শরণার্থীদের জন্য মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা
Published: 5th, August 2025 GMT
বিশ্বব্যাপী বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ঐতিহাসিকভাবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বর্তমানে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১২৩.২ মিলিয়নেরও বেশি (ইউএনএইচসিআর, গ্লোবাল ট্রেন্ডস: ফোর্সড ডিসপ্লেসমেন্ট ইন ২০২৩)। এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। শরণার্থী, যারা যুদ্ধ, নিপীড়ন বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পালিয়ে আসে, তাদের সমস্যা সমাধানে বিশ্বব্যাপী সরকার ও সংস্থাগুলো আলোচনা ও বিতর্কে জড়িত, কিন্তু সমাধান সুদূরপরাহত।
কোরআন শরণার্থীদের বিষয়ে প্রধানত সামাজিক ন্যায়বিচারের উপর জোর দিয়েছে। বলা হয়েছে: ‘যদি কোনো মুশরিক তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তাকে আশ্রয় দাও যাতে সে আল্লাহর কথা শুনতে পায়, তারপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দাও।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ৬)
এই আয়াতটি নির্দেশ করে যে শরণার্থীদের দুর্বলতা, ভয় এবং বাস্তুচ্যুতির সমস্যা সমাধানে জাতি বা ধর্মের প্রতি বিবেচনা না করে ইসলামী আচরণ প্রয়োগ করতে হবে।
শরণার্থী নবীগণকোরআনে বর্ণিত হয়েছে যে নবী ইবরাহিম (আ.
মহানবী (সা.) নিজেও শরণার্থী ছিলেন। মক্কার নির্যাতন থেকে রক্ষার জন্য প্রথমে তিনি কিছু অনুসারীকে আবিসিনিয়ায় হিজরতের নির্দেশ দেন। তারপর নিজে মদিনায় হিজরত করেন। এই হিজরত ইসলামের ইতিহাসে এতটাই তাৎপর্যপূর্ণ যে এটি হিজরি ক্যালেন্ডারের সূচনা হিসেবে গণ্য হয়।
আরও পড়ুনহিজরতকারীদের ফেরত আনার জন্য কোরাইশরা আবিসিনিয়ায় লোক পাঠাল: ১১৬ এপ্রিল ২০২৩মদিনায় শরণার্থীদের প্রতি নবী (সা.)-এর আচরণমদিনায় পৌঁছে নবীজি (সা.) মক্কার মুহাজিরদের (শরণার্থীদের) দারিদ্র্য ও কষ্টের প্রতি গভীরভাবে সচেতন ছিলেন। তারা সবকিছু ফেলে অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে এসেছিলেন এবং নতুন শহরে আয়, জমি বা সম্পত্তি ছাড়া ছিলেন। একটি প্রাচীন আরবি প্রবাদে বলা হয়েছে, ‘অপরিচিত ব্যক্তি চোখ থাকলেও অন্ধ।’
নবীজি (সা.) মদিনার আনসার (স্থানীয় বাসিন্দা) এবং মুহাজিরদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের ঘোষণা দেন। তিনি প্রত্যেক মুহাজিরের জন্য একজন আনসারকে ভাই বা বোন হিসেবে নির্ধারণ করেন। এই ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে তিনি শরণার্থীদের জন্য দুটি প্রধান সমস্যা—আশ্রয় এবং খাদ্য—সমাধান করেন। আনসাররা তাদের ঘর, খাবার এবং জীবিকা মুহাজিরদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। এটি শরণার্থীদের নতুন জীবন শুরু করতে সাহায্য করে এবং তাদের একাকীত্ব দূর করতে ভূমিকা রাখে।
নবীজি (সা.)-এর এই পদক্ষেপ ছিল শরণার্থীদের জন্য একটি সোনালী নীতি। আশ্চর্যজনকভাবে, ১৯৫১ সালের জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশন এই নীতির উপর ভিত্তি করে গড়েিই উঠেছিল, যা শরণার্থীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং ব্যবসা শুরুর অধিকার নিশ্চিত করে।
শরণার্থীদের প্রতি আচরণআজকের বিশ্বে শরণার্থী সমস্যা একটি বৈশ্বিক সংকট। যদিও অনেক পশ্চিমা দেশ শরণার্থীদের প্রবেশ সীমিত করতে চায়, তুরস্ক এবং কানাডার মতো দেশগুলো তাদের সমাজে শরণার্থীদের একীভূত করার উপর জোর দেয়। তুরস্কের গাজিয়ান্তেপ শহর প্রায় ৬০০,০০০ সিরিয়ান শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। তারা সেখানে কাজের অনুমতি, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার সুযোগ পায় এবং সরকার তাদের নাগরিকত্বের পথ তৈরি করছে (হাউ টু ট্রিট রিফিউজিস উইথ ডিগনিটি: আ লেসন ফ্রম টার্কি, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২০১৮)।
কানাডাও ২০১৫ সালে হাজার হাজার সিরিয়ান পরিবারকে আশ্রয় দিয়ে শিরোনামে এসেছিল। সাধারণ মানুষ তাদের জন্য সময় ও অর্থ দান করে নতুন জীবন শুরুতে সাহায্য করেছিল, যা জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে।
আরও পড়ুনসুরা কাহাফের ৪ কাহিনিতে সফলতার ৪ শিক্ষা২০ জুলাই ২০২৫নবীজি (সা.)-এর শিক্ষানবীজি (সা.)-এর শিক্ষা আজও প্রাসঙ্গিক। কোরআন ও সুন্নাহ দয়া ও করুণার উপর জোর দেয়। তিনি বলেছেন: ‘যে কাউকে কষ্টে থাকতে দেখে তাকে সময় দেয় বা তার বোঝা হালকা করে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে তাঁর ছায়ায় আশ্রয় দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৩০৩)
তিনি আরও বলেছেন: ‘যে নেতা দরিদ্র বা প্রয়োজনে থাকা কারো জন্য দরজা বন্ধ করে, আল্লাহ তার দারিদ্র্যের সময় আসমানের দরজা বন্ধ করে দেবেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৪১৬)
এই শিক্ষাগুলো শরণার্থীদের প্রতি দায়িত্বশীল ও মানবিক আচরণের গুরুত্ব তুলে ধরে।
নবীজি (সা.)-এর শরণার্থীদের প্রতি আচরণ—তাদের আশ্রয়, খাদ্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রদান—আজকের বিশ্বের জন্য একটি আদর্শ। কোরআন ও সুন্নাহ শরণার্থীদের দুর্বলতা ও চাহিদার প্রতি সংবেদনশীল হতে শেখায়। তুরস্ক ও কানাডার মতো দেশ এই নীতি অনুসরণ করে শরণার্থীদের মানবিকভাবে গ্রহণ করছে। নবীজি (সা.)-এর শিক্ষা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে শরণার্থীদের সাহায্য করা কেবল মানবিক দায়িত্ব নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ।
আরও পড়ুনপরিবেশ নিয়ে নবীজি(সা.) এর ১০ শিক্ষা১৯ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স হ য য কর এর শ ক ষ দ র জন য আল ল হ হ জরত র উপর ক রআন সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
অতিরিক্ত মোটা হওয়ায় যাত্রীকে তুলতে অস্বীকৃতি উবার চালকের
চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার জন্য সম্প্রতি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান উবারের একটি গাড়ি ডেকেছিলেন মাইকেল। গাড়িটি আসার পর দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতে যেতেই বাধল বিপত্তি। ‘অতিরিক্ত মোটা’ হওয়ায় চালক তাঁকে গাড়িতে তুলতে অস্বীকৃতি জানান। যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
গেমিং প্ল্যাটফর্ম টুইচের জনপ্রিয় স্ট্রিমার মাইকেল। ওই প্ল্যাটফর্মে তাঁর ৬০ হাজারের বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। তিনি তাঁর কল অব ডিউটি গেমপ্লের জন্য পরিচিত।
মাইকেল সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। ভিডিওর শিরোনামে তিনি লিখেছেন, ‘আমি মজা করছি না। আমার উবার চালক বলেছেন, আমি নাকি অনেক বেশি মোটা। তাই তাঁর গাড়িতে আমাকে নেওয়া সম্ভব নয়। এমনকি তিনি আমার দিকে বন্দুক তাক করার হুমকিও দিয়েছেন।’ মাইকেলের ওই ভিডিও পাঁচ কোটিবারের বেশি দেখা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, মাইকেল উবারের গাড়িচালককে বলছেন, ‘আপনি এইমাত্র বললেন, আমি নাকি অনেক বেশি মোটা। আমি কিন্তু আপনার ভিডিও করছি।’ উত্তরে উবার চালক নারী বলেন, ‘এটা যুক্তি আর বাস্তবতার ব্যাপার। আর আমি এটা বলার অধিকার রাখি।’ কিন্তু বাক্যটি শেষ করার আগেই মাইকেল তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘না, আপনি এটা বলতে পারেন না।’ তখন ওই নারী হাত উঁচিয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি পারি। এটা আমার গাড়ি। আপনি এখান থেকে চলে যান।’
বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে ওই উবার চালক বলেন, ‘আপনি কি চান, আমি আমার বন্দুকটা বের করি?’ এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে মাইকেল গাড়ির দরজা বন্ধ করে সেখান থেকে চলে যান। এক্সে দেওয়া অন্য একটি পোস্টে মাইকেল বলেন, এ ঘটনার কারণে তিনি সেদিন চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেননি।
উবারের নীতি অনুযায়ী, চালকেরা বৈধ কারণ ছাড়া কোনো যাত্রীকে গাড়িতে তুলতে অস্বীকৃতি জানাতে পারবেন না। ওজন, লিঙ্গ, বর্ণ কিংবা ধর্মের ভিত্তিতে কোনো যাত্রীর সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
এই ঘটনা ভাইরাল হওয়ার পর উবার চালকের আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছেন অনেকে।