হামলায় টিনের বেড়া ফুটো হয়ে গেছে। বাইরে থেকেই ঘরের ভেতরে দেখা যাচ্ছে। বিছানায় মশারি টানানোই আছে। মেঝেতে শুয়ে আছে দুটি কুকুর। উঁকি দিতেই ঘেউ ঘেউ করে একটি কুকুর বাড়ির বাইরে এল। গতকাল সোমবার সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগসারা গ্রামের সাঁওতালপাড়ায় গিয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়। গত বুধবার দুই দফা হামলার পরে বাসিন্দারা সবকিছু ফেলে পালিয়ে গেছেন। শুধু একটি বাড়িতে একজন বৃদ্ধা যেতে পারেননি বলে থেকে গেছেন।

জেলার পবা উপজেলার ভেতরে দিয়ে বয়ে যাওয়া বারনই নদের তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধের ওপর প্রায় পাঁচ বছর আগে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর এই ১২টি পরিবার বাড়ি করে। এর মধ্যে সাতটি পরিবার সাঁওতাল, চারটি ধাঙ্গড় (ওরাঁও) ও একটি রবিদাস সম্প্রদায়ের। বাঁধের ওপরে তাঁদের বাড়ি। তার পরেই রয়েছে মো.

বাবলু নামের এক বিএনপি কর্মীর জমি। তাঁর জমির সামনের দিকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের পরিবারগুলো বাড়ি করা নিয়ে আগে থেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন বাবলু। যদিও জায়গাগুলো পাউবোর। গত বুধবার সকালে এই বাবলুর সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে সাঁওতালপাড়ার বাসিন্দাদের। এর জের ধরে দুপুরে এবং সন্ধ্যায় দুই দফা হামলা হয় এ পাড়ায়। হামলার পরে সবাই বাড়ি ছেড়ে গেছেন।

সোমবার সকালে সাঁওতাল পাড়ায় গিয়ে কোনো বাড়িতেই বাসিন্দাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। একটি বাড়িতে একজন বৃদ্ধাকে পাওয়া যায়। তাঁর নাম অমলা দাসী। অমলার কাছ থেকে জানা যায়, তাঁর জামাতার বাড়িতে এসেছিলেন। নিজের বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুরে। অমলা হাঁটতে পারেন না। ১৫ দিন আগে চিকিৎসার জন্য এখানে এসেছিলেন। এই বাড়িতে থেকেই রাজশাহীতে চিকিৎসা করাচ্ছেন। হাঁটতে–চলতে পারেন না বলে এই বাড়িতেই পড়ে আছেন বলে জানান অমলা।

পাশের বাড়িটিতেও কেউ নেই। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বাড়ির জিনিসপত্র। ঘরের দেয়ালে টাঙানো আছে বিদ্যুৎ বিলের বেশ কিছু কাগজ। একটি কাগজে দেখা যায়, বাড়িটির মালিক শ্যামল মুর্মু। তিনিই এই সাঁওতালপাড়ার সরদার। শ্যামলের পরের বাড়িটিও একইভাবে তছনছ অবস্থায় দেখা যায়। আরেকটি বাড়ির দেয়ালেও বিদ্যুৎ বিলের কপি পাওয়া গেল। তাতে দেখা গেল বাড়ির মালিকের নাম বেরজন টুডু। বিলের অনুলিপিতে মুঠোফোন নম্বরও আছে। সেই নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগসারা সাঁওতালপাড়ায় হামলার ছয় দিন পরও তছনছ করা বাড়িতে কেউ ফেরেননি। সোমবার সকালে

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাস্থ্যে সংস্কারের উদ্যোগ চোখে পড়ছে না

স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের বিষয়গুলো সরকারের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। বরং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চরম বিশৃঙ্খলা চলছে।

গতকাল রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘স্বাস্থ্য পদ্ধতি সংস্কার: আমরা কোথায়’ শীর্ষক নীতি সংলাপে অর্থনীতিবিদ, জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য এই কথা বলেন। বেসরকারি চিন্তক প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও নাগরিক সংগঠন ইউএইচসি ফোরাম যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে। এ আয়োজনে সহায়তা করে ইউনিসেফ।

সংলাপে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন হয়েছে এবং তারা একটি প্রতিবেদন দিয়েছে, এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা। বাস্তবায়নে বুদ্ধিমত্তা, অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং কোন কাজের পর কোন কাজ বা কোন কাজের সঙ্গে কোন কাজ (সিকোয়েন্সিং) সেই বিষয়গুলো ঠিক করা দরকার।

প্রথম উপস্থাপনায় ইউএসসি ফোরামের সদস্য জনস্বাস্থ্যবিদ মো. আমিনুল হাসান বলেন, সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রথমেই দরকার একটি টাস্কফোর্স তৈরি করা। টাস্কফোর্সের কাজ কী হবে তার বিশদ বর্ণনা করেন তিনি। সংস্কারের শেষ কাজটি হবে স্বাস্থ্য কমিশন গঠন। কমিশন গঠিত হলে টাস্কফোর্সের বিলুপ্তি ঘটবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এম এ ফয়েজ বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন প্রতিবেদনে ৬০০ এর বেশি সুপারিশ রয়েছে। সব সুপারিশই সঠিক, সব বাস্তবায়ন করা উচিত। অত্যাবশ্যক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং অত্যাবশ্যক জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

আলোচনায় অংশ নিয়ে কেউ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে এক শ দিনও সময় নেই। যা করার দ্রুত করতে হবে। কেউ বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে সরকার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে, সংস্কারকাজ আর এগোবে না। একজন বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে স্বাস্থ্য যেন গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পায় তার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হওয়া জরুরি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী বলেন, বিনা মূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি করতে পারে। একইভাবে স্বাস্থ্য কমিশন অধ্যাদেশের মাধ্যমে গঠন করতে পারে।

আমলাতন্ত্র যেকোনো সংস্কারের সবচেয়ে বড় বাধা—এমন মন্তব্য করে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের অন্য একজন সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে হযবরল অবস্থা। এ রকম অগোছালো মন্ত্রণালয় আর একটিও নেই। এখনই বড় কোনো কিছু করার উপযুক্ত সময়।’

অনুষ্ঠানে একাধিক আলোচক বলেন, বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় স্বাস্থ্য খাত নেই।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, বিশ্বের যেসব দেশে রাষ্ট্রপ্রধানেরা স্বাস্থ্যের জন্য উদ্যোগী ও সক্রিয় হয়েছেন, সেখানে স্বাস্থ্যে উন্নতি হয়েছে। এ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে তা দেখা যায়নি। তিনি বলেন, ওষুধ খাত নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফের প্রতিনিধি ছাড়াও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক এনজিও এবং দেশি এনজিওর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংলাপে অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আবুল হাসানকে নিয়ে নতুন গল্পগাছা ও পূর্বাপর
  • সরকারের কাছ থেকে ভোট আদায় করেই ছাড়ব: মির্জা আব্বাস
  • অচলায়তন ভেঙে সক্রিয় হওয়ার অপেক্ষায় কোয়াব
  • রক্তাক্ত ৪ আগস্ট: ফেনীতে গুলিতে ঝরে যায় ৭ তরুণের প্রাণ
  • হাতকড়াসহ নৌকা থে‌কে হাওরে ঝাঁপ দি‌য়ে আওয়ামী লীগ নেতার পলায়ন
  • ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবিরকে বাঁচাতে সহায়তার ন্যারেটিভটি সম্পূর্ণ মিথ্যা: সাদিক কায়েম
  • কন্যা ফাতিমাকে নবীজির ৫ উপদেশ
  • ‘ঘাড়ে, বুকে, হাতে গরম কিছু এসে লাগল, লুটিয়ে পড়েছিলাম মাটিতে’
  • স্বাস্থ্যে সংস্কারের উদ্যোগ চোখে পড়ছে না