অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে সবার জন্য সমান সুযোগ ছিল না। দুর্নীতি ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে। গুটিকয় লোক দেশের আর্থিক খাত ধ্বংস করে দিয়েছে। যে ব্যাংকের মালিক, সে সংসদ সদস্য, আবার সে হোটেলে ও টেলিভিশনের মালিক ছিল। সব খাতেই একচ্ছত্র প্রভাব ছিল। তবে এটা থেকে এখন আমরা মুক্ত। আসল মুক্ত হব, যখন এটা পুনরায় না হবে। সবাই যেন সুযোগ পায়।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক, পরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদের পরিবার ও যোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘আমরা অল্প সময়ের জন্য এসেছি। সংস্কার করার জন্য কিছুটা চেষ্টা করেছি। ১৫ বছরে প্রতিষ্ঠান, প্রক্রিয়া ও মানুষ সব নষ্ট হয়ে গেছে। এত বছরের পাথর সরাতে সময় লাগবে। কাকে দিয়ে কাজ করাব এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এর মধ্যেও সোনার মানুষ আছে। এসব মানুষ নিয়ে সংস্কার করতে হবে।’

তিনি তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, আর্থিক খাত মোটামুটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ খাত আইসিইউতে ছিল, সেখান থেকে আরও আগে আমরা বেরিয়ে এসেছি। এখন দেশের অর্থনীতি কেবিন থেকে বাড়ি ফিরে আসছে। এবার সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা।

সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি ব্যাংক খাতে ঠিকভাবে তদারকি করতে পারে, তাহলে আর অনিয়ম হবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আর্থিক খাতকে আগের অবস্থায় পুনরাবৃত্তি হতে দেব না। আমরা চেষ্টা করব ভালো একটা অবস্থানে নিয়ে যেতে। আমরা অনেক সংস্কারমূলক কাজ হাতে নিয়েছি, যা আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যপদ্ধতি পরিবর্তন হবে। সেখানে স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরে শক্তিশালী করতে হবে। এই কাজ সঠিকভাবে করতে পারলে সফল হব।’

গভর্নর বলেন, আমানতকারীদের স্বার্থ দেখতে হবে। তাদের স্বার্থই দেশের স্বার্থ। তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারলেই দেশের স্বার্থ রক্ষা করা যাবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নাজমা মোবারক বলেন, ‘আমাদের মানুষ অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল, তার জন্য গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়েছে। তাই এটা দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলা। শহীদ ও আহতদের ঋণ শোধ করা সম্ভব না। তবুও তাদের পরিবারদের সম্মান দেওয়া। আমরা যদি আর্থিক খাতে কাজ করি, এর যদি সংস্কার করতে পারি, তাহলে মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর থ ক খ ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।

আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।

আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ