও ‘উইমেনস সোসিওলজি’।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে কী কারণে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া ১৪ জুলাই ২০২৫

তালেবান সরকার বলেছে, তারা আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামিক আইনের ভিত্তিতে নারী অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

তালেবানের এসব নিয়মকানুন দেশটির মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা এসব নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

তবে আফগানিস্তানের বই পর্যালোচনা কমিটির একজন সদস্য বিবিসিকে বলেন, নারী লেখকদের সব বই পড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নিষিদ্ধ বইগুলোর তালিকায় আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের বিচার মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী জাকিয়া আদেলির বইও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘চার বছরে তালেবান যা করেছে, তাতে পাঠ্যসূচিতে এমন পরিবর্তনে অবাক হইনি। নারীরা পড়াশোনা করতে পারছেন না। তাদের মতামত ও লেখালিখির অধিকারও দমন করা হবে, এটাই স্বাভাবিক।’

আরও পড়ুনরাশিয়ার পর আর কোন কোন দেশ তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে পারে০৫ জুলাই ২০২৫

গত আগস্টের শেষ দিকে বই নিষিদ্ধের অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেন তালেবান সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক জিয়াউর রহমান আরিয়ুবি। তিনি বলেন, আলেম ও বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শুধু নারী লেখকই নয়, নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকায় ইরানি লেখক ও প্রকাশকদের বইও রয়েছে। বই পর্যালোচনা কমিটির এক সদস্য বলেন, আফগান পাঠ্যসূচিতে ইরানি বিষয়বস্তুর প্রবেশ ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনতালেবান শাসনের তিন বছর, কেমন আছে আফগানিস্তান১৫ আগস্ট ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ