মোহাম্মদ সিরাজের ফোনের ওয়ালপেপারে কে থাকতে পারেন? প্রশ্নটা কঠিন কিছু নয়। ওভাল টেস্টে কাল ইংল্যান্ডের শেষ উইকেটটি পাওয়ার পর সিরাজের উদ্‌যাপন দেখলেই আন্দাজ করতে পারবেন। ফোনের ওয়ালপেপারে তাঁর ছবির সঙ্গে ‘বিলিভ’ কথাটা সিরাজকে তাতিয়ে দেয়, দিয়েছে বিশ্বাসও। ওভালে ভারতের জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে সিরাজ ফোনের সেই ছবি দেখিয়েছেন।

আগেই বলা হয়েছে, তাঁর নাম আন্দাজ করা কঠিন নয়। অন্তত কাল গাস অ্যাটকিনসনকে আউট করে সিরাজের ‘সিউ’ উদ্‌যাপন করতে দেখে আপনার বুঝে যাওয়ার কথা, মানুষটা পর্তুগিজ সুপারস্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

এমনিতে সিরাজের ঘুম ভাঙে সকাল আটটায়। তবে কাল পঞ্চম ও শেষ দিনের খেলার আগে সিরাজের ঘুম ভাঙে দুই ঘণ্টা আগে। মানে সকাল ছয়টায় উঠেছেন ঘুম থেকে। ঘুম ভাঙার পর তাঁর প্রথম কাজ ছিল তাঁর ফোনের জন্য একটি অনুপ্রেরণামূলক ওয়ালপেপার খোঁজা। খুঁজতে খুঁজতে তিনি তাঁর প্রিয় ফুটবল তারকা রোনালদোর একটি ছবি পেয়ে যান, যার ওপর বড় করে লেখা ছিল—বিলিভ (বিশ্বাস করো)। ওভালে অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফির শেষ দিনের খেলায় নামার আগে সেই ছবিই হয়ে উঠল সিরাজের বড় অনুপ্রেরণা।

সিরাজ বিছানায় শুয়ে কল্পনা করেছেন, আজ (কাল) তিনি হবেন ভারতের নায়ক, যিনি সারা দেশের ১০০ কোটির বেশি মানুষের মুখে হাসি ফোটাবেন এবং মাঠে ঠিক এটাই হয়েছে। ইংল্যান্ডের ৫ উইকেট নিয়ে ভারতকে এনে দিয়েছেন ৬ রানের রোমাঞ্চকর জয়।

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে গল্পটা শুনিয়েছেন সিরাজ। উপস্থিত সাংবাদিকদের নিজের ওয়ালপেপারও দেখিয়েছেন ভারতের এই পেসার, ‘আজ (কাল) সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি এই ইমোজি খুঁজেছি—ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে বিলিভ লেখা। জানতাম আমি বিশেষ কিছু করতে পারি। সাধারণত আমি সকাল আটটায় উঠি, কিন্তু আজ ছয়টায় উঠেছি। তখন থেকেই বিশ্বাস করছিলাম আমি পারব। তাই সেটি ওয়ালপেপার করেছিলাম। বিশ্বাস খুব জরুরি।’

সিরাজের মতে, বিশ্বাসের শক্তি কত বড় সেটাই প্রমাণ হয়েছে। তাঁর ভাষায়, ‘আমি নিজের খেলা নিয়ে কাজ করেছি। কখনো কারও সম্পর্কে খারাপ ভাবি না। ১৪০ কোটির দেশ থেকে দলে সুযোগ পাওয়া অনেক বড় ব্যাপার। আপনি গোটা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। আজ ১৪০ কোটির বেশি মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। নিজের সামর্থ্যে বিশ্বাস রেখে নিজের খেলায় আমি সৎ থাকতে চাই। এটা একজন পেশাদার ক্রিকেটারের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

ওভাল টেস্টে মোট ৯ উইকেট নেওয়ার পথে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নেন সিরাজ। তাঁর দুর্দান্ত এই পারফরম্যান্স নিয়ে সার্চ ইঞ্জিন গুগল ইন্ডিয়া বেশ মজার একটি কাজ করেছে। ভারত ২০২৪ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর যশপ্রীত বুমরাকে নিয়ে সিরাজের একটি উক্তি তখন ভাইরাল হয়েছিল, ‘শুধু জাসি ভাইয়ের ওপরই আমার বিশ্বাস।’

কাল ওভালে সিরাজ ভারতকে জেতানোর পর গুগল ইন্ডিয়ার এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করা হয়। কোনো কিছু খুঁজতে সার্চ ইঞ্জিন গুগলের যে অংশে লেখা হয়, সেই অংশের ছবি পোস্ট করা হয়, যেখানে লেখা ‘আই ওনলি বিলিভ ইন এস.

..’ শেষের ‘এস’ অক্ষরটি যে সিরাজের জন্য সেটা বলাই বাহুল্য। ব্যাপারটা আরও ভালোভাবে বোঝা যায় সার্চ করার নিচের অংশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘আই ওনলি বিলিভ ইন সিরাজ ভাই’ লেখা দেখে।

ইংল্যান্ড–ভারত পাঁচ টেস্টের এই সিরিজে সব কটি ম্যাচ খেলে সবচেয়ে বেশি বল করে (১১১৩টি বৈধ ডেলিভারি বা ১৮৫.৩ ওভার) সর্বোচ্চ ২৩ উইকেটও সিরাজের। ওভালে ভারতের জয়ের পর সিরাজের ভাই মোহাম্মদ ইসমাইলের সঙ্গে কথা বলেছে ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’। ইসমাইল সংবাদমাধ্যমটিকে জানান, তাঁর সঙ্গে সিরাজের কথা হয়েছে, ‘হ্যাঁ, কিছুক্ষণ আগেই তার সঙ্গে কথা হয়েছে। পুরো পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি। সে দলের সঙ্গে বাসে ছিল, হোটেলে ফিরছিল এবং খুব খুব খুশি হয়েছে। সে আমাকে বলেছে, “ভাই, আমি খুব ক্লান্ত। পুরো শরীর অবসন্ন”। কিন্তু সে তারপরও দেশের হয়ে ম্যাচ জিততে চায়।’

সিরাজের ওপর বিশ্বাস ছিল অনেকেরই। যেমন ধরুন, দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি পেসার ডেল স্টেইন। ওভাল টেস্টের আগে এক্স হ্যান্ডলে লিখেছিলেন,‘এই টেস্টে ৫ উইকেট পাবেন সিরাজ।’ সেটাই তো হলো।

মজার বিষয় হলো ভারতের ২০২৪ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর বুমরাকে নিয়ে সিরাজ যে কথা বলেছিলেন, সেটাই এখন উল্টে দিয়েছেন ভারতের সমর্থকেরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁরা লিখছেন, ‘আমরা শুধু সিরাজের ওপরই বিশ্বাস রাখি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জয় র পর উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

‘৭০ ভাগ জনগণ পিআর পদ্ধতির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে’

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। এরপর ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। সেই জনগণের ৭০ ভাগ পিআর পদ্ধতির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। ঐকমত্য কমিশনে ৩১টি দলের মধ্যে ২৫টি দল পিআরের পক্ষে রয়েছে।’

আজ শুক্রবার বিকেলে খুলনা নগরের ডাকবাংলা সোনালী ব্যাংক চত্বরে জুলাই সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘একটি দলের কেউ কেউ বলছেন, পিআর খায় না মাথায় দেয়। কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এটা বলতে পারেন না। তাই পিআর বাস্তবায়নের জন্য গণভোট দিন। রায় পিআরের পক্ষে নাকি বিপক্ষে যাচাই করুন। জনগণ যদি পিআর মানে আপনাদেরও মানতে হবে। আর জনগণের রায় যদি পিআরের বিপক্ষে যায়, তাহলে আমরা মেনে নেব। কিন্তু তারা তো গণভোটকে ভয় পাচ্ছে। পিআরের মধ্য দিয়ে সবার অংশীদারির ভিত্তিতে যদি পেশিশক্তি ও কালোটাকামুক্ত কোয়ালিটিপূর্ণ পার্লামেন্ট হয়, সরকার গঠন হয়, তাহলে কোনো দলের পক্ষে ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই। তাই তারা পিআর ঠেকাতে চায়।’

জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও খুলনা মহানগরের আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ শাহ আলম ও শেখ জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক আবদুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম এবং কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও খুলনা জেলার আমির মাওলানা এমরান হুসাইন প্রমুখ।

মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘আর্টিকেল ৭-এর ভিত্তিতেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে তার আলোকে নির্বাচন দিতে হবে। এখন যদি দুই-তিন মাস আলোচনার পর একটি দল বলে যে এটা পরে হবে, তাহলে কেন এত পরিশ্রম করালেন? সে জন্যই বলছি আমাদের আন্দোলন রাজনীতির অংশ। আমাদের রাজনীতি জনগণের আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরার জন্য। আমরা আলোচনার টেবিলে নিষ্পত্তির জন্য আশাবাদী। আমরা নিরাশ নই।’

জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আপনারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড মেনটেইন করতে পারছেন না। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কীভাবে? তাই আমাদের দাবি—আপনারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিন। সাংবিধানিক অর্ডার জারি করুন। গণভোট দিন। ফ্যাসিবাদের কার্যক্রম স্থগিত করুন। আপনারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান বিচার করবেন। আমাদেরও দাবি নির্বাচনের আগেই তা দৃশ্যমান করতে হবে।’

মতিউর রহমান আকন্দ আরও বলেন, ‘এই সংস্কার যদি এখন না হয়, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য যদি ঠিক করা না হয়, আর তা যদি নির্বাচনের আগে না হয়, বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোতে যদি আবার নির্বাচন হয়, তাহলে এই নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। বিদ্যমান কাঠামোতে নির্বাচন হলে আরেকটি হাসিনার জন্ম হবে। বাংলার মানুষ আর ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে দেবে না।’

পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরের ডাকবাংলা সোনালী ব্যাংক চত্বর থেকে শুরু হয়ে ফেরিঘাট মোড়, পাওয়ার হাউস মোড় ও সংগীতার সামনে দিয়ে শিববাড়ী মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ